দুধে ইউরিয়া কিডনি এবং লিভারের জন্য নীরব ঘাতক ,জানুন দুধে ইউরিয়া সনাক্ত করার এক সহজ পদ্ধতি

উত্তরাপথঃ বিশ্বের অনেক পরিবারে দুধ একটি প্রধান খাদ্য, যা মানুষকে, বিশেষ করে শিশু এবং ছোট শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। প্রতিটি বাড়িতে প্রতিদিন দুধ ব্যবহার করা হয়। দুধকে একটি সম্পূর্ণ খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত পুষ্টি এতে উপস্থিত রয়েছে। এটি খেলে হাড় মজবুত হয় এবং শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি ও শক্তি পায়। এর নিয়মিত সেবনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদের সাহায্য করে। কিন্তু আজকাল বাজারে খাঁটি দুধ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দুধে নানা ধরনের জিনিষ ভেজাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি এতে ইউরিয়ার মতো বিপজ্জনক রাসায়নিকও মেশানো হচ্ছে (Urea Contamination in Milk), যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইউরিয়া মিশ্রিত ভেজাল দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই প্রসঙ্গে, ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) ভেজাল দুধ সনাক্ত করার জন্য একটি সহজ পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছে।

ইউরিয়া কি?

ইউরিয়া কার্বামাইড নামেও পরিচিত। এটি কার্বনিক অ্যাসিডের ডাইমাইড ফর্ম। এটি জমিতে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ইউরিয়ার কোন রং নেই। এটি একটি গন্ধহীন, স্বাদহীন এবং বিষাক্ত রাসায়নিক।

দুধে ইউরিয়া মেশানো হয় কেন?

দুধে ইউরিয়া যোগ করার প্রধান কারণ অর্থনৈতিক। এটি দুধে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে যোগ করা হয়, যার কারণে দুধে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি দেখা যায়। এ কারণে দুধ বিক্রেতারা দুধে জল মিশিয়ে বিক্রি করে। তবে এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 গবেষণায় দেখা গেছে যে দুধে উচ্চ মাত্রার ইউরিয়া থাকলে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিডনি ইউরিয়া সহ রক্ত ​​থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে, যা পরে প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়। কিডনি অতিরিক্ত পরিমাণে ইউরিয়া ফিল্টার করতে না পারলে তা রক্তে জমা হতে পারে এবং কিডনির ক্ষতি হতে পারে। একইভাবে, ইউরিয়া মিশ্রিত দুধের অত্যধিক ব্যবহার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে।

গবেষণা ইউরিয়া দূষণকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:

১। কিডনির ক্ষতি: দুধে উচ্চ মাত্রার ইউরিয়া কিডনির পরিস্রাবণ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের দিকে পরিচালিত করে।

২।লিভারের ক্ষতি: ইউরিয়া যুক্ত দুধের অত্যধিক ব্যবহার লিভারের ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং লিভার ব্যর্থ হতে পারে।

৩।অ্যানিমিয়া: ইউরিয়া দূষণ লোহিত রক্ত ​​কণিকার উৎপাদন হ্রাস করে রক্তাল্পতা সৃষ্টি করতে পারে।

৪।গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: ইউরিয়া দূষণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

ইউরিয়া দূষণ পরীক্ষার জন্য FSSAI-এর সুপারিশ

ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) দুধের পণ্যগুলিতে ইউরিয়া দূষণের সীমা নির্ধারণ করেছে। FSSAI বিধি অনুসারে, দুধের পণ্যগুলিতে প্রতি ১০০ মিলিতে ইউরিয়ার পরিমাণ ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।

ইউরিয়া দূষণ পরীক্ষা করার জন্য, FSSAI নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি সুপারিশ করে:

১। কেজেলডাহল পদ্ধতি: এটি একটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতি যা দুধের নমুনায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ পরিমাপ করে।

২।এনজাইম-লিঙ্কড ইমিউনোসর্বেন্ট অ্যাস (ELISA): এই পদ্ধতিটি দুধের নমুনায় নির্দিষ্ট প্রোটিন বা অ্যান্টিজেন সনাক্ত করতে অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে।

৩। হাই-পারফরম্যান্স লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি (HPLC): এই পদ্ধতিটি দুধের নমুনার উপাদানগুলিকে আলাদা করে, সনাক্ত করে এবং পরিমাপ করে।

এছাড়াও দুধে ইউরিয়া সনাক্ত করার একটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে। এর জন্য একটি টেস্টটিউবে ২ চামচ দুধ রাখুন এবং তাতে আধা চামচ সয়াবিন বা অড়হর ডালের গুঁড়া দিন। ভালো করে মেশান এবং ৫ মিনিট পর এই মিশ্রণটি লাল লিটমাস পেপারে ঢেলে দিন। ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। লিটমাস পেপারের রং নীল হলে দুধে ভেজাল। যদি রঙ পরিবর্তন না হয় তবে দুধ খাঁটি। এই সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার দুধের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করতে পারবেন এবং ভেজাল দুধ এড়াতে পারবেন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top