প্রিয়াঙ্কা দত্ত, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
শিল্পী: অভিপ্সা চ্যাটার্জি
আজকাল মানসিক চাপ, হতাশা এসব শব্দগুলো বহুল প্রচলিত। প্রায় প্রতিটা মানুষই এখন এর শিকার। আর তাই তার থেকে মুক্তি পেতেও উদ্ভাবন হচ্ছে নিত্য নতুন পন্থা। সেরকমই এক সম্প্রতিকতম পন্থা হলো, ম্যান্ডেলা আর্ট। হ্যাঁ, এই শিল্পরীতিও তো এখন বহুল প্রচলিত। খাতায়-কলমে বা ডিজিটাল পেইন্টিং এর ক্ষেত্রে এই কারুকলার এখন ব্যাপক প্রসার। অথচ এই দুই বিষয় কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সভ্যতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।
সংস্কৃত ‘মণ্ডল’ শব্দের অর্থ বৃত্ত, যা থেকে বর্তমানে ম্যান্ডেলা শব্দটির উৎপত্তি। আনুমানিক খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে বৌদ্ধ ধর্মের সেবায় মন্ডল তৈরি করা হয়েছিল। ভারত, নেপাল, চীন, তিব্বত, জাপান, ভুটান প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের সঙ্গে অবধারিত ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই শিল্পরীতিও।
বিভিন্ন প্রতীকের এক ধরনের জ্যামিতিক বিন্যাস হলো ম্যান্ডেলা আর্ট। এই চিত্রকলা বিভিন্ন ধর্মে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এতো ভিন্ন ভিন্ন রূপে উপস্থাপিত হয়ে এসেছে, যে তা ভাবলে অবাক হতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিল্পটি দর্শনার্থীর চিন্তাভাবনার প্রতিফলন হিসেবে উপস্থাপিত হয়। বিভিন্ন আধ্যাত্মিক পরম্পরা পথপ্রদর্শক হিসেবে, শিল্প ও স্থাপত্যে, মানসিক শান্তি লাভে, মন সংযোগ বৃদ্ধিতে বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ উন্মোচনে এই ম্যান্ডেলা আর্টের বিশেষ ভূমিকা আছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ফাইলোজেনেটিক্স এ এই ধরনের ম্যান্ডেলাকৃতি চিত্রের ব্যবহার দেখা যায়।
প্রতিটি ম্যান্ডেলা আলাদা আলাদা ধাঁচের হয়। প্রতিটির নক্সা বা রঙ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। জ্যামিতিক, আর্কিটেকচারাল, কসমোলজিকাল প্রভৃতি হরেক কিসমের চিত্র আছে। প্রত্যেকের নির্মান শৈলী একে অপরের থেকে পৃথক। এর বৈচিত্রের নাগাল পাওয়া মুশকিল।
শুধুমাত্র এশিয়ার মধ্যেই এর বিস্তার থেমে থাকে নি। মায়া সভ্যতা থেকে শুরু করে পারসিক, ইসাই ধর্মে এমনকি আধুনিক আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশে গুলিতেও এর প্রয়োগ দেখলে অবাক হতে হয়।
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা মন্ডলকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত হয় মনোবিজ্ঞানী কার্ল গুস্তাব ইয়ং এর হাত ধরে। তিনি এই আর্টকে অবচেতন মনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, ম্যান্ডেলা আর্ট মানসিক চাপ, রক্তচাপ, হতাশা ও অস্থিরতা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি, ভালো নিদ্রা কারক বা সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতেও খুবই কার্যকরী। সবথেকে বড় কথা বিভিন্ন ধরনের নেশা মুক্তির উপায় হিসেবেও এর সফলতা প্রমাণিত। বর্তমান যুগে মোবাইলের নেশা কাটানোর উপায় হিসেবেও এই শিল্পরীতে সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে। কী বলুন?
যে কেউ প্রতিদিন কুড়ি মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে এই আর্ট অভ্যাস করলে এর প্রভাব বুঝতে পারবেন। তবে কি কেবল যারা আঁকতে পারেন তারাই সুবিধা পাবেন? তা কিন্তু নয়। বর্তমানে যে কেউ চাইলেই বিভিন্ন ডিজাইনের বই বা অ্যাপে ম্যান্ডেলা চিত্র আঁকতে পারবেন। এই থেরাপির ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী মানতে পারলে ফল আরো ভালো হবে। যেমন নিস্তব্ধ বা নিরিবিলি স্থান নির্বাচন করা, আঁকা শুরু করার আগে মানসিক অবস্থার স্থিতি পরিমাপ করা, মনকে ও শরীরকে এই কাজের জন্য উদ্দীপিত ও প্রস্তুত করা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে নিজের মনকে মুক্ত করার চেষ্টা করা এবং মনোযোগ দিয়ে ম্যান্ডেলারটির প্রতিটা নকশা শেষ করা। তারপর আরাম করে পরবর্তী মানসিক অবস্থার বিচার করা ইত্যাদি। এইভাবে ধীরে ধীরে অভ্যাসের ফলে মন অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে। মন আলোকিত ও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশী বিদেশী সংস্থা মেন্ডেলা চিত্রকলা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব যথেষ্ট যত্ন সহকারে পালন করছে। বিভিন্ন কর্মশালা বা অনুশীলন কেন্দ্রের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাপনাকে তারা ছড়িয়েও দিচ্ছে । অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সংস্কৃতি হয়ে উঠছে আধুনিক সভ্যতার রক্ষা কবচ।
আরও পড়ুন
নেটফ্লিক্স-এ হিট নাটক 'অভয়ারণ্য' সুমো জগতের আভাস দেয়
স্যাংচুয়ারি”, একটি নেটফ্লিক্সের মূল নাটকের সিরিজ, একটি সুমো কুস্তিগীর থেকে একজন উত্তেজিত যুবকের পরিবর্তনকে দেখানো হয়েছে, যিনি ঐতিহ্যবাহী জাপানি কুস্তির জগতে খ্যাতি অর্জন করেছেন।আট-পর্বের নাটকটি একটি আন্ডারডগ গল্প যা স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের চরিত্রগুলিকে সমন্বিত করে, সুমো জগতের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। “এটি এমন একটি নাটক যেখানে অভিনেতারা তাদের গল্প প্রকাশ করার জন্য তাদের শারীরিকতা ব্যবহার করেছে ;এটি এমন একটি গল্প যা আগে কখনো বলা হয়নি,” বলেছেন সিরিজের পরিচালক কান এগুচি। .....বিস্তারিত পড়ুন
আগামী ৩ বছরে শূন্য বর্জ্য হওয়ার পথে রাজস্থানের প্রথম গ্রাম
উত্তরাপথঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় আঁধি গ্রামে এই পরিবর্তন করা হচ্ছে।জয়পুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আন্ধি গ্রাম।আগামী তিন বছরে এই গ্রাম শূন্য বর্জ্য হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।আন্ধি গ্রামের এই সম্পূর্ণ রূপান্তরটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি সবুজ প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ ব্যবহার করে আন্ধি গ্রামকে জিরো ওয়েস্ট মডেলে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে । এই প্রকল্পটি ২১ মার্চ ২০২২ এ শুরু হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ গ্রামের অবস্থা আগে খুবই খারাপ ছিল।আগে এই গ্রামের লোকেদের কঠিন বর্জ্য আলাদা করার কোনও ধারনা ছিল না । .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্ব মানবতার আলোয় যৌবনের পূজারী নজরুল
অসীম পাঠকঃ জীবনের প্রয়োজনে যুগের পরিবর্তন যেমন সত্য তেমনি যুগের প্রয়োজনে জীবনের আবির্ভাব অমোঘ। এই বাস্তব সত্যটিকে আরও গভীর ভাবে উপলব্ধি করার কাল এসেছে। তারই অভ্যাস অনুরণিত হচ্ছে দিকে দিকে। সর্বত্র আলোড়ন উঠেছে বিদ্রোহী কবির জীবন দর্শন নিয়ে , তাঁর আগুন ঝরা কবিতা নিয়ে। সর্বহারার কবি নজরুল ইসলাম। যারা বঞ্চিত অবহেলিত , নিপীড়ন আর শোষণের জ্বালা যাদের বুকে ধিকি ধিকি জ্বলে বুকেই জুড়িয়ে যাচ্ছিল দাহ, তাদের মূক বেদনার ভাষা দিয়েছিলেন নজরুল।পদদলিত পরাধীন জাতির বুকে স্বাধীনতার তৃষ্ণা জাগিয়েই তিনি শান্ত থাকেননি , দেশের সমাজের বুক থেকে মানুষে মানুষে বিভেদ ব্যাবধান দূর করবার ব্রত ও গ্রহন করেছিলেন। তিনিই প্রথম কবি যিনি সমাজের সমাজপতি দের ছলনার .....বিস্তারিত পড়ুন
রেলওয়ে ইউনিয়নের নতুন সূচনা, গান গেয়ে মানসিক চাপ দূর করছেন রেলের কর্মচারীরা
উত্তরাপথঃ আপনি যদি সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন, তাহলে এই খবর আপনাকে স্বস্তি দেবে।কারণ ভারতীয় রেলওয়ের বৃহত্তম শ্রমিক সংগঠন অল ইন্ডিয়া রেলওয়েম্যানস ফেডারেশন (এআইআরএফ) এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।তারা তাদের কর্মীদের গান গেয়ে তাদের মানসিক চাপ দূর করতে পরামর্শ দিচ্ছে। এআইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুকেশ মাথুরের নির্দেশে, জয়পুর এবং অন্যান্য শহরের কর্মচারীরা একটি মাঠে জড়ো হয় এবং সেখানে তারা গান গায় এবং আন্তাক্ষিরি খেলে। .....বিস্তারিত পড়ুন