

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন ।
এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । প্রোবায়োটিক হল এক বিশেষ প্রকার উদ্ভিদ ফাইবার, যা পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে টকদই, কলা ,রসুন , বাটার মিল্ক প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবারের উৎস।
সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলিতে অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের মধ্যে জটিল সম্পর্কের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা, পাচনতন্ত্রে বসবাসকারী অণুজীবের একটি জটিল সম্প্রদায়, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রমাণগুলি থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে আসেন যে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা সংমিশ্রণে পরিবর্তন, যা ডিসবায়োসিস নামে পরিচিত, নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের বিকাশ এবং অগ্রগতিতে বাঁধা দান করে
অর্থাৎ প্রোবায়োটিক হল জীবন্ত অণুজীব যা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া হলে, আমাদের পাচনতন্ত্র সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত, গবেষণা এখন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর তাদের সম্ভাব্য প্রভাব উন্মোচন করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু প্রোবায়োটিক স্ট্রেন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা গঠনকে সংশোধন করতে পারে, যা বার্ধক্যে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সংক্রান্ত সমস্যার উন্নতি ঘটায়।
প্রোবায়োটিকগুলি কীভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে তা ব্যাখ্যা করার জন্য একাধিক প্রক্রিয়ার কথা গবেষকরা বলেছেন । এক্ষেত্রে একটি মূল প্রক্রিয়া হল সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন , যা আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ এবং জ্ঞানীয় ফাংশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোবায়োটিকগুলি অন্ত্রের সমস্যাগুলিকে দূর করতে সাহায্য করে, সেইসাথে রক্ত প্রবাহে ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি কমায় যা সম্ভাব্যভাবে নিউরোইনফ্লেমেশন এবং মানসিক সমস্যা হ্রাসে অবদান রাখে।
এক্ষেত্রে বেশ কিছু ক্লিনিকাল গবেষনা বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিস্কের উপর প্রোবায়োটিকের প্রভাবগুলি নিয়ে গবেষণা করছে। একটি র্যান্ডমাইজড নিয়ন্ত্রিত ট্রায়ালে, গবেষকরা দেখেছেন যে একটি নির্দিষ্ট প্রোবায়োটিক স্ট্রেন বয়স্কদের মধ্যে যারা নিয়মিত প্রোবায়োটিক গ্রহণ করেছে তাদের স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করেছে । এছাড়া অন্যান্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় নিয়মিত প্রোবায়োটিক গ্রহণকারী বয়স্ক ব্যক্তিদের স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থের উপর ইতিবাচক প্রভাব দেখা গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত।
যদিও প্রোবায়োটিকস এবং স্মৃতিশক্তি সম্পর্কিত গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ।এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসার আগে আরও বেশী গবেষণার প্রয়োজন। তবে যদি আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে প্রোবায়োটিকের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস বা সম্পূরকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করি, তাহলে বয়স্ক ব্যক্তিদের মস্তিস্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম হতে পারে।
তবে , এটি গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত প্রোবায়োটিক স্ট্রেইনের একই কার্যকারিতা নেই। তবে প্রোবায়োটিকের সবচেয়ে কার্যকর স্ট্রেন এবং সর্বোত্তম ডোজ সনাক্ত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। সেইসাথে অতিরিক্তভাবে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক উদ্দীপনার মতো অন্যান্য জীবনধারার কারণগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন