পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে আপনি কীভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন?

উত্তরাপথঃ এটাই ভারতের ভোটারদের সমস্যা, একদিকে তীব্র দাবদহ অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন।তীব্র গরমে কলকাতা  সহ সারা রাজ্যের রাস্তা দিনের বেলা প্রায় খালি হয়ে যাচ্ছে,রাজ্যের  স্কুলগুলিতে ক্লাস বাতিল করে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই তীব্র গরমে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।ইতিমধ্যে শহর কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৫০ বছরে (এপ্রিল মাসের নিরিখে) দ্বিতীয় সর্বাধিক অনুভূত হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আগামী পাঁচদিনে ৪২ ডিগ্রি ছাপিয়ে ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এতদিন দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের জেলাগুলিতে বেশি তাপের দহন দেখা যেত,এবার সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গ জুড়ে তাপের তীব্রতা রয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর চলতি সপ্তাহের বুধবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছিল। ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সিংহভাগ জেলা তাপপ্রবাহের অধীনে। কতগুলো অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি ৷ যা আগামী মে মাসে প্রতিদিনই দেখা যাবে বলে আবহবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন। শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গের সমতলের তিনটি জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি। বিশেষ করে মালদা, বালুরঘাট তাপপ্রবাহের আওতায়।

১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়া সাত-পর্যায়ের সাধারণ নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে ভোটাভুটি ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় চার শতাংশ কম ছিল, বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।   প্রথম দফায় ১০২টি আসনের নির্বাচনের জন্য মোট ভোটার ছিল ১৬ কোটিরও বেশি । ভোটদানের হার ছিল ৬৫%, যা ২০১৯ সালের রেকর্ড ৭০% থেকে হ্রাস কম।নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় ভোট পড়েছে ৬০.৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় সারা দেশে মোট ভোট পড়েছিল ৬৯.৪৩ শতাংশ।  পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হয়। সব মিলিয়ে মোট ৮৮ আসনে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেরলের ২০টি আসন। ১৪টি কর্নাটকের, রাজস্থানের ১৩টি, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে আটটি, মধ্যপ্রদেশের সাতটি, বিহার এবং অসমে পাঁচটি, ছত্তীসগঢ় এবং পশ্চিমবঙ্গে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীর, মণিপুর এবং ত্রিপুরায় একটি করে আসনে ভোট হয়েছে শুক্রবার। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, ভোটদানের হার প্রায় ৬১ শতাংশ। গত বারের লোকসভা ভোটের হারের সঙ্গে তুলনা করলে যা অনেকটা কম। কমিশনের বিবৃতি অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১৫.৮৮ কোটি ভোটার তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন।

তীব্র তাপমাত্রার কারণে বেঙ্গালুরুর বোম্মাসান্দ্রা কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন এক মহিলা। ভোট দেওয়ার জন্য সকাল ৭টা থেকেই ভোটারদের বিশাল লাইন পড়ে যায়। অনেক সময় ভোটের লাইনে অপেক্ষা করার পর মহিলা একটু অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই ভোটার লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তারপর ভোটকেন্দ্রেই রাখা পানীয় জল খাওয়ার জন্য এগিয়ে যান। তখনই জ্ঞান হারান। ওই কেন্দ্রেই ভোট দিতে গিয়েছিলেন চিকিৎসক গণেশ শ্রীনিবাস প্রসাদ। তিনিও ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই পরিস্থিতি দেখে বিন্দুমাত্র দেরি না করে সবাইকে সরিয়ে মহিলার অবস্থা খতিয়ে দেখেন চিকিৎসক। তিনি বুঝতে পারেন মহিলা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কালবিলম্ব না করে তিনি সিপিআর দেওয়া শুরু করেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মহিলার জ্ঞান ফেরে।

সর্বোচ্চ ভোটদানকে উৎসাহিত করা যেকোনো গণতন্ত্রের জন্যই শেষ শর্ত হওয়া উচিত।সেক্ষেত্রে পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে আপনি কীভাবে গণতন্ত্র চালাবেন? পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে গরম আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিবেশগত চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top