

উত্তরাপথঃ আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে পৃথিবীতে একটি দিনের দৈর্ঘ্যে ভবিষ্যতে পরিবর্তন হতে পারে। যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির বিজ্ঞানীদের একটি দল দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোর বিজ্ঞানীদের দ্বারা এতদিন ধরে যা চিন্তা করা হয়েছিল তার চেয়ে দ্রুত গতিতে ধীর হয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র হল একটি কঠিন গোলক যা মূলত লোহা এবং নিকেল দিয়ে তৈরি এবং এটি গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নতুন গবেষণাতে বলা হয়েছে যে অভ্যন্তরীণ কোরটি গ্রহের বাকি অংশের তুলনায় কিছুটা ধীর গতিতে ঘূর্ণন করছে, যার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ধীর হয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের কোর একসাথে পৃথিবীর তিনটি স্তরের একটি তৈরি করে। অন্য দুটি স্তর হল ম্যান্টেল এবং ক্রাস্ট। ভূত্বক হল সেই স্তর যার উপর আমরা বাস করি।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কেন্দ্রে গতিবিধি নির্ধারণের জন্য ভূমিকম্পের সময় প্রাপ্ত তরঙ্গের রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে মূল অধ্যয়ন করেন। এই রেকর্ডিংকে সিসমোগ্রাম বলা হয়। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া-এর আর্থ সায়েন্সের অধ্যাপক জন উইডেল বলেন, ‘আমি যখন প্রথমবারের মতো সিসমোগ্রাম দেখেছিলাম, তখন আমি অবাক হয়েছিলাম। এটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত ছিল। ভিদাল আরও বলেছেন যে আরও ২০ টি সিসমোগ্রাম অধ্যয়ন করা হয়েছিল এবং সেগুলি একই প্যাটার্নের দিকে নির্দেশ করেছিল।
এই গবেষণায়, গবেষকরা ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংঘটিত ১২১টি পুনরাবৃত্তিমূলক ভূমিকম্প থেকে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে রেকর্ডকৃত ভূমিকম্প সংক্রান্ত তথ্য সংকলন ও বিশ্লেষণ করেছেন। তারা ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে দুটি সোভিয়েত পারমাণবিক পরীক্ষার ডেটাও ব্যবহার করেছেন।সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণা বলছে চার দশকের মধ্যে এই প্রথম অভ্যন্তরীণ কোরটি ম্যান্টেলের চেয়ে ধীর গতিতে ঘুরছে। অভ্যন্তরীণ কোরটি প্রতি বছর প্রায় ০.০৫ মিলিসেকেন্ড করে ধীর হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণের মত নাও মনে হতে পারে, কিন্তু অনেক বছর পর, এটি পৃথিবীর একটি দিনের দৈর্ঘ্যের উপর একটি লক্ষণীয় প্রভাব ফেলতে পারে। অভ্যন্তরীণ কোর ধীর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে দীর্ঘ হবে, যার ফলে দিনগুলি এখনকার তুলনায় কিছুটা দীর্ঘ হবে।গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে এই পরিবর্তনগুলি ভূতাত্ত্বিক সময়কালে ঘটতে পারে, তাই এটি এমন কিছু নয় যা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের চিন্তা করার দরকার নেই। যাইহোক, অধ্যয়নটি পৃথিবীর গভীরে ঘটতে থাকা গতিশীল প্রক্রিয়াগুলি এবং কীভাবে তারা গ্রহের ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
এই গবেষণাটি প্রমাণের একটি অধ্যায় যোগ করে যা আমাদের দেখায় যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরটি আগের মত স্থিতিশীল নয়। এটি আমাদের গ্রহ কীভাবে কাজ করে এবং সময়ের সাথে সাথে কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গবেষণার গুরুত্বকে তুলে ধরে।সামগ্রিকভাবে, এই গবেষণাটি পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং একটি দিনের দৈর্ঘ্যের সম্ভাব্য পরিবর্তনের উপর নতুন আলোকপাত করে, আমাদের গ্রহের গতিবিদ্যা অধ্যয়নরত বিজ্ঞানীদের জন্য মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। যদিও এই পরিবর্তনগুলির প্রভাব আমাদের কাছে অবিলম্বে লক্ষণীয় নাও হতে পারে,তবে ভবিষ্যতে পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী বিবর্তন গঠনে একটি মূল ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন