মৈত্রেয়ী চৌধুরী
পাত্র — সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
পিতা— অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়।
মাতা— দীপমালা মুখোপাধ্যায়।
অপরপক্ষে
পাত্রী— মোনালিসা গাঙ্গুলী
পিতা— সুভাষ গাঙ্গুলী
মাতা— প্রতিভা গাঙ্গুলী।
বিবাহ কার্ডে পাত্র পাত্রীর পরিচয়ের মতো করেই পরিচয় পর্বের ইতি টানলাম। এবার আসা যাক মূল পর্বে।
চাকরির বাজার ভীষণ মন্দা। পাত্র সৃজিত এম. এস.সি পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছে না। অগত্যা পরিবারের ব্যাবসার হাল ধরেছে। পারিবারিক সূত্রে তাদের মিষ্টির বেশ বড় দোকান রয়েছে। সৃজিত পড়াশোনা তে বেশ ভালো ছাত্র ছিল। প্রতিদিন সকালে পেপারে চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজা তার একটি কাজ। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বয়স তো থেমে থাকবে না। বাবা মা ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা কিছু দিনের মধ্যেই ছেলের বিয়ে দেবেন এরকম স্থির করেন।
মোনালিসা ভূগোলে সদ্য এম.এ, পি. এইচ. ডি করে একই ভাবেই চাকরির খোঁজ করে যাচ্ছে। বাবা সুভাষ বাবু সরকারি চাকরিজীবী। উনার অবসরের সময় প্রায় আসন্ন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই স্ত্রীকে বলছেন এবার মেয়ের বিয়ে নিয়ে তো ভাবতে হবে। মোনালিসা বলাবাহুল্য পড়াশোনোতে যেমন ভালো তেমনি মেয়েটির অনেক গুন রয়েছে। সে নাচ, গান, সেলাই এ দারুন দক্ষ। সুন্দরী ও বটে।
ঘটনাচক্রে আলাপ ঘটে এই দুই পরিবারের মধ্যে। দীপমালা দেবী মোনালিসা কে দেখে বলেন যে, মেয়ের গায়ের রঙ তো চাপা, দেখতে … ঠিক ই আছে, তবে তুমি কি গান জানো? নাচ? আজকাল তো মধ্যবিত্ত বাড়িতে এসব শেখানোই হয়।
মোনালিসা অনেকক্ষণ বাবা মায়ের সম্মানের কথা ভেবে চুপ করে ছিল, এবার মোনালিসা বলে, আপনি গান আর নাচের কথা যে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের যদি এই সম্পর্ক এগোয় তবে কি আপনি এসব নিয়ে স্কুল করার সুযোগ দেবেন?
অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করে দীপমালা দেবী বললেন, কখনো দেখেছো বিয়ের পরে এসব কেউ করে? বিশেষকরে আমাদের মতো বিত্তশালী পরিবারে এসব হয় না।
মোনালিসা… তবে কেন যে সকলে এই গান নাচের বিষয় জিজ্ঞেস করেন? প্রতিভা দেবী মেয়েকে ইশারায় ধমক দেন।প্রতিভা দেবীর দিকে তাকিয়ে দীপমালা দেবী বলেন, না ঠিক আছে, তবে আপনি একটু মেয়ের রঙের বিষয়ে যত্ন নিতে পারতেন? তুমি মা বিয়ের আগে একটু সর হলুদ মেখো কেমন? মোনালিসা অবাক নয়নে সৃজিত বাবুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল উনি তো বেশ কালো। তবে উনাকে তো কেউ এইকথা বলেন না?
যাই হোক, এরপর শুরু হলো দীপমালা দেবীর ছেলের প্রশংসা, নিজেদের ব্যবসার রমরমা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা আর একমাত্র ছেলের জন্য রাজকন্যা আনবে ভেবেছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অপরদিকে সুভাষ বাবূ, প্রতিভা দেবী আসামীর মতো দাঁড়িয়ে, যেন উনারা মেয়ের বাবা হয়েই বড় অপরাধ করেছে। উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে ও এই একটা বাজার তাকে বলে বিয়ের বাজার সেখানে শিক্ষিতা অশিক্ষিতা সবার যেন মুড়ি মুড়কি এক দর। সেখানে মেয়ের বাবার পকেটের দাম সবচেয়ে বেশী হয়। মধ্যবিত্ত পিতা মেয়েকে কতটা শিক্ষিতা করছেন তার কোনো দাম থাকে না। দাম শুধু ই পকেটের। পকেট ছোট হওয়া মানেই হাঁড়ি কাঠে গলা ……
মোনালিসা এইসব ঘটনা দেখে ও বুঝে নিজেকে খুব ছোট ভাবতে থাকে। এরই মধ্যে শুরু হয় আর একটি পালা, দীপমালা দেবী বলেন , এবার তো আমাদের উঠার সময় হলো,
সুভাষ বাবু এগিয়ে এসে বলেন, মেয়েকে পছন্দ তো আপনাদের?
অশোক বাবু গিন্নীর দিকে তাকাতেই দীপমালা দেবী সৃজিত ও মোনালিসা কে বললেন তোমরা অন্য ঘরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ পরিচয় করে নাও, আমি অত্যন্ত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষ। এইভাবে দুজনকে সরিয়ে দিয়ে সুভাষ বাবু ও উনার স্ত্রীকে বললেন আপনারা বসুন, এবার আমাদের মধ্যে ও কিছু গল্প হোক, তাই না। সুভাষ বাবু তো বুঝতে ই পারছেন না কিভাবে উনাদের খাতির যত্ন করবেন।
এরই মধ্যে দীপমালা দেবী বলেন, কি ব্যাপার সুভাষ বাবু, আপনাকে একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে কেন?
যাক গিয়ে এবার আসা যাক কাজের কথায় দেখুন আমাদের কোনো দাবি নেই। ভগবানের কৃপায় যথেষ্ট ই আছে আমাদের। তবে আপনাদের হবু জামাই ব্যাবসার কাজে তো অনেক জায়গায় যায় তাই আপনি একটা চারচাকা তো জামাই কে দেবেন, সেটা অবশ্যই সৃজিতের আবদার। আর একটা কথা, দেখুন আমি সোজা কথা সোজাসুজি বলতেই পছন্দ করি আমাদের যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে তাই বউ দেখতে এসে, যেন কেউ বলতে না পারেন যে কোনো ভিকেরীর বাড়ির মেয়ে, তাই পঁচিশ ভারীর গয়না দিয়ে মেয়েকে সাজিয়ে দেবেন………. কথাগুলো শুনতে শুনতেই সুভাষ বাবু মনে মনে হিসেব কষতে থাকেন যে সামনেই তো রিটারমেন্ট, সেখান থেকে ই প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুয়েটি থেকে যা পাওয়া যাবে তাতে একটা গাড়ী আর মনার মা তো পনেরো ভারীর মতো গয়না বানিয়ে ই রেখেছে লাগবে শুধু আর দশ ভরী, হয়ে যাবে, মনে হয়। দীপমালা দেবী বলেন, কি হলো সুভাষ বাবু, চিন্তিত মনে হচ্ছে? আরে বাবা, এইটুকু ই তো শুধু আমার বাড়ির সন্মানের জন্য, ব্যাস। এতো সব মেয়ের বাবারা তার মেয়ের জন্য সাধ করেই দেন। আর তো আমার কোনো বক্তব্য ই নেই। বাকী সোফা, বেড, ডবল ডোর ফ্রিজ , টিভি এসব তো সবাই দেয়, তাই দেবেন। আমি কিছু বলছি না, কারণ ছেলে আমার একটাই, আরে সৃজিত মোনালিসার সাথে কথা হলো, এবার তবে বাড়ি চলো। বিয়ের তারিখ আপনাদের কথা মতোই ঠিক করবো। চলি তবে সুভাষ বাবু।
এসব শোনার পর কন্যা দায় গ্রস্থ পিতার যা হয়, তাই হলো। ঘুম, ক্ষুধা সব চিন্তার মধ্যে ঢুকে পড়লো। সারা জীবনের যে শেষ সঞ্চয় বাকী জীবনের জন্য রাখা দরকার সে সবটা খরচ করেও তো কিছু কম পড়ছে বিয়ের জোগাড় করতে, অবশেষে ধার দেনা করে সেই বিয়ের মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়। বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে মোনালিসা কে আসরে আনা হলে সে পাত্রপক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। আর তাদের কে জিজ্ঞেস করলো আপনারা যে বিয়েতে এসেছেন এটা কে কি বিয়ে বলে? না পুত্রের সন্তানকে বিক্রির ফাঁদ?
সন্তান পুত্র হলে বাবা মা আনন্দ করেন কারণ কন্যাদায় গ্রস্থ পিতাকে যেন যন্ত্রনা দিতে পারেন. তাই?
কন্যা সন্তান আর পুত্র সন্তানকে পড়াশোনা, লালন পালনে কি খরচের তারতম্য ঘটে?
আপনি ও তো আমার মতো একজন শিক্ষিত বেকার সৃজিত বাবু , তবে আপনার জন্য গাড়ী, আসবাব দিতে হবে আমার বাবাকে, আর আমার জন্য আপনার বাড়ি তে প্রাপ্তি শিক্ষিত কাজের লোকের আসন?
বা: এখানে তো অনেক মেয়ে রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই কথা বলার বিয়ের বাড়ি মানে এই সাজগোজ করাই কি মেয়েদের কাজ, আর একজন মেয়ের বাবার যে কি দশা হয় তার খোঁজ রাখবেন না আপনারা? আপনারাও তো পিতার কন্যা সন্তান ?
এরপর বিয়ের বাড়িতে শুরু হয় অশান্তির ঝড়, সৃজিত বাবু ক্ষমা চায় আমি এসবের কিছুই জানতাম না বিশ্বাস করুন?
মোনালিসা এরপর যখন আপনার বিয়ের জন্য আবার পরম সুন্দরী পাত্রীর খোঁজ হবে, তখন সব জেনেই বিয়ের আসরে আসবেন, এখন আপনারা যেতে পারেন।
আরও পড়ুন
টাইফুন ইউন-ইউং এর আজ জাপানের টোকাই অঞ্চলে প্রত্যাশিত ল্যান্ডফল
উত্তরাপথঃ জাপানের জনগণ টাইফুন নং ১৩ যা ইউন-ইউং নামে পরিচিত যা শুক্রবার বিকেলের দিকে টোকাই অঞ্চলে ল্যান্ডফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে নাগোয়া অবস্থিত। জাপান ইতিমধ্যে এর আগমনের জন্য নিজেদের আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রসঙ্গত গত কয়েকদিন ধরে ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছিল টাইফুন ১৩। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার টোকাই এবং কান্টো অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করছে, যা পরিবহন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।আবহাওয়া দপ্তরের মতে শুক্রবার সকাল ৬ টা নাগাদ ২৪ঘন্টা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ইজু দ্বীপপুঞ্জে ২৫০ মিলিমিটার, টোকাই অঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটার এবং কান্টো-কোশিন অঞ্চলে ১০০ মিলিমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) .....বিস্তারিত পড়ুন
সালাদ খাওয়া'র সেরা সময়: খাবার আগে না পরে?
উত্তরাপথঃ আজকাল অনেক ডাইয়েটিশিয়ান সুস্থ থাকতে খাবারে বিশেষ করে সালাদ অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। কারণ এতে অনেক ধরনের শাকসবজি, ডাল এবং ফল রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারি। কিন্তু সালাদ খাওয়ার সেরা সময় কখন তা নিয়ে মানুষ খুব বিভ্রান্তিতে পড়ে, খাবার পরে না আগে খাবে বুঝতে পারে না।কেউ কেউ যুক্তি দেন যে খাবারের আগে সালাদ খাওয়া হজমে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা প্রদান করে,আবার আরেক দল বিশ্বাস করে যে খাবারের পরে এটি খাওয়া আরও উপকারী। আসুন উভয় দৃষ্টিভঙ্গি অন্বেষণ করি এবং প্রতিটি পদ্ধতির সম্ভাব্য সুবিধাগুলি বিবেচনা করি। খাবার আগে সালাদ খাওয়া: খাবারের আগে সালাদ খাওয়া ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। শাকসবজির উচ্চ ফাইবার সামগ্রী এবং জলের উপাদান পূর্ণতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে, যা মূল কোর্সের সময় ক্যালোরি গ্রহণকে হ্রাস করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
চাকরি ছাড়ার পর ফেরত দিতে হলো অফিসে খাওয়া চায়ের দাম
উত্তরাপথঃ চা কে আমরা যতই বলি স্ট্রিট ফুড বলি না কেন আসলে এটি এমন একটি পানীয় যা বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্বায়নকে চালিত করেছিল। দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে কর্মীদের মধ্যে ক্লান্তি কিংবা বিরক্তি কাজ করে, তা কাটাতেই প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিসেই কম বেশি চা-কফি খাওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছাড়ার পর দুই কর্মীকে অফিসে যত কাপ চা খেয়েছেন, তার বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এই বিরল কাণ্ড ঘটেছে চীনে।ঘটনা চীনের আনহুই প্রদেশের। সেখানে দুই কর্মী চাকরি ছেড়েছিলেন। খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, আমরা অনেকেই চাকরি ছেড়ে থাকি। কিন্তু পরের ধাপে যা ঘটলো, তা কোনভাবেই স্বাভাবিক নয়। .....বিস্তারিত পড়ুন
WORLD CUP 2023: আফগানিস্তান ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করল,অধিনায়কত্ব করবেন হশমতুল্লাহ শাহিদি
উত্তরাপথঃ আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ২০২৩-এর জন্য একটি শক্তিশালী ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে,এই দলে ফিরেছেন নবীন-উল-হক। ৫ অক্টোবর থেকে ভারতে শুরু হতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ,চলবে১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের দলে ফিরেছেন নবীন-উল-হক, যিনি এশিয়া কাপে দলের অংশ ছিলেন না।১৫ সদস্যের আফগান দলের অধিনায়কত্ব করবেন হশমতুল্লাহ শাহিদি ।একই সময়ে, ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আজমতুল্লাহ ওমরজাই, যিনি এশিয়া কাপের দলে ছিলেন না, তিনিও বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন