দ্য গ্রেট প্লাস্টিক রাইস এবং নকল ডিম বিতর্ক: কল্পকাহিনী না সত্য ?

প্রীতি গুপ্তাঃ সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাস্টিকের চাল এবং নকল ডিমের ভিডিও ভায়রাল হয়েছে। সচেতনতা মূলক প্রচার হিসেবে অনেকেই এই ভিডিওগুলি শেয়ার করেছেন ।  এই ভিডিওগুলি কি সত্যি ? নাকি এই ভিডিওগুলি কেবল প্রচারের সরঞ্জাম যা ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে?

প্লাস্টিকের চাল এবং নকল ডিমের গুজব দীর্ঘদিন ধরে প্রচারিত হচ্ছে।সাম্প্রতি একটি YouTube ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, যেখানে একটি কারখানায় নকল ডিম তৈরির প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে দেখানো হচ্ছে । এখন প্রশ্ন এটা কি আসলেই নকল ডিমের অস্তিত্বের প্রমাণ?সত্য হল, এই ভিডিওগুলির মধ্যে অনেকগুলি বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং প্রায়শই ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রচারের সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।এখানে যে ভিডিওটির কথা বলা হচ্ছে সেটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে  যাতে এটিকে বাস্তব বলে মনে হয় এবং মানুষের মনে বিভ্রান্তি বাড়ায়।

কিন্তু কেন এই ভিডিওগুলি এত বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে মানুষের কাছে ? এর প্রধান কারণ এই ধরনের ভিডিও নির্মাতারা আমাদের আবেগকে প্ররোচিত করার জন্য এবং ম্যানিপুলেট করার জন্য ভিডিও গুলিকে এই ভাবে ডিজাইন করেছে।এই ভিডিওগুলির নির্মাতারা প্রায়ই ভীতিকর কৌশল ব্যবহার করে, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গুণমান নিয়ে আমাদের ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে খেলা করে। তারা ভিডিওগুলিকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে সেগুলিকে বাস্তব বলে মনে হয়, তারা দর্শকদের মধ্যে তাদের তৈরি ভিডিওকে জনপ্রিয় করতে আতঙ্কের অনুভূতি তৈরি করে।

এখন প্রশ্ন নকল ডিম কি সত্যি বানানো সম্ভব ? মোম বা এ–জাতীয় নানা দ্রব্য মিশিয়ে ডিমের মতো দেখতে কিছু অবশ্যই কিছু বানানো যায়।স্থানীয়ভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা এগুলো বিক্রি করার সময় ধরা পড়েছে, তা–ও ফেসবুকের কল্যাণে জানা যাচ্ছে, তা অতিরঙ্গিত।আসল ডিমের আনুকরনে একটি নকল ডিম তৈরিতে আসল ডিমের থেকে সেই নকল ডিমের তৈরি খরচ অনেক বেশী হবে ।তাহলে প্রশ্ন কোন ব্যবসায়ী বেশী টাকা দিয়ে নকল ডিম তৈরি করে কম দামে আসল ডিম হিসেবে বাজারে বিক্রি করবে? আসল ঘটনা হলো, ডিমের ভেতরে খোসার ঠিক নিচে একটি পাতলা মেমব্রেন বা আবরণ থাকে। ডিম কড়া রোদে বেশি দিন থাকলে সেটা শুকিয়ে কাগজের মতো হতে পারে। তাই বলে তাকে প্লাস্টিক বা কাগজের ডিম মনে করাটা হাস্যকর।

একই ঘটনা প্লাস্টিকের চালের ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।সেখানেও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন ভাত রান্না করার পরে ভাতের চেহারা দেখে বলছেন এটা নির্ঘাত প্লাস্টিকের চাল। ভাতের মাড় নাকি শুকিয়ে প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে, আর ভাতটাকে বল বানিয়ে বাউন্স করানো যাচ্ছে।ভিডিওটি যিনি বানিয়েছেন তিনি কি কখনো অতিরিক্ত সিদ্ধ চাল ভাতের মাড় শুকানোর পরে কেমন হয় দেখেননি?

এক্ষেত্রে ভিডিওটির নির্মাণ কর্তার যুক্তি প্লাস্টিকের না হলে কি ভাতের বল হতে পারে? ভাত মূলত কার্বহাইড্রেট, আর ভাতের স্থিতিস্থাপকতা অনেক সময়ে রাবারের মতো হয়। তাই পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই ভাতের বলের বাউন্স করা সম্ভব। তার জন্য প্লাস্টিক হওয়ার দরকার নেই।

আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের ভাত রান্না করার জন্য জলে ফোটাতে হয়, সেই জলের স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাজারে যেসব প্লাস্টিক পাওয়া যায়, তাদের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন। যেমন পিভিসি প্লাস্টিক গলে ১৬০ ডিগ্রি থেকে ২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।জলের স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার ওপরে হওয়া সম্ভব নয়।তাই যে কোনো প্লাস্টিককে আপনি পরীক্ষা মূলক ভাবে বাড়িতে জলে ফুটিয়ে দেখতেই পারেন। আবার প্লাস্টিকে যদি অন্য কোনও ভাবে গলানো হয় সেক্ষেত্রে তার আকার পরিবর্তন হবে ,তাকে কোনও ভাবেই আগের আকারে পাওয়া যাবেনা।সেটি যদি প্লাস্টিক চালও হয়, তার আকার রান্নার পর ভাতের আকারে থাকার কথা নয়।

সুতরাং, আমাদের সবসময় এই সব কল্পকাহিনী থেকে সত্য আলাদা করার মত সক্ষমতা রাখতে হবে।  আমাদের এমন তথ্য সম্পর্কে কোনও বিশ্বাসযোগ্য উৎসর মাধ্যমে তথ্য যাচাই  করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য মূলক  ওয়েবসাইটগুলির সন্ধান করে ঘটনার সত্যতা যাচাই জরুরী ৷ সেইসাথে, এমন ভিডিওগুলি থেকে সতর্ক থাকুন যেগুলি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যা আপনার আবেগকে চালিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে৷

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top