![](https://uttarapath.com/oogokoab/2023/10/image-51.png)
![](https://uttarapath.com/oogokoab/2023/10/image-51.png)
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপরে ওজোন স্তরে ছিদ্র বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে ছবি- উত্তরাপথ
উত্তরাপথঃ কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপরে ওজোন স্তরে ছিদ্র বেড়ে এবছর মহাদেশটির প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষকদের মতে, গত বছর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের টোঙ্গা দ্বীপপুঞ্জে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এমন হতে পারে। আসলেই কি তাই? ওজোন স্তরের ছিদ্র আসলে কত বড়?
ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলেরই অংশ। ভূপৃষ্ঠের ১৫ কিলোমিটার ওপর থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এ স্তরের বিস্তৃতি। একে ওজোন স্তর বলার কারণ, এখানে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব অনেক বেশি। অক্সিজেনের অণুতে দুটির পরিবর্তে তিনটি অণু থাকলে সেটাকে বলা হয় ওজোন গ্যাস। এর রাসায়নিক সংকেত (O3)। সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে আটকে দেয় ওজোন স্তর। তাই মানুষসহ পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকার জন্য ওজোন স্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৮৫ সালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের ওজোন স্তরে বড় ধরনের ছিদ্র তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীতে তখন সিএফসি বা ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের (CCl2F2) ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। অ্যারোসল ক্যান, ফ্রিজ বা পণ্য প্যাকেটজাত করার মতো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল এ রাসায়নিক। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন সহজে কোনো গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। তবে সূর্যের আলোয় এর অণু ভেঙে ক্লোরিন আলাদা হয়ে যায়। মুক্ত ক্লোরিন ওজোন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ক্লোরিন মনোঅক্সাইড (ClO) ও অক্সিজেন অণু (O2) তৈরি করে। অর্থাৎ ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল ওজোন স্তর। ফলে ১৯৮৯ সালে ওজোন স্তরের ক্ষতি সারিয়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্ব নেতারা ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
তবে, এখনও উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকালে মেরু অঞ্চলের ওপরে ওজোন স্তরে ক্ষত তৈরি হয়। কারণ, শীতকালে ঠান্ডা বাতাস পোলার স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ক্লাউড বা পিএসসি নামের বিশেষ ধরনের মেঘ তৈরি করে। এই মেঘের অনেক ছোট ছোট বরফকণা ওজোন গ্যাসের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়িয়ে যায়। পাতলা ওজোন স্তর তখন আরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এ বছর অ্যান্টার্কটিকার ওপরে ওজোন স্তরের সবচেয়ে বড় ছিদ্রটি ধরা পড়ে ১৬ সেপ্টেম্বর। কোপার্নিকাস সেন্টিনেল-ফাইভপি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওজোন স্তরের ক্ষতির পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়। ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ESA’র তথ্যমতে, ছিদ্রের আয়তন প্রায় আড়াই কোটি বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ আয়তনে প্রায় উত্তর আমেরিকার সমান। অন্যভাবে বললে, ব্রাজিলের তিনগুণ অথবা রাশিয়া-চীনের সমান আয়তনজুড়ে ছিদ্র তৈরি হয়েছে ওজোন স্তরে।
এ বছর নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই ওজোন স্তরে ছিদ্র তৈরি হয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে দ্রুত বেড়েছে এই ছিদ্রের পরিমাণ ।ছিদ্র এত বড় হওয়ার পেছনে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত হাঙ্গা টোঙ্গা-হাঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতকে অনেকটাই দায়ী মনে করা হচ্ছে। হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে ১০০ গুণ শক্তিশালী ছিল এই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ। ফলে তৈরি হয় সর্বকালের সবচেয়ে উঁচু বিস্ফোরণস্তম্ভ।
অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ওজোন স্তর অস্থিতিশীল হতে পারে বলে গত বছর আগস্টেই বিজ্ঞানীদের কয়েকটি দল আলাদাভাবে সর্তক করেন। কারণ ওই ঘটনার কারণে প্রায় ৫ কোটি টনেরও বেশি জল ছড়িয়ে পড়ে বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে। গোটা বায়ুমণ্ডলের জলীয় কণার পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ১০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ওজোন স্তরে গিয়ে ভেঙে আয়ন বা চার্জিত অণুতে রূপ নিতে পারে। ফলে সিএফসির মতো ওজোন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সম্পূর্ণ ওজোন স্তরকে করে তুলতে পারে অস্থিতিশীল। শুধু তাই নয়, ESA’র মতে, জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ার কারণে মেরু অঞ্চলে পিএসসি বা পোলার স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ক্লাউড তৈরির হার বেড়ে যেতে পারে।
প্রাকৃতিকভাবে দুই মেরুর ওজোন স্তরের পরিবর্তনও এ বছরের বৃহত্তম এই ছিদ্র তৈরির পেছনে দায়ী হতে পারে। ২০১৯ সাল অ্যান্টার্কটিকার ওজোন স্তরের ছিদ্র এত দিনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হয়ে এসেছিল। কারণ বায়ুমণ্ডলের অস্বাভাবিক উষ্ণ তাপমাত্রার জন্য পিএসসি তৈরি হয়নি তখন। কিন্তু ২০২০ থেকে ২০২২ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কিছুটা কমে গিয়েছে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই প্রতি বছর বাড়ছে ওজোন স্তরের ছিদ্র।
এ বছর এল নিনোর প্রভাব মেরুর চারপাশের তাপমাত্রা পরিবর্তনে সামান্য ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ দুইয়ের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ESA’র গবেষকেরা বলছেন, ওজোন স্তরের ছিদ্র বড় হলেও এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ ছিদ্রের নিচের এলাকা প্রায় জনবসতিহীন। তা ছাড়া কয়েকমাসের মধ্যেই এ ছিদ্রের আয়তন কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। সিএফসি ব্যবহারের পরিমাণ যদি এখনকার মতোই কম রাখা যায়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে ওজোন স্তর নিজেকে পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তাঁরা।
সূত্র: Live Science and Space.com
আরও পড়ুন
টিউমার নির্মূল এর নতুন থেরাপিউটিক যা স্থায়ীভাবে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার দূর করে
উত্তরাপথ: একটি বহু-প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা দল একটি অভিনব ক্যান্সার থেরাপিউটিক তৈরি করেছে, অ্যান্টিবডি টুকরোগুলিকে আণবিকভাবে তৈরি করা ন্যানো পার্টিকেলগুলির সাথে একত্রিত করে, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে আক্রান্ত ইঁদুরের ক্যান্সারকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করে। "হিট অ্যান্ড রান" ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম, কর্নেল প্রাইম ডটস (সি' ডটস) নামে পরিচিত, এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের জন্য একটি বহুমুখী এবং অভিযোজনযোগ্য চিকিত্সা হিসাবে সম্ভাব্যতা দেখায়, ন্যূনতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং বিষাক্ততার সাথে। গবেষকদের একটি বহু-প্রাতিষ্ঠানিক দল আবিষ্কার করেছে যে একটি নতুন ক্যান্সার থেরাপিউটি .....বিস্তারিত পড়ুন
ইঞ্জিনিয়ারড ব্যাকটেরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে
উত্তরাপথ: লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং ইউসি বার্কলে এর সহযোগিতামূলক গবেষণায় গবেষকরা একটি অভিনব ব্যাকটেরিয়া ইঞ্জিনিয়ারড করেছেন যা জ্বালানি, ওষুধ এবং রাসায়নিক উত্পাদনের সময় উত্পন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে ডিকার্বনাইজশন এর মাধ্যমে। সম্প্রতি Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারটি । আর এটি "Carbene Transfer Chemistry in Biosynthesis" নামে পরিচিত । একটি অভিনব প্রতিক্রিয়ার সাথে প্রাকৃতিক এনজাইমেটিক বিক্রিয়াকে সংহত করতে ব্যাকটেরিয়াকে কাজে লাগায়। আর যা সাধারণত জীবাশ্ম .....বিস্তারিত পড়ুন
মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব
দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন
ব্রিজভূষন সরণ সিং ও মোদী ইমেজ
উত্তরাপথ: কে এই ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং ? কি করে তিনি হঠাৎ খবরের শিরোনামে ? তার বিরুদ্ধে ভারতীয় রেসলারদের অভিযোগ সত্বেও কেন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছেনা ? বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করছে তবু সরকার চুপ ? এটা কি মোদী ইমেজে ধাক্কা নয় ? না কি ২০২৪ এর রাজনীতির বাধ্য বাধ্যকতা ? প্রথমে আসা যাক ব্রিজভূষন সরণ সিং প্রসঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপির বাহুবলী নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা, কায়সারগঞ্জ এবং বলরামপু .....বিস্তারিত পড়ুন