যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষও আমি

ড. জীবনকুমার সরকার

৭ এপ্রিল ২০২৩ প্রয়াত হলেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষ। তাঁর প্রয়াণে দেশ ভারাক্রান্ত। যুক্তিবাদীরা চরম মর্মাহত। আমিও। তাঁর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলাম সে এক ইতিহাস। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পাস করে গাজোল হাইস্কুলে সবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। নতুন বইয়ের মধ্যে ডুবে আছি। আর নিয়মিত ক্লাস করছি। এইভাবে পুজোর ছুটি এসে যায়। পুজোর ছুটির আগের দিন অর্থাৎ যেদিন স্কুল হয়ে এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল, সেইদিন আমি আর রাজেন লাইব্রেরীতে যাই। রাজেন আমার ছাত্রজীবনের সেরা বন্ধু। দুজনে কী বই নেবো, কী ধরনের বই নিয়ে এক মাসের ছুটিতে পড়বো —— এইসব ভাবছি আর বই ঘাটছি।

এমন সময় আমার নজরে আসে অদ্ভুত প্রচ্ছদ চিত্র ওয়ালা একটি বই। যেখানে একটি মরা মাথার খুলি সিগারেট খাচ্ছে। বইটির নাম ’অলৌকিক নয়, লৌকিক’ দ্বিতীয় খণ্ড। লেখক প্রবীর ঘোষ।

রাজেনকে বললাম, শোন, তাহলে এই বইটি লাইব্রেরির কার্ডে তুলে নিই। জানা যাবে ভূতের গল্প কেমন হয়। তার আগে আমি শরৎচন্দ্রের প্রায় একশটি গল্প পড়ে ফেলেছি। অন্যদেরও কিছু কিছু পড়েছি। শরৎচন্দ্রের ’রামের সুমতি’ পড়ে কেঁদে ফেলার ঘটনা আমার আজও অবাক করে। এসবের বাইরে প্রবীর ঘোষের বইটি পড়ে ভূতের গল্প কেমন হয়, ভেবে বইটি তুলে ব্যাগে ভরে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরি।

বইটি পড়তে শুরু করেই দেখলাম এটা ভূতের গল্প নয়, ভূত তাড়ানোর গল্প। আর আমাকে পায় কে? জীবনে এমন একটি বইয়ের খুব দরকার ছিলো। ছোটোবেলা থেকে বাবার কাছে ভূত বিরোধী অনেক কথা শুনেছি। বাবা কুসংস্কার মানতেন না কোনোদিন। বিজ্ঞানচেতনামূলক বাবার সেসব কথায় ভূতের ভয় তবু যেতো শৈশবে। কারণ, বাড়ির সবাই ভূত মানত বাবা ছাড়া। বাবা সারাজীবন ছাত্র পড়িয়েছেন। নানা ধরনের বই পড়তেন। বাবা আজও অবিরাম বই পড়েন। আমি বাবার সাথে এই কাজে আজও পারি না কেমন যেনো। বাবার উজ্জ্বল অসাম্প্রায়িক চিন্তাচেতনা আমার কাছে একটা গৌরবের বিষয়। আসলে অসাম্প্রদায়িকতার পাঠ বাবার কাছেই প্রথম পেয়েছিলাম। সেটা পরে ফুলেফলে আরও বিকশিত হয়েছে।

পুজোর ছুটি শেষ হবার অনেক আগেই ’অলৌকিক নয়, লৌকিক দ্বিতীয় খণ্ড’ শেষ করে ফেলি। তারপর খুব আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে বইটি নিয়ে যাই মদনমোহন বিশ্বাসের কাছে। তার কাছে নিয়ে যাবার অর্থ হলো, তিনি কঠোর আম্বেদকরবাদী মানুষ। তাঁর কাছ থেকেই ছোটো ছোটো চটি বই পড়ে আম্বেদকরকে প্রথম জানার সুযোগ হয় আমার। আমার মতো অনেককেই উনি আম্বেদকরের বই পড়তে দিতেন। আমাদের মাশলদিঘি গ্রামে মদনমোহন বিশ্বাস একটা আলো। একটা প্রদীপ। মাশলদিঘি গ্রামে নয় কেবল, গোটা গাজোল জুড়ে আম্বেদকরবাদী হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিলো বেশ। তিনি না থাকলে আমি আম্বেদকর সম্পর্কে ওই বয়সে জানতে পারতাম না এত তাড়াতাড়ি। তাই প্রবীর ঘোষের বইটি নিয়ে তাঁকে দিই, যাতে আম্বেদকর দর্শনের সঙ্গে যুক্তিবাদী আন্দোলনের একটা সমন্বয় গড়ে ওঠে।

মদনমোহন বিশ্বাস বইটি পড়ে নিরঞ্জন মণ্ডলকে পড়তে দিয়েছিলেন। নিরঞ্জন মণ্ডল পড়ে নিয়ে আবার দিয়েছিলেন সুনীলকুমার রায়কে। বইটি তারপর আমাদের গ্রামে কিছুদিন ঘুরতে লাগলো এভাবে। ইতিমধ্যে আমি উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢুকি। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই প্রবীর ঘোষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ’ ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র একটি শাখা সংগঠন খোলার। এই মর্মে প্রবীর ঘোষের সঙ্গে ফোনে কথা বলি এবং চিঠি চালাচালি করি। অবশেষে মাশালদিঘিতে শাখা সংগঠন খোলার অনুমতিপত্র আসে প্রবীর ঘোষের স্বাক্ষর সম্বলিত। সেই দলিলটি আজও অক্ষত আছে। আর কত যে স্মৃতি আছে, তার হিসেব নেই। এত বছর পর লিখতে হচ্ছে বলে সবকিছু মনে পড়ছে না হয়তো।

শাখা সংগঠন খোলার ঐতিহাসিক অনুমতিপত্র তো এলো। সংগঠনও খুললো। আমাকে করা হলো মাশলদিঘি শাখার সম্পাদক। সভাপতি হলেন নিরঞ্জন মণ্ডল। মদনমোহন বিশ্বাস হলেন কোষাধ্যক্ষ। গ্রামে সুনীলকুমার রায়ের প্রভাব আছে বলে আমরা তাকে উপদেষ্টা হিসাবে রাখলাম। আর কয়েকজন ছিলো সদস্য। খুব সম্ভবত প্রথম দিকে আমরা ১০/১২ জনের মতো ছিলাম। পড়ে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২৫/৩০ জনের মতো। সমস্যা হলো, নিরীশ্বরবাদী এমন বিজ্ঞানচেতনা নির্ভর সংগনের কাজ মাশলদিঘির মতো পিছিয়ে পড়া একটি গ্রামে কীভাবে করা সম্ভব? প্রতি পদে পদে সমস্যা আর প্রতিবন্ধকতা। তবু আমরা মাঠে নামলাম সাহস করে। শুরু হলো মাসিক সভা। প্রতি মাসের শেষ রবিবার করে সভা অনুষ্ঠিত করতাম মাশালদিঘি বাজারের মধ্যে। বটতলায়। আমার ছোটো মামার দোকানে। মালদা জেলার অখ্যাত এই গ্রামে সেদিন সূচিত হলো এক ইতিহাস। জেলায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে মাশিদিঘি গ্রাম যে ভূমিকা নিয়েছিল সেদিন, তা সত্যিই অবাক করে দেবার মতো ঘটনা।

বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের কাজ শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই গাজোল থেকে এসে মাশালদিঘি শাখায় যোগ দিলেন সুবোধ সূত্রধর, অনিমেষ দাস, হরষিত বিশ্বাস প্রমুখরা। সদস্য দিন দিন বেড়ে যাবার ফলে আমরা কিছুটা সাহসী ও শক্তিশালী হলাম। এর মধ্যে আর একটি কথা বলে রাখা দরকার, যুক্তিবাদী আন্দোলনে সুবোধ সূত্রধরের কথা সহজে ভোলার নয়। তিনি সাহসী এবং প্রচণ্ড উদ্যোগী। কাজ শুরু করার পর গ্রামে দিনরাত আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালাতে লাগলো ধর্মান্ধ আর অজ্ঞরা। মাশলদিঘি গ্রাম আর আমাদের কথা তখন গাজোলের চতুর্দিকে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষকে মাশলদিঘি এনে ’অলৌকিক নয়, লৌকিক’ নামক অনুষ্ঠানটি করাবো। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাশলদিঘিতে অনুষ্ঠান করতে আসেন প্রবীর ঘোষ। তার আগে মাশলদিঘি শাখার পক্ষে আমি আর পাঁচকড়ি মণ্ডল কলকাতা যাই সশরীরে প্রবীর ঘোষকে আমন্ত্রণ করতে। দেবী নিবাস রোডের বাড়িতে সেদিন তিনি আমাদের দুজনকে নিজের হাতে চা করে খাইয়েছিলেন। সেটা একটা বড়ো পাওয়া ছিলো জীবনে।

১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি দিন ঠিক হলো’ অলৌকিক নয়, লৌকিক’ অনুষ্ঠানের। জায়গা ঠিক করলাম আমরা মাশলদিঘি হাইস্কুল। প্রবীর ঘোষ এলেন। মালদা স্টেশন থেকে সোজা আমাদের গ্রামে। প্রথমেই তাঁকে নিয়ে আমরা একটি বিজ্ঞানচেতনা মূলক ও যুক্তিবাদী রেলি বের করে গোটা গ্রাম ঘুরলাম। তারপর দুপুরে মশালদিঘি হাইস্কুলের একটি ঘরে শুরু হলো ’ অলৌকিক নয়, লৌকিক’ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। কত মানুষ! শিক্ষক, চিকিৎসক সহ নানা পেশার মানুষ এবং এলাকার সাধারণ মানুষ। অনুষ্ঠান চলাকালীন ধর্মান্ধরা নানাভাবে অনুষ্ঠান বানচাল করার চেষ্টা করছিল। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শেষ করে আমরা দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু করেছি কেবল, এমন সময় সুনীলকুমার রায়ের বাড়ি খবর আসে মশালদিঘি বাসস্ট্যান্ডে আমাদের অতিথিদের ওপর হামলা করেছে একদল ধর্মান্ধ দুষ্কৃতি ও সমাজবিরোধী। দুঃখজনক এই সংবাদ শুনে সুনীলকুমার রায় সদলবলে ধর্মান্ধদের প্রতিরোধ করতে যান। বাসস্ট্যান্ডের ওপর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। গাজোল থানার পুলিশ এসে ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির মাথাকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যান। সেদিনের এই ঘটনায় সুনীলকুমার রায়ের ভূমিকা দেখে আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায় উনার ওপর। নিরঞ্জন মণ্ডলের পরিবারের ভূমিকাও ছিলো বেশ ভালো। তাঁর প্রভাবও কম ছিলো না সেদিন। আমি বরং ভয়ে কুঁকড়ে যাই। আর প্রবীর ঘোষের সম্মান কী করে রক্ষা করা যায়, তাই ভাবতে থাকি। অনেক রাতে থানায় দুপক্ষের মীমাংসা হয়। না হলে ওই মৌলবাদী দুষ্কৃতির জেল নাকি নিশ্চিত ছিলো। প্রবীর ঘোষ ওই দিন রাতেই কলকাতা চলে যান। বিষয়টি নিয়ে পরের দিন খবরের কাগজগুলিতে গুরুত্ব সহকারে খবর প্রকাশিত হয়।

