১লা মার্চ ২০২৫

গঙ্গার কি সত্যিই নিজেকে পরিষ্কার করার অনন্য ক্ষমতা আছে?

উত্তরাপথঃ ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলার সময়, গঙ্গা নদীর দূষণ নিয়ে বিতর্ক আবারও আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, গঙ্গা নদীর কি নিজেকে পরিষ্কার করার কোনো বিশেষ ক্ষমতা আছে?

উত্তরপ্রদেশ সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় যে গঙ্গার পবিত্রতা এখনও অটুট আছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মশ্রী ডঃ অজয় কুমার সোনকার গঙ্গার পাঁচটি প্রধান ঘাট থেকে জল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। এই ঘাটগুলির মধ্যে রয়েছে সঙ্গম এবং আরাইল (মহাকুম্ভ নগর)। পরীক্ষায় দেখা গেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ স্নান করার পরেও গঙ্গার জলে কোনো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বা pH মাত্রার পরিবর্তন হয়নি।

তবে, এর আগে  উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই দাবির বিপরীতে, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনালে (এনজিটি) একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, মহাকুম্ভের বিশেষ স্নানের দিনগুলিতেও সঙ্গম এবং অন্যান্য ছয়টি স্থানের জলে উচ্চ মাত্রার জৈব রাসায়নিক চাহিদা (BOD) এবং মল কলিফর্ম পাওয়া গেছে, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

উত্তরপ্রদেশ সরকারের দাবি অনুযায়ী, ডঃ সোনকারের গবেষণায় দেখা গেছে, গঙ্গার জলে ১,১০০ ধরনের ব্যাকটেরিওফেজ রয়েছে, যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে। এই কারণে, ৫৭ কোটি মানুষ স্নান করার পরেও গঙ্গার জল দূষিত হয়নি। ব্যাকটেরিওফেজ হলো এক ধরনের ভাইরাস, যা ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। এগুলোকে “ব্যাকটেরিয়া খেকো” ভাইরাসও বলা হয়।

গঙ্গার এই স্ব-শুদ্ধিকরণ ক্ষমতা নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা চলছে। ২০১৭ সালে জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) গঙ্গা নদী নিয়ে একটি রায় দেয়, যেখানে গঙ্গার বিশেষ ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়। রায়ে বলা হয়, গঙ্গার জলে এমন কিছু উপাদান আছে, যা জৈব বর্জ্য এবং ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এ কারণে গঙ্গার জলে অক্সিজেনের মাত্রা অন্যান্য নদীর তুলনায় ২৫ গুণ বেশি।

এনজিটি রায়ে আরও বলা হয়, গঙ্গার জলে উচ্চ মাত্রার দ্রবীভূত অক্সিজেন (DO) রয়েছে, যা গঙ্গাকে অন্যান্য নদীর চেয়ে আলাদা করে তোলে। গঙ্গার জল বছরের পর বছর সংরক্ষণ করলেও তা দূষিত হয় না। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আর্নেস্ট হ্যানকিন ১৮৯৬ সালে তার গবেষণায় গঙ্গার জলে কলেরা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন।

লখনউয়ের জাতীয় উদ্ভিদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (এনবিআরআই) গঙ্গার জলের অ্যান্টিবায়োটিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গঙ্গার জল ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করতে পারে। এমনকি ১৬ বছর পুরনো গঙ্গার জলও এই ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম।

তবে, গঙ্গার এই বিশেষ ক্ষমতা এখন হ্রাস পাচ্ছে। নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া, অতিরিক্ত জল উত্তোলন, শিল্প ও পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্য গঙ্গাকে দূষিত করছে। এনজিটি রায়ে বলা হয়েছে, গঙ্গার স্ব-শুদ্ধিকরণ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে হলে নদীর প্রবাহ বজায় রাখা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব শশী শেখর বলেছেন, “গঙ্গা যদি তার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে পায় এবং এর বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়, তাহলে এটি আবার নিজেকে পরিষ্কার করতে সক্ষম হবে।” তবে সর্বোপরি, গঙ্গা নদীর পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন