

উত্তরাপথ, রাজস্থানঃ উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দিরের (Ram Mandir) কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ জানুয়ারি মন্দিরের গর্ভগৃহে রাম লালার অভিষেক করবেন। মন্দিরে ভগবান রামলালার প্রথম আরতি হবে রাজস্থানের যোধপুরের ঘি দিয়ে।
এই যাত্রার জন্য ১০৮ টি রথ তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে ১১ টি বড় রথ। আর ৯৭ টি ছোট প্রতীকী রথ তৈরি করা হয়েছে। রথের সঙ্গে দুটি ষাঁড়ও থাকবে। গরুর গাড়িকে রথের রূপ দেওয়া হয়েছে। একটি রথের দাম প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। রথযাত্রা যোধপুর থেকে পালি, আজমির, বেওয়ার, জয়পুর, ভরতপুর, মথুরা, লখনউ হয়ে অযোধ্যায় পৌঁছাবে। রথ বিদায়ের আগে সমস্ত কলশকে আরতি করা হয় যোধপুরে অবস্থিত শ্রী শ্রী মহর্ষি সন্দীপনি রামধর্ম গৌশালার পক্ষ থেকে।
রথের পাশাপাশি যোধপুরের বহু রাম ভক্তও অযোধ্যার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। ১০৮টি শিবলিঙ্গের সাথে ১০৮ টি কলশ রথে রাখা হয়েছে, সাথে ভগবান গণেশ এবং রামভক্ত হনুমানের মূর্তি রয়েছে।রথ যাত্রার আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভক্তরা ঘি দিয়ে মূর্তির আরতি করেন।রথের সঙ্গে গৌশালার মহর্ষি সন্দীপনি মহারাজও অযোধ্যার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
মহর্ষি সন্দীপন মহারাজ জানান, ২০১৪ সালে যোধপুর থেকে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া গরু ভর্তি একটি ট্রাক তিনি থামান। ট্রাকে প্রায় ৬০ টি গরু ছিল, তারপর মহারাজ তাদের মুক্ত করেন।তারপর এই গরুগুলিকে রাখতে এলাকার গোয়ালঘর গুলিতে নিয়ে যান।সেই সময় সব গোয়ালঘর মালিকরা এসব গরু রাখতে অস্বীকৃতি জানায়, অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তারা নিজেরাই একটি গোয়ালঘর চালু করে এসব গরু পালন করবে।সেই সময় রাম মন্দির নির্মাণের আশা বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় সন্দীপনি মহারাজ সেই ৬০টি গাভীর দুধ থেকে ঘি সংগ্রহ করতে লাগলেন।তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে তার কাছে যা ঘি আছে তা গরুর গাড়িতে করে অযোধ্যায় নিয়ে যাবেন।
মহারাজ যখন লোকেদেরকে তার প্রতিজ্ঞার কথা বললেন, সেইসময় লোকেরা তাকে অনেক প্রশ্ন করত এবং কীভাবে ঘি সংরক্ষণ করা হবে সেই নিয়ে মজাও করত।কিন্তু মহারাজ মানুষের প্রশ্নে বিভ্রান্ত না হয়ে ঘি সংগ্রহ করতে থাকেন।২০১৬ সালে, লোকেরা যখন মহারাজের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব বুঝতে পারে,সেই সময় তারা গৌশালায় আসে। তারা যখন দেখলেন মহারাজ ঘি সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন, তখন যারা আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন তারাও সহযোগিতা করতে শুরু করলেন। প্রথমে ঘি রাখা হত পাত্রে, তারপর নিরাপদ সঞ্চয়ের জন্য স্টিলের ট্যাঙ্ক আনা হয়।


মহারাজ সন্দীপনি জানান, প্রথমে তিনি পাত্রে ঘি সংগ্রহ করতে থাকেন কিন্তু গরমের কারণে ঘি গলতে শুরু করে এবং পাত্রে ফাটল দেখা দেয় এতে অনেক সময় ঘিও নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি আরেক সাধকের কাছ থেকে জানতে পারেন , পাঁচটি ভিন্ন ভেষজের রস ব্যবহার করে ঘি বহু বছর নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়।এমতাবস্থায় মহারাজ হরিদ্বারে গিয়ে ব্রাহ্মী ও পানপাতাসহ অন্যান্য ভেষজ নিয়ে আসেন। তাদের রস তৈরি করে ঘি’তে মেশানো হয় এবং ঘি সংরক্ষণ করা শুরু হয়। এরপর এই ঘি স্টিলের ট্যাঙ্কে রেখে এসির মাধ্যমে ১৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা হয়।
মহারাজ সন্দীপনি বলেন, ঘিতে ভেজাল থাকলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তিনি যে দেশি ঘি তৈরি করেছেন তা প্রাচীন রীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে তা নষ্ট হয় না। তিনি বলেন, ঘির বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে গরুর খাবারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ৯ বছরে গরুর সংখ্যা ৬০ থেকে ৩৫০-এ এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ গরুই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার বা অসুস্থ। গরুর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ঘি এর পরিমাণও বেড়েছে। শুধু ভেষজের রস দিয়ে ঘি সংরক্ষণ করা হতো না, এর পাশাপাশি প্রতি তিন বছরে একবার পাঁচটি ভেষজ যোগ করে পুরো ঘি সিদ্ধ করা হতো। এ জন্য ঘি পাত্রগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এই কারণেই এত বছর পরেও এই ঘি নষ্ট হয়নি। এ ছাড়া যে ঘরে এই ঘি মজুত করা হয়েছিল সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বায়ু চলাচলের বিষয়েও যত্ন নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন