ভারত কি নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে ?

উত্তরাপথ

সম্প্রতি কিছু বিচ্ছিন্ন চিত্র সামনে এল! আমরা সত্যই কি একটি নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতবর্ষে ডিজিটাল পেমেন্ট উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্রমাগত উৎসাহ দান এবং মোবাইল পেমেন্টের সহজ লভ্যতা ভারতীয়দের জন্য নগদহীন লেনদেন গ্রহণ করা আগের চেয়ে সহজ করে তুলেছে।

২০১৬  সালে, ভারত সরকার উচ্চ-মূল্যের কারেন্সি নোটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।সেই সময় এই পদক্ষেপটি দুর্নীতি এবং কালো টাকা রোধ করার লক্ষ্যে ছিল, তবে সেই পদক্ষেপ পরোক্ষ ভাবে ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করেছিল। সেই সময় বাজারে নগদের সরবরাহ কম থাকায়, অনেক লোক কেনাকাটা করতে মোবাইল পেমেন্ট এবং ডিজিটাল ওয়ালেটের দিকে ঝুঁকেছিল।

ডিমোনেটাইজেশন থেকে কোভিদ মহামারি  Paytm, PhonePe এবং Google Pay-এর মতো ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। । এই প্ল্যাটফর্মগুলি মোবাইল রিচার্জ , বিল পেমেন্ট থেকে শুরু করে অনলাইন শপিং পর্যন্ত বিভিন্ন পরিষেবা অফার করে৷।বর্তমানে এই ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মগুলি মানুষের জন্য নগদহীন লেনদেন করা সহজ করে তুলেছে এবং ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতির বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে।

অন্যদিকে ভারত সরকার ডিজিটাল পেমেন্টের প্রচারের জন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে একটি রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছিল যা ব্যবহারকারীদের একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের  অর্থ স্থানান্তর করতে দেয়।এছাড়াও সরকার ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহ দেবার জন্রকা যারা ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তাদের ক্যাশব্যাক অফার, ট্যাক্স সুবিধা সহ একাধিক সুবিধা দিচ্ছে।

ভারতে ক্যাশলেস পেমেন্ট বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হল ইন্টারনেটের সহজ লভ্যতা ।এখন স্মার্টফোন এবং মোবাইল ডেটা প্রতিটি মানুষের হাতে । এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করে এখন ডিজিটাল পেমেন্ট করা সহজ হয়ে উঠেছে । আজ কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র মানুষ সুবিধার কথা ভেবে নগদহীন লেনদেনকে আপন করে নিয়েছে।

যদিও নগদবিহীন অর্থনীতির দিকে ভারতের পদক্ষেপ অনেকাংশে ইতিবাচক, তবু এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা মোকাবেলা করা দরকার। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হল গ্রামীণ এলাকায় পরিকাঠামোর অভাব, যেখানে এখনও অনেক লোক নগদ লেনদেনের উপর নির্ভর করে। ডিজিটাল অর্থপ্রদানের বিষয়ে আরও বেশি সচেতনতা এবং শিক্ষার প্রয়োজন, বিশেষ করে বয়স্ক এবং কম প্রযুক্তি-সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ধীরে ধীরে নগদহীন অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হওয়া আমাদের দেশের আর্থিক বৃদ্ধির জন্য এক বড় সুযোগ। ডিজিটাল লেন-দেন কর ফাঁকি সহ একাধিক আর্থিক দুর্নীতি কম করতে সাহায্য  করে যা ধীরে ধীরে  ভারতকে  একটি নগদহীন সমাজে পরিণত করার পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top