

প্রীতি গুপ্তাঃ ডক্টর বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর, ভারতীয় ইতিহাসের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় তার অবদান আজও স্মরণীয়।আজও দেশের সংবিধান রক্ষায় তার নাম বার বার উঠে আসে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে।সেইকারনে রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে বার বার তার নাম নিতে হয়। মৃত্যুর ৬৮ বছর পরও তিনি রাজনীতিতে সমান প্রাসঙ্গিক।
ডক্টর বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর যে শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন তা ন্য,সেইসাথে তিনি এক উজ্জ্বল অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন যিনি আধুনিক ভারত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।তিনি ১৪ এপ্রিল, ১৮৯১ সালে, মধ্যপ্রদেশের মহুতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আম্বেদকর তার সারা জীবন সমাজের পিছিয়ে থাকা দরিদ্র মানুষের মঙ্গলের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
আম্বেদকরের জীবন শুরুর দিকে নিদারুণ দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যের মধ্যে কেটে ছিল। একজন দলিত হিসেবে (পূর্বে “অস্পৃশ্য” নামে পরিচিত), তিনি প্রচুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাঁধার সম্মুখীন হন। এসব বাধা সত্ত্বেও, তার পিতা রামজি মালোজি সকপাল তার ছেলেকে শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করেন। আম্বেদকর মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য একটি বৃত্তি অর্জন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে অর্থনীতিতে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন ।
১৯২০ সালে, আম্বেদকর নিউ ইয়র্ক সিটির কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি কলম্বিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তারপরে পিএইচডি লাভ করেন লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে। বিদেশে থাকাকালীন, আম্বেদকর জন রাসকিন এবং হেনরি জর্জের মতো পশ্চিমের সমাজ সংস্কারকদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যারা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছিলেন।
শিক্ষা সমাপ্ত করার পর, আম্বেদকর ১৯২৩ সালে ভারতে ফিরে আসেন এবং মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি শীঘ্রই সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন, বিশেষ করে যেগুলির লক্ষ্য ছিল অস্পৃশ্যতা দূর করা এবং দলিতদের জন্য সমতা বৃদ্ধি করা।
১৯২৭ সালে, আম্বেদকর দলিতদের মধ্যে সামাজিক সংস্কারের প্রচারের জন্য বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা (আত্ম-সম্মান লীগ) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মূকনায়ক (নীরব নেতা) পত্রিকাটিও সম্পাদনা করেছিলেন, যেটি দলিতদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে।
আম্বেদকরের নেতৃত্বের দক্ষতা এবং বাগ্মীতা দক্ষতা তাকে ভারতীয় রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব করে তোলে। ১৯৩৬ সালে, তিনি সর্বভারতীয় তফসিলি জাতি ফেডারেশনের (AISCF) সভাপতি নির্বাচিত হন, যার লক্ষ্য ছিল সমগ্র ভারতের দলিতদের একত্রিত করা।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আম্বেদকর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪২ সালে, তিনি লর্ড লিনলিথগোর অধীনে ভাইসরয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হন।ব্রিটিশ সরকারের সাংবিধানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসাবে, আম্বেদকর ১৯৪৬ সালে ভারতের ভবিষ্যত সংবিধানের উপর একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তাঁর সুপারিশগুলি ভারতের সংবিধানের ভিত্তি তৈরি করে।


ভারতীয় সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে, আম্বেদকর ভারতের সংবিধানের খসড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার সহ একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্রের জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হয়েছিল যখন ভারত ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা লাভ করে।
আম্বেদকরের উদ্যোগে ভারতীয় সংবিধানে সমতা, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শোষণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা সহ সমস্ত নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকারগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই সাথে সংবিধানের প্রস্তাবনায় সামাজিক ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও সুযোগের সমতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
স্বাধীনতার পর, আম্বেদকর ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী (১৯৪৭- ১৯৫১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মৌলিক অধিকার, মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার এবং শ্রম সংস্কার সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি দলিতদের মধ্যে শিক্ষার প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ভারতের স্বাধীনতার মাত্র ছয় বছর পরে ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর আম্বেদকর মারা যান। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
আরও পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন