বসন্ত

অসীম পাঠকঃ বসন্ত মানেই পলাশ এর মনমাতানো সমারোহ। ফুল কিংশুক ভারী হিংসুক , হিংসুক এ কারণেই সে যে প্রেমের প্রতীকী ভাষ্যে উদ্দীপ্ত।
রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে।
পলাশ আমার ভীষণ প্রিয়। ভালোবাসতে জানা প্রতিটি মানুষের কাছেই পলাশ নিশ্চই ভীষণ প্রিয় হবে।
সময়ের গন্ডি পেরিয়ে কালো চুলে রূপালী প্রলেপ ,তবুও যেনো পরিণত মনে ভালোবাসাও পরিণত হয়েছে অবচেতন মনের জীবাশ্মে। জীবননদীর বাঁকে বাঁকে শুধু অনুভব আর উপলব্ধির খেলা।
এরকমই কোনো এক বসন্তেই হয়তো মুখোমুখি বসে কেটে যাবে মুহূর্তের পর মুহূর্ত।
স্বপ্ন নিয়েই তো মানুষ বাঁচে। আবার হয়তো কল্পনার ক্যানভাসে সব আটকে থাকবে ধূলো মাখা সময়ের ফ্রেমে। আমাদের যাবতীয় ব্যাস্ততা শেষের পর সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ আর সময় উপহার দেবে কিনা তা মহাকাল জানে। আমার গলার নীল টাই আর তোমার নীল শাড়ির কম্বিনেশন মেলার কথাও নয়, মেলবন্ধন সে তো আবেগের গান কবিতা সর্বস্ব এক স্বর্গীয় শব্দের ভান্ডারে, তবুও অনুভূতির গভীরে স্বপ্ন দেখায় দোষ নেই।
স্বপ্নের গভীরে মঞ্জরিত উজ্জ্বল আগামী। যাকে ঘিরে বুনে চলি স্বপ্নজাল সৃষ্টি করি অহ‌ংকারের ইমারত সেই তো প্রেম।
নিরুচ্চারিত মর্ম বেদনায় সমুজ্জ্বল।

অঙ্কের উত্তর না মেলার মতোই এক আশ্চর্য কম্বিনেশন। ইচ্ছে থাকলেও তোমার খোঁপায় পলাশ দেওয়া আমার হাতে নেই । আমাদের ক্যাম্পাস জুড়ে অজস্র পলাশ অথচ তুমি নেই । দায়বদ্ধতা জীবনের নতুন সমীকরনের জন্ম দেয় ।
আজও আমি গভীর বিশ্বাস করি ,প্রেমের পরিণতি সামাজিক বন্ধনের মধ্যেই। তাকে বাঁধতে হয় জীবনের বন্যতায়। সে উদ্দাম,বাঁধনহারা ….. মিলনের পূর্ণতা নয় , সীমার মাঝে অসীম সে তো অনন্তের প্রেমে মগ্ন। সে অনন্ত শুধু ভালোবাসার মানুষের দৃষ্টিতে, বিরহে ই তার সার্থকতা সে তো কবিমনে , সাহিত্যের আঙিনায়। জীবনের ছবিতে শুধুই শূণ্যতা। কাছে না থেকেও সে যেনো জড়িয়ে রয়েছে প্রানের গভীরে ….. তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধটা অদৃশ্য থেকে অনুভবের গভীরে ।
বসন্তের প্রেয়সী নও , বসন্তের পিয়াসী তুমি।
আমার স্বপনচারিণী গোপনচারিণী ……
তাই এই নীল দিগন্তে আগুন রাঙা পলাশ শুধু যে তোমার খোঁপাতেই মানায়।
ভালো লাগে কবিতা , ভালো লাগে অভিনয় , ভালো লাগে রাজনীতি …ভালো লাগে ভালোবাসার মানুষের কথা ভাবতে।
আধ্যাত্মিকতার সাথে সনাতন ঐতিহ্যর সংমিশ্রণ, আড্ডা আর প্রেম।
সে প্রেম আরন্যক প্রকৃতির উষ্ণ নিবিড় সান্নিধ্য। ভালোবাসার বৃত্তের বাইরে আমি কখনও থাকি না ….. আমার জীবন বৃত্তে ভালোবাসার আবর্তনে প্রতি মুহূর্তে আন্দোলিত আমার অবচেতন মন। নিঃশব্দ বিপ্লবের মতোই নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় অস্ত গোধূলির সন্ধ্যা রাগে ভালো লাগে নির্জনতা।
বিরহী কোকিলের কুহু রবের করুন মিনতীতে আতুর মধ্যাহ্নেও খুঁজে পাই সেই শাশ্বত অপেক্ষমানা প্রেমিকাকে ….
এ সব কিছুর মধ্যেই প্রেমের অনুভূতি যেন এক নূতন আত্মোপলব্ধি …… তাই আমার কবিতায় তারই অনুরনন, প্রতিচ্ছবি সেই প্রেমের যা ঐশ্বরিক ভাবনার ফসল । মনকে ঈশ্বর সাধনায় নিবেদনের মধ্যেও সেই প্রেম ….. যা ঐশ্বরিক মহিমায় সমুজ্জ্বল।
নিঃসঙ্গতা নয় , মোহমুক্ত নিরাসক্ততা নয়, একাকিত্বের যন্ত্রণা নয় , মিলনের পূর্নতা।
সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত আলোকিত আন্দোলিত ভালোবাসার অপূর্ব রাগিনী র মূর্ছনায়।
জীবনের যাত্রা পথে আমি যেন পূর্ণ।
মিলনের অনাবিল তৃপ্তি আমার চোখে মুখে লেগে থাকবে আর সেই উচ্ছ্বাস বুকে নিয়ে কয়েক আলোকবর্ষ দূরেও পৌঁছে যাবো শুধু মাত্র প্রেমের জন্য ….. এ যেন একটা সাম্রাজ্য পরিত্যাগ করা …. শুধু নক্ষত্র খচিত প্রেমের জন্য।
তারা ভরা রাতে আর উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তর সব আমার চেতনার রঙে রাঙা । হৃদয়ের উন্মুক্ত প্রান্তর তাই সবুজ বনাঞ্চল । এখানে মরুভূমি নয় মরুদ্যানের স্বপ্ন আর বাস্তবের দুঃস্বপ্ন শাসিত ব্যবধান আমি যেন অবলীলায় অতিক্রম করে যাই …… বসন্ত আমার প্রিয় ঋতু নয় কিন্তু ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ দান আমি পেয়েছি বসন্তে ….. বসন্ত আমার প্রিয় ঋতু নয়… এই পাতা ঝরা, জীর্ণতা র অবসানে নূতন শুরুর ইঙ্গিত আমার মনকে টানে না …. অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা অনুভব করি এই বসন্ত বাতাসে …. ফুল কিংশুকের সমারোহ , লাল শিমূল নীল দিগন্তে আমাকে টানে না ….. এই সৌন্দর্য টুকু নিছক ই ভালো লাগার আবেগ থেকে ….. যেমন ভালো লাগে শীতের হাড় হিম রাতে রোমাঞ্চকর গল্পের উষ্ণতায় মাততে …. যেমন ভালো লাগে বৃষ্টি তে ভিজতে …. শরতে মেঘের ভেলার নীচে গাড়িতে যেতে যেতে গান করতে আর কবিতা বলতে যেমন ভালো লাগে , তেমন ভালো এই বসন্তে লাগে না ….. হেমন্তের নরম রোদ গায়ে মেখে উৎসবে মেতে ওঠার মতো প্রাণবন্ত উল্লাস নবান্নে বোধ করি …. গাছের ছায়ার তলে যে শীতলতা আমাকে হেমন্ত ঝতু দেয় , বসন্ত তা দিতে পারে ণা …. হয়তো বসন্তের ভাঁড়ারে আমার বরাদ্দ দায়িত্বশীলতার ….. ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা আমার জন্য নয় …. দোলের উচ্ছ্বাস আমার কাছে ম্লান ….. সাতরঙা রামধনু র মতো এক অন্য রামধনু আমার জীবনের প্রাপ্তির খাতায় … সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত যে আলোকিত করেছে …. আন্দোলিত করেছে নব জীবনায়নের স্বপ্নে …
বিরহ যন্ত্রণা অনুভব করি …. মনের গভীরে রক্তক্ষরণ …. ইচ্ছেমরণ নয় …. কাছে পাবার ব্যাকুলতা নয় …. দু চোখ ভরে দেখার আকূলতা ….. মনের গভীরে তার ব্যাপ্তি নেই …. আমার নীল অপরাজিতা …. সব টুকু প্রেম তো তাকেই ….. শরতের নীলিমায় আর শ্বেত শুভ্র সাদা কাশের ঝলকানি তেই যে মন তৃপ্ত …
লাল শিমূলে পলাশে কোটি কোটি মাইল দূরের উজ্জ্বল সূর্যের আলোয় আর মায়াবী চাঁদের নৈশ রহস্যে রোমাঞ্চিত … শরত আর রিমঝিম বর্ষা আমার প্রিয় …. তবুও বসন্ত উজ্জ্বল চেতনার রঙে…. ভালোবাসার অপার্থিব আনন্দে।আমি যে আজও ভিজতে চাই তার ভালোবাসার ঝর্ণাধারায় ….. বসন্তের রং আমার মুখে লেগে থাক, প্রাণে নয়। মনের গভীরে শুধু ই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ দানে পরিতৃপ্তি। এই প্রাপ্তি টুকুই অনেক। সারা জীবনের অমৃতের ধন।
প্রেম ও বসন্ত
কোটি কোটি মাইল দূরের ঐ উজ্জ্বল সূর্য দিনে তাপ ছড়ায় , রাতে নৈশ রহস্যে ভরা মায়াবী চাঁদ ধরনীকে রূপকথার মতো এক অপুর্ব কল্পলোক করে তোলে ……

শিমূল পলাশের রক্তিম আভায় বসন্তের আগমনে আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটোনিনের পরিমাণ কমে যেতে থাকে এবং এবং সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন হঠাৎ বৃদ্ধি পায়.. এই রকম ব্যতিক্রমী রসায়নে এই সময়ে মানুষের মন হয়ে ওঠে প্রেমাভিলাসী.. আর বাংলার মাটি,জল,ফুল প্রকৃতি তাল মিলিয়ে প্রেমে মেতে উঠতে চায়.. সে নিঃশব্দ চরণে প্রতিটি মনেই আসে… অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব কে গুলি মেরে। তবে ওই যে তিনি বলে গেছেন ” আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়”… সেই নেশা সেই ঘোর থেকে বাস্তবের আঘাতে মানুষের মন বা মস্তিস্ক সব মনে নিতে চাইলেও তার হৃদয় তা মানতে চায় না… এই হল বসন্ত আর প্রেমের সমীকরণ।

“ওরে সাবধানী পথিক,বারেক পথ ভূলে মরো ফিরে.. ” বসন্ত যে পথ ভোলার ই ঋতু। সে ভোলা পথের প্রান্তে থাকে হারানো হিয়ার কুঞ্জ, ঝরে পড়ে গেল রক্ত কুসুমকুঞ্জ… ভুল বুঝতে পারা …..

