বৈদিক সংবাদঃ মৃত্যুর দেবতা যমরাজ ও ব্রাহ্মণ বালক নচিকেতার কথোপকথন এই উপনিষদের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়। 

মৈত্রেয়ী চৌধুরী (আগের সংখ্যার পরবর্তী অংশ)

মৃত্যুর অধিপতি যমরাজ সানন্দে রাজি হয়ে যান যে , আজ থেকে নচিকেতা অগ্নিবিদ্যা নামে ই  এই অগ্নিবিদ্যা স্বর্গ লোকে ও মর্ত্যলোকে প্রচলিত থাকবে।এরপর পালা আসে তৃতীয় বরের প্রসঙ্গ।

যমরাজ নচিকেতা কে বলেন, বালক তুমি তৃতীয় বর কি নেব ? নচিকেতা জানান, হে প্রভূ মৃত্যুর পর আত্মার কি হয়? কেউ বলেন আত্মার অস্তিত্ব থাকে, কেউ বলেন থাকে না। আমি আপনার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাই।

নচিকেতার এই প্রশ্নে যমরাজ বিব্রত হন, তিনি বালককে ইহজগতের যত সুখ রয়েছে, প্রত্যেকটি এক এক করে দিতে চান। নচিকেতা জানান ,প্রভূ এই সবকিছু ই তো ক্ষণস্থায়ী, আমি এইসব কিছু ই চাই না। শুধু মাত্র মৃত্যুর অমোঘ সত্য কি রয়েছে সেই প্রসঙ্গে স্বয়ং আপনার থেকেই চিরস্থায়ী  জ্ঞান লাভে আগ্রহী।

অবশেষে যমরাজ বলেন, মৃত্যু তার হয় যার জন্ম আছে, আত্মা জন্ম- মৃত্যু রহিত ,অপরিবর্তনীয় সদা বিরাজমান। দেহের নাশ হয়, কিন্তু আত্মা অবিনাশী।

হত্যাকারী যদি কাউকে হত্যা করবে বলে মনে করে এবং হত ব্যক্তি যদি নিজের মৃত্যুর ভয়ে অতঙ্কিত হন তবে বলতে হয় উভয়েই আত্মার স্বরূপ জানেন না। এই মৃত্যু নিছকই দেহের মৃত্যু।

আত্মা অতি সুক্ষ্ম। যে ব্যক্তি ইন্দ্রিয় সুখভোগে মগ্ন, আত্মা নিজেকে সেইসব মানুষের কাছ থেকে আড়াল করে রাখে, আবার যে ব্যক্তির মন শান্ত, কেবলমাত্র সেইসব ব্যক্তই আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে। চঞ্চল মন তরঙ্গায়িত হ্রদের মতো,  হ্রদের জলে তরঙ্গ থাকলে যেমন তার তলের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়, আবার তরঙ্গহীন হ্রদের শান্ত জলে একটি মুদ্রা পড়লে স্পষ্ট ই  তা দেখা যায়, আত্মার বিষয়টি ও অনেকটা তাই।

আত্মা নিরাকার হয়েও সকার, ইহ জগতের সব অনিত্য বস্তুর মধ্যে একমাত্র আত্মা ই নিত্য। যে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি এর স্বরূপ ও নিজের সাথে একাত্মতা অনুভব করতে পারেন একমাত্র সে ব্যক্ত শোক দুঃখ অতিক্রম করতে পারেন।

আত্মার স্বরূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।জীবাত্মা ও পরমাত্মা। জীবাত্মা রূপে আত্মা নিজের ভূমিকা পালন করেন। তিনি কর্ম করেন আর সেই কারণে তিনি কর্মফল ও ভোগ করেন।আর পরমাত্মা আছেন বলেই জীবাত্মার পক্ষে কর্ম করা  সম্ভব হয়। জীবাত্মা ও পরমাত্মা আলো ছায়ার মতো অবস্থান করেন, তবে পরমাত্মা কোন কর্ম করেন না।

জীবাত্মা কে রথের সারথি বলা হয়। দেহ, মন, বুদ্ধি র সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে এই উপমা। পরমাত্মা বলতে শরীর, যা রথ।সারথী যদি সুশিক্ষিত হন তবেই রথে থাকে ইন্দ্রিয় সংযম ।তাতে আত্মজ্ঞান লাভ করা সম্ভব হয়।

অপরপক্ষে যিনি উচিত অনুচিতের বিচার করে কাজ করতে পারেন না, তাঁর বুদ্ধি অপরিণত, মনকেও সংযত করতে তিনি ব্যর্থ। তিনি তাঁর নিজের প্রভু নন, মনের ক্রীতদাস।ফলে তিনি এমন সব বস্তুর দিকে ছোটেন যা আধ্যাত্মিক উন্নতির পক্ষে ক্ষতিকর। ইন্দ্রিয়সুখের বাসনা তাঁকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছে। অতএব জন্মমৃত্যুর চক্রে বদ্ধ হওয়ায় তার নিয়তি।

আত্মতত্ত্ব জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির আত্মা জন্মমৃত্যু রহিত হয়ে ব্রহ্মলোকে অবস্থান করেন আর  ইন্দ্রিয় সুখ ভোগে তৃপ্ত আত্মা বারবার দেহের গুহায় অবস্থান করে।পৌরাণিক গল্প: দর্শন মাত্রই উপেক্ষা করা উচিত নয় ………

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top