এরপরও আমরা দমে যাইনি। আমাদের সংগঠন লাগাতার কাজ চালিয়ে গেছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ আমাদের মশালদিঘি শাখা সংগঠনটি ২০০২ সালে ভারতের শ্রেষ্ঠ শাখা হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। সর্বভারতীয় এই স্বীকৃত আজও মশালদিঘি মদনমোহন বিশ্বাসের কাছে জমা আছে। এই স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গ্রামের নাম পৌঁছে যায় সারা দেশের যুক্তিবাদীদের কাছে। এরপরের ঘটনা সংগঠন ভাঙনের ঘটনা। উচ্চ শিক্ষার জন্য আমি চলে যাই বাইরে। ফলে মশালদিঘি শাখার সম্পাদক থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলে সভাপতি নিরঞ্জন মণ্ডল খুব পীড়াপিড়ি করেন অব্যাহতি না নেবার জন্য। ছেড়ে দিতে আমারও কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কোনো উপায় ছিলো না। আমি ছেড়ে যাবার পর গাজোলের সুবোধ সূত্রধরের নেতৃত্বে গোজোল শাখা সংগঠন গড়ে ওঠে। সেখানেও প্রবীর ঘোষ আসেন। দাপিয়ে অনুষ্ঠান করেন

প্রবীর ঘোষের ’অলৌকিক নয়, লৌকিক’ দ্বিতীয় খণ্ড বইটি আমার জীবনকে আমূল পাল্টে দেয় এবং যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষ নামক এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। এরপর প্রবীর ঘোষের সব বই আমি সংগ্রহ করি এবং পড়ি। যত পড়েছি তত মুগ্ধ হয়েছি। তবে আমার ভালো লেগেছে ব্যক্তি প্রবীর ঘোষ থেকে যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষকে। ব্যক্তি প্রবীর ঘোষের আচার- ব্যবহার আমার কোনোদিন ভালো লাগেনি তেমন। এই নিয়ে গাজোলের ব্লক কমিউনিটি চত্বরে ধরণীধর সরকার সভা ঘরে একবার প্রবীর ঘোষের সঙ্গে আমার তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। সে স্মৃতি আজও ভুলিনি। তবু প্রবীর ঘোষ আমার প্রণম্য। মাঝে মাঝে কলকাতা বইমেলায় দেখা হতো। কথা হতো। সুতরাং, তিনি চলে গেলেও আমার ভেতরে রয়ে গেছেন। আজ নতুন মোড়কে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মকে যেভাবে মানুষের মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে, তাতে আমরা বিপন্ন বোধ করছি। প্রবীর ঘোষকে আরও বেশি বেশি করে মনে পড়ছে। আমি তাঁর বইয়ের কাছে ছুটছি। বাঁচার জন্য তাঁকে আরও কাছে টানছি।

৭ এপ্রিল ২০২৩ তিনি চলে যান। খবরটি শুনে এত কষ্ট পেলাম, যা ভাবার নয়। ভারতের মতো ধর্মান্ধতায় পরিপূর্ণ নরকভূমিতে প্রবীর ঘোষের মতো যুক্তিবাদী বিজ্ঞানীর চলে যাওয়া মানে বিরাট ক্ষতি। ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতবর্ষে জাতপাত আর ধর্মীয় কুসংস্কারে আজও মানুষ বুঁদ হয়ে আছে। ধর্মান্ধ এদেশে বিজ্ঞান পড়েও লোকে জলপড়া খায়, ওঝার কাছে যায়, ডাক্তার হয়েও জ্যোতিষ শাস্ত্র বিশ্বাস করে, হাতে পাথর ধারণ করে, মাদুলি পরে, শনির কাছে প্রার্থনা করে, মাজারে মোমবাতি জ্বালায়, আরও কত কী যে করে তার ঠিক নেই। হাজার হাজার বছরের পুরনো ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, জাতি বিদ্বেষ, বর্ণঘৃণা, নারী নির্যাতন সবকিছুর মূলে রয়েছে ওই কাল্পনিক ধর্ম আর তার প্রচারকরা। এদের বিরদ্ধে প্রবীর ঘোষ আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মানবতার এত বড়ো যোদ্ধা ভারতে বিরল ছিলো। স্বঘোষিত বহু ধর্মগুরুদের তিনি মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন। আমরা যারা মার্কসবাদ এবং আম্বেদকরবাদ নিয়ে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখি, তাদের কাছে প্রবীর ঘোষের যুক্তিবাদী আন্দোলন বিশল্যকরণী। প্রবীর ঘোষকে হারিয়ে আমার মতো অনেকেই পিতৃহারা হলেন। আসলে প্রবীর ঘোষের মতো যুক্তিবাদী নেতার কোনো মৃত্যু নেই। তিনি আছেন, থাকবেন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


জাপানী বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত এই নতুন প্লাস্টিক আর পরিবেশের জন্য হানিকর নয়

উত্তরাপথঃ জাপানের RIKEN সেন্টার ফর এমার্জিং ম্যাটার সায়েন্স (CEMS)-এর Takujo Ida নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী প্লাস্টিক তৈরি করেছেন যা একদিকে যেমন শক্তিশালী ,সেইসাথে পরিবেশ-বান্ধব উভয়ই। এই নতুন উপাদানটি শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী প্লাস্টিকের স্থায়িত্বের সাথে মেলে না বরং এটি বায়োডিগ্রেডেবল এবং সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। মাইক্রোপ্লাস্টিক, প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র টুকরা, সমুদ্র এবং মাটিতে জমা হয়, অবশেষে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করে। গবেষণার ফলাফল ২২ নভেম্বর ‘সাইন্স’জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছে। ঐতিহ্যগত প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প বিকাশের প্রচেষ্টা, দীর্ঘদিন ধরে চলছে যা অ-বায়োডিগ্রেডেবল এবং পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক হবে না বছরের পর বছর ধরে চলছে। বায়োডিগ্রেডেবল এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিদ্যমান প্লাস্টিকগুলি ইতিমধ্যেই, একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এই কণাগুলি সামুদ্রিক জীবনের ক্ষতি করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। উপাদানগুলির মধ্যে অনেকগুলি, যেমন পিএলএ, সমুদ্রের পরিবেশে ক্ষয় করতে ব্যর্থ হয় কারণ তারা জলে দ্রবণীয়। এই সীমাবদ্ধতা মাইক্রোপ্লাস্টিকস-৫ মিমি-এর চেয়ে ছোট ছোট টুকরোগুলিকে-সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে টিকে থাকতে দেয়। উদ্ভাবনী তাদের নতুন গবেষণায়, আইডা (Takujo Ida )এবং তার দল সুপারমোলিকুলার প্লাস্টিকের সাহায্যে এই সমস্যাটি সমাধান করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। নতুন প্লাস্টিক দুটি আয়নিক মনোমারকে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছিল যা ক্রস-লিঙ্কযুক্ত লবণ সেতু তৈরি করে, যা শক্তি এবং নমনীয়তা প্রদান করে। প্রাথমিক পরীক্ষায়, মনোমারগুলির মধ্যে একটি ছিল সোডিয়াম হেক্সামেটাফসফেট নামক একটি সাধারণ খাদ্য .....বিস্তারিত পড়ুন

তাজমহল সম্পর্কে নানা রকম অজানা তথ্য

উত্তরাপথঃ তাজমহল হল, আগ্রায় অবস্থিত একটি সাদা মার্বেল সমাধি, যা অনন্ত প্রেমের প্রতীক' হিসাবে আজও আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে।মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে তৈরি করেছিলেন। নিশ্ছিদ্র সৌন্দর্য বিকিরণকারী, সাদা মার্বেল সমাধিটি ভারতের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্থান। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক পরিদর্শন করেন। প্রেমের প্রতীক এবং মুঘল স্থাপত্যের মাস্টারপিস ভারতের এই অন্যতম আইকনিক এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তাজমহলকে, ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়,সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য আচ্ছাদিত করা হয়েছিল।প্রসঙ্গত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়, তাজমহল আক্রমণ বা ক্ষতির লক্ষ্য হতে পারে বলে উদ্বেগ ছিল। এই ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ রক্ষার জন্য, ভারত সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তাজমহলকে পাটের তন্তু দিয়ে ১৫ দিনের জন্য ঢেকে দেয়। সেইসাথে ডালপালা এবং ঝোপ লাগিয়ে এটিকে বনের মতো চেহারা দেওয়া হয়েছিল যাতে আকাশ থেকে ভবনটি দেখা না যায়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও তাজমহলকে বাঁশ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। এই সমাধানটি সেই সময় কার্যকর প্রমাণিত হয় এবং তাজমহল ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরও অক্ষত অবস্থায় থাকে। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খেরিয়া রানওয়ের কাছে এবং কীথামে পাকিস্তানি বিমান বোমা বর্ষণ করে এবং রানওয়ের কাছে একটি গভীর গর্ত তৈরি হয় । এরপর তড়িঘড়ি তাজমহলকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।এসকে শর্মা (অবসরপ্রাপ্ত), যিনি তাজমহলের তৎকালীন সংরক্ষণ সহকারী ছিলেন, তিনি এক জায়গায় বলেন, যে ৪ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছিল। বিকেলে আদেশ আসতেই তাজমহল ঢেকে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। অধিদপ্তরের কাছে পাওয়া চটটি সবুজ রঙ করা হয়েছিল এবং একই দিনে গম্বুজে ঝুলানো হয়েছিল। এছাড়াও, তাঁবু মালিকদের কাছ থেকে তেরপল অর্ডার করা হয়েছিল এবং বাজার থেকে পুরানো কাপড় কেনা হয়েছিল। এটিও সবুজ রং করা হয়েছিল এবং স্মৃতিস্তম্ভটি আচ্ছাদিত ছিল। । .....বিস্তারিত পড়ুন

কেন নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়?

উত্তরাপথঃ নদীগুলি প্রাকৃতিকভাবে স্থানান্তরিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে স্থানান্তরিত হয়, কিন্তু যখন একটি নদী হঠাৎ গতিপথ পরিবর্তন করে, তখন এটি বিপর্যয়কর বন্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে যা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসীন্দাদের খেত ও বাড়িঘরকে ধ্বংস করে।কয়েক দশক ধরে, বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কেন নদীগুলি হঠাৎ তাদের পুরাতন গতিপথ পরিত্যাগ করে এবং নতুন পথ তৈরি করে। নেচার -এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা উত্তর প্রদান করতে গিয়ে, দুটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন যা এই আকস্মিক পরিবর্তন ঘটাতে একসঙ্গে কাজ করে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির সেডিমেন্টোলজিস্ট ডগলাস এডমন্ডস বলেছেন, "এই বন্যা সভ্যতা-পরিবর্তনকারী হতে পারে।" উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের সিন্ধু নদীতে ২০১০ সালের একটি আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করেছিল যা প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। তবুও, বর্তমান বন্যার মডেলগুলি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না যে নদীগুলি কোথায় যেতে পারে। "এটি একটি অদৃশ্য বিপদ," এডমন্ডস যোগ করেন। কেন নদী গতিপথ পরিবর্তন করে? নদীগুলি গতিপথ পরিবর্তন করে, বা "আভালস", যখন দুটি শর্ত পূরণ হয়: একটি সেটআপ এবং অন্য একটি ট্রিগার৷ সেটআপ হল কিভাবে পলি যা সময়ের সাথে তৈরি হয়, একটি নদীকে পুনরায় রুট পরিবর্তন করার শর্ত তৈরি করে। ট্রিগার হল একটি আকস্মিক ঘটনা, যেমন বন্যা, ভূমিকম্প বা লোগজ্যাম, যা নদীকে বাধ্য করে রুট পরিবর্তন করতে।যদিও নদীগুলিতে সর্বদা বন্যার প্রবণতা থাকে, তবে নদীতে ভাঙ্গন কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। নদীতে ভাঙ্গন কখন এবং কোথায় ঘটতে পারে তা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য বিবদমান নদীর "সেটআপ" বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। নদী পথ পরিবর্তনের পিছনে দুটি মূল কারণ বিজ্ঞানীদের মতে যে কী কারণে অ্যাভালশন হয়। একটি তত্ত্ব পরামর্শ দেয় যে নদীর পথ পরিবর্তন ঘটে যখন পলি জমার ফলে নদীটি পার্শ্ববর্তী জমির উপরে উঠে যায়। .....বিস্তারিত পড়ুন