আজ মনে হয় বসন্ত আমার জীবনে এসেছে উত্তর মহাসাগরের কূলে , আমার স্বপ্নের ফুলে সে কথা বলে অস্পষ্ট পুরাণো ভাষায় ….
এক নুতন সুরের দ্যোতনা নিয়েই আমার পথচলা।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


মিশন ইম্পসিবল ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান রিভিউ: ৬১ বছর বয়সী টম ক্রুজের আবারও অনবদ্য

উত্তরাপথঃ মিশন ইম্পসিবল দর্শকদের একটি রোমাঞ্চকর যাত্রায় নিয়ে যায়। যেখানে সিনেমাটি  তিন ঘণ্টা দেখা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও দর্শক এটি দেখতে চান। আর এটিই টম ক্রুজ এবং পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারির আসল সাফল্য।গত বছর হলিউড সুপারস্টার টম ক্রুজ 'টপ গান ম্যাভেরিক' দিয়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করার পর, এখন টম ক্রুজ এজেন্ট হান্টের চরিত্রে শক্তিশালী অ্যাকশন নিয়ে দর্শকদের সামনে এসেছেন। টম ক্রুজের 'মিশন ইম্পসিবল' ফিল্ম সিরিজের সপ্তম কিস্তি 'মিশন ইম্পসিবল- ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান' সদ্য ভারতে মুক্তি পেয়েছে । টম ক্রুজ এই ছবিতে তার জনপ্রিয় ইমেজ ধরে রেখেছেন এবং এই ছবিতে দর্শকদের অ্যাকশনের একটি বড় অংশ উপহার দিয়েছেন। মিশন ইম্পসিবল মুভিগুলি শুধুমাত্র টম ক্রুজের জন্য দেখা হয় এবং এই মুভিটি দেখা আবশ্যকও বটে৷ .....বিস্তারিত পড়ুন

সুপার পটেটোর অনুসন্ধান - বিজ্ঞানীরা আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করেছেন

উত্তরাপথঃ আলু বহু শতাব্দী ধরে রান্নার বহুমুখীতা এবং উচ্চ পুষ্টির মানের জন্য খাদ্যের একটি প্রধান উৎস। আলু আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোণে উৎপাদিত হয়, যা আলুকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ফসলগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে । বছরের পর বছর ধরে, বিজ্ঞানীরা আলুর ফলন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টি উপাদান উন্নত করার জন্য এবং আরও ভাল আলুর জাত প্রজননের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। আলুর জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করেছেন যা আলু গবেষণা এবং প্রজননে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত হবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা । .....বিস্তারিত পড়ুন

ঘোষণা হল ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞান পুরস্কার শান্তি স্বরূপ ভাটনগর প্রাপকদের নাম  

উত্তরাপথঃ এটি আশ্চর্যজনকভাবে ২০২২ সালে, প্রথমবারের মতো, বিজ্ঞানে ভারতের শীর্ষ বার্ষিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি।এক বছর স্থগিত রাখার পর, সোমবার ২০২২ সালের শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, যেখানে ১২ জন তরুণ বিজ্ঞানীকে ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞান পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।ভাটনগর পুরষ্কার, CSIR-এর প্রথম মহাপরিচালক শান্তি স্বরূপ ভাটনাগরের নামানুসারে, প্রতি বছর সাতটি বৈজ্ঞানিক শাখায় গবেষকদের অসামান্য কৃতিত্বের জন্য দেওয়া হয়। জীববিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং পৃথিবী, বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর এবং গ্রহ বিজ্ঞান - এর অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত অসামান্য গবেষকদের নির্বাচন করা হয়। পুরস্কারে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ও একটি প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। .....বিস্তারিত পড়ুন

রেলওয়ে ইউনিয়নের নতুন সূচনা, গান গেয়ে মানসিক চাপ দূর করছেন রেলের কর্মচারীরা

উত্তরাপথঃ আপনি যদি সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন, তাহলে এই খবর আপনাকে স্বস্তি দেবে।কারণ ভারতীয় রেলওয়ের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন অল ইন্ডিয়া রেলওয়েম্যানস ফেডারেশন (এআইআরএফ) এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।তারা তাদের কর্মীদের গান গেয়ে তাদের মানসিক চাপ দূর করতে পরামর্শ দিচ্ছে।    এআইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুকেশ মাথুরের নির্দেশে, জয়পুর এবং অন্যান্য শহরের কর্মচারীরা একটি মাঠে জড়ো হয় এবং সেখানে তারা গান গায় এবং আন্তাক্ষিরি খেলে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top