স্বাস্থ্য রক্ষায় জামের উপকারিতা , প্রতিদিন কতটা জাম খাওয়া উচিত?

উত্তরাপথঃ ভারতে জামুন ফল, যা কালো বরই বা জাভা বরই নামেও পরিচিত। এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। জাম গাছ উচ্চতায় একশ ফুটের বেশি হয়,আর এর আয়ু সাধারণত এক শত বছরের বেশী হয়।জামের ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিলে। এর ফল ছোট, গোলাকার এবং মিষ্টি গন্ধের সাথে গাঢ় বেগুনি রঙের হয়। জামের উপকারিতা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় জামুন ফল ভিটামিন এ এবং সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এটিতে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক বিকল্প তৈরি করে। ফলটি হজমের উন্নতি, অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি এবং ওজন কমানোর প্রচার সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য পরিচিত।

আয়ুর্বেদিক ওষুধে, জামুন ফল প্রায়ই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করে, বিশেষ করে যাঁরা হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় ভুগছেন। জামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশ কম। এই কারণে তা রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অনেক গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন, জামের রস খাওয়ার পর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই রক্তের সুগার লেভেল বা চিনির মাত্রা কমে যায়। আর জাম বিচির ক্ষেত্রে কমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। কয়েক সপ্তাহ জামরস খেলে ইনসুলিন গ্রহণকারীদের ইনসুলিন গ্রহণ কমাতে তা সাহায্য করে।

জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই জামের রস রক্তশোধক হিসেবে কাজ করে এবং রক্তাল্পতা দূর করে। জামের রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি থাকায় তা চোখ ও ত্বক ভালো রাখে। ভিটামিন সি থাকায় জাম খেলে মুখ ও গলার ক্ষত সেরে যায়। জাম খেলে বাড়ে ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা। জামে রয়েছে অক্সালিক অ্যাসিড ও গ্যালিক অ্যাসিডের মতো বেশ কিছু রাসায়নিক যৌগ। এ কারণেই জাম ম্যালেরিয়া ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।এছাড়াও ফলটিতে প্রদাহ বিরোধী এবং ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলেও মনে করা হয়। যা এটিকে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি মূল্যবান সংযোজন করে তোলে।

জামের উপকারিতা থাকলেও তাই বলে জাম পেলেই ইচ্ছেমত অনেকগুলো খাওয়া ঠিক নয়। বেশি খেলে পেট ফাঁপতে পারে, অজীর্ণ হতে পারে। পাকা জাম কিছু বেশি খেলে অসুবিধা তেমন হয় না, কিন্তু পাকা রস গ্লাস ভরে খাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, একবার ১০ থেকে ২০ মিলিলিটারের বেশি পাকা জামের রস না খাওয়া উচিত। তেমনি জামের গুঁড়া ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে খেলে তা দিনে ১ থেকে ৩ গ্রাম, মানে আধা চা-চামচের বেশি খাওয়া ঠিক নয়।

জাম শুধু মানুষের জন্যই উপকারী নয়, অনেক প্রাণীর রোগও ভালো করে। বিশেষ করে মহিষ ও ছাগলের ভাইরাসজনিত বসন্ত বা পক্স রোগের ওপর জামের কার্যকারিতা গবেষণা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, জামপাতা ব্যবহার করে ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ ভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধ করা যায়। জামের বিচির গ্যাস্ট্রো-প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য থাকায় তা আন্ত্রিক বা পেপটিক আলসার নিরাময়ে কার্যকর। এটা মিউকোসল ডিফেন্সিভ ক্রিয়া ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং লিপিড প্যারাঅক্সিডেশন কমায়।

বিঃদ্রঃ- এটি পাঠকদের সাধারণ তথ্য দানের উদ্দেশ্যে লেখা। এটি চিকিৎসার কোনও বিকল্প নয়। নতুন পরিপূরক পদ্ধতি শুরু করার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top