বিশ্বভারতী(Visva- Bharati): বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদার দিকে যাত্রা

উত্তরাপথঃ বিশ্বভারতী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি স্বপ্নের প্রকল্প যা তিনি তাঁর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরুস্কার প্রাপ্তির সমস্ত অর্থ দিয়ে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এরপর ১৯৫১ সালে সংসদের একটি আইন দ্বারা বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় গুরুত্বের একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি কবিগুরু প্রতিষ্ঠিত সেই বিশ্বভারতী ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি শুধুমাত্র বিশ্বভারতীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের অবদানকে তুলে ধরে না,বরং এটি শিক্ষা, শিল্প এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বভারতীর গুরুত্বকে তুলে ধরে।

বিশ্বভারতীর বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা অর্জনের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রথম ভারত থেকে মনোনয়নের জন্য অস্থায়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং শিক্ষাগত ক্ষেত্রে অবদানের মূল্যায়ন করা হয়।বর্তমানে সৌদি আরবে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৫তম অধিবেশনে গুরুত্বের  সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদান বিবেচনা করার পর, UNESCO বিশ্বভারতীকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে এই  অনন্য  স্বীকৃতি দিয়েছে । একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে UNESCO জানায়,’ @UNESCO #WorldHeritage List: Santiniketan, #India … Congratulations! ।

বিশ্বভারতীকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হল এটি ঐতিহ্যগত শিক্ষা পদ্ধতির (বদ্ধ ক্লাসরুম) পরিবর্তে, শিক্ষার এক নতুন পরিবেশ গড়ে তুলছে যেখানে সবুজ খোলামেলা প্রাকৃতিক শান্ত পরিবেশে বিভিন্ন পটভূমি এবং সংস্কৃতির শিক্ষার্থীরা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং শৈল্পিক বিকাশের জন্য বেড়ে উঠতে একত্রিত হয়। এই অনন্য প্রকৃতির জন্য বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস, শান্তিনিকেতন নামে পরিচিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের সৃজনশীলতার এক সুরেলা মিশ্রণ যা কবিগুরুর দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে।

বিশ্বভারতী তার সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্যের জন্যও বিখ্যাত। শিল্প, সঙ্গীত এবং সাহিত্যের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশ্বজুড়ে পণ্ডিত, শিল্পী এবং ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করেচলেছে।এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বহু ছাত্রছাত্রী আসে তাদের সৃজনশীলতা এবং  শৈল্পিক প্রতিভা বিকাশের জন্য , সেই সাথে এটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং প্রচারের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করছে । বার্ষিক পৌষ মেলা, এখানকার একটি প্রাণবন্ত উৎসব যা ফসল কাটার ঋতু উদযাপন করে এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও কারুশিল্প প্রদর্শন করে, এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচার সেই সাথে গ্রামীন কর্ম সংস্থানের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকারের প্রমাণ।

এছাড়াও, বিশ্বভারতী বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। আন্তঃবিভাগীয় অধ্যয়ন, সামগ্রিক শিক্ষা, এবং ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞানের একীকরণের উপর এর জোর আজ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের প্রজন্মকে গঠন করেছে।হলকর্ষণ উৎসব বিশ্বভারতীর গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্গঠন সামাজিক ক্ষমতায়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের উল্লেখযোগ্য প্রমান।

বিশ্বভারতীকে দেওয়া বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গর্বের বিষয় নয় বরং এই স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে আরও বহু গবেষক ও শিক্ষার্থীকে আকর্ষণ করবে, যা সাংস্কৃতি এবং শিক্ষার জগতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।আজ বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গির  এক জলন্ত প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে শিক্ষা ও শিল্প দেশীয় সংস্কৃতির সীমানা অতিক্রম করে এক  বিশ্বব্যাপী সম্প্রীতি তৈরি করেছে।  

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top