শৈশবে ঘুমের ব্যাঘাত শিশুদের মধ্যে অটিজম ঝুঁকি বাড়াতে পারে

উত্তরাপথঃ সম্প্রতি এক গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে প্রাথমিক জীবনে (শিশু অবস্থায়) ঘুমের ব্যাঘাত মস্তিষ্কের বিকাশের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে এবং অটিজমের মতো নিউরোডেভেলপমেন্টাল ব্যাধিগুলির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। একটি সাম্প্রতিক  ইঁদুরের উপর গবেষণায় এটি প্রমানিত হয়েছে ।অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, ঘুমের অভাব দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সাথে যুক্ত, যার মধ্যে শরীরের খারাপ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা এবং ডিমেনশিয়ার বর্ধিত ঝুঁকি রয়েছে। ঘুম জন্ম থেকেই অপরিহার্য, এবং মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশু হিসাবে, আমাদের মস্তিষ্ক এখনও নিউরনের প্রান্ত তৈরি করছে, যাকে সিন্যাপ্স বলা হয়, যা শেখার, মনোযোগ, কাজের স্মৃতি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম এই নিউরনগুলিকে বিকাশ করতে এবং একে অপরের সাথে সংযোগ করতে দেয়, এবং বাকি জীবনের জন্য মস্তিষ্কের কার্যকারিতা স্থাপন করে।যদি এই সূক্ষ্ম, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি ক্রমাগত জেগে ওঠা বা বিচ্ছেদ উদ্বেগের মাধ্যমে ব্যাহত হয়, তবে এটি মস্তিষ্ক এবং আচরণের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। বাচ্চাদের মস্তিষ্ক সিন্যাপ্স গঠনে ব্যস্ত থাকে- যা শিক্ষা, মনোযোগ, কাজের স্মৃতি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর ঘুম এই নিউরনগুলির বিকাশ এবং সংযোগকে সহজতর করে, সারা জীবন জ্ঞানীয় কার্যকারিতার ভিত্তি স্থাপন করে। ক্রমাগত জেগে ওঠা বা বিচ্ছেদ উদ্বেগের মতো কারণগুলির কারণে বাধাগুলি মস্তিষ্কের গঠন এবং আচরণ উভয়ের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।ইউএনসি স্কুল অফ মেডিসিনের পিএইচডি ল্যাব গ্রাহাম ডিরিং-এ স্নাতক ছাত্র শন গে-এর নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে যে প্রাথমিক জীবনে ঘুমের ক্ষতি কীভাবে মস্তিষ্কের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে প্রভাবিত করে, সম্ভাব্যভাবে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বাড়ায়। (এএসডি)। তাদের ফলাফল প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। এখন, ইউএনসি স্কুল অফ মেডিসিনের সেল বায়োলজি অ্যান্ড ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, গ্রাহাম ডিয়ারিং, পিএইচডি-এর ল্যাবের স্নাতক ছাত্র শন গে-এর নেতৃত্বে একটি নতুন গবেষণা, .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top