লিরন মাসে (বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস) মানভূমের লোক- পার্বণ।

ড. নিমাইকৃষ্ণ মাহাতো

বীজপূণ্যাহ অনুষ্ঠান

সাবেক মানভূম তথা বর্তমান পুরুলিয়া জেলা ও সংলগ্ন অঞ্চলের লোক ভাবনায় ‘ লিরন মাস ‘ বলতে মূলত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস কে বোঝানো হয়। এই সময় রুক্ষ, শুষ্ক আবহাওয়া ও প্রায় নিরন্ন অবস্থায় মানভূমের দরিদ্র মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়। এই সময় মানভূমের মানুষের জীবনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লোক উৎসব পালিত হয়। সেগুলি সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে  মানভূমের ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে দু চার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

ইংরাজ শাসনের প্রথম দিকে রাঢ়ভূম – ঝাড়িখন্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ‘জঙ্গলমহল’ নামে পরিচিত ছিল।   ১৮০৫  সালের আইন (Regulation XVIII of 1805) অনুযায়ী বর্তমান পুরুলিয়া সহ ২৩ টি পরগণা ও মহল নিয়ে জঙ্গলমহল জেলা গঠিত হয়। ১৮৩৩ সালের ত্রয়োদশ আইন অনুসারে জঙ্গলমহল জেলা ভেঙে ‘মানভূম’ নামে একটি নতুন জেলা গঠন করা হয়। মানভূম জেলার সদর কার্যালয় হয় মানবাজারে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া  ও বর্ধমান জেলার কিছু অংশ এবং ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, ধলভুম, সরাইকেলা ও খরসোয়ান মানভূম জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৩৮ সালে জেলার সদর কার্যালয় মানবাজার থেকে বর্তমান পুরুলিয়া শহরে স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে বর্তমান পুরুলিয়া জেলা তৈরি হয় ১৯৫৬ সালের  ১ লা নভেম্বর এবং ভাষার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।

লাঙ্গল পূজা

অযোধ্যা পাহাড় থেকে শুশুনিয়া পাহাড় এবং দলমা থেকে ঝাড়খন্ডের রঙ্কিনী পাহাড় পর্যন্ত যে বিস্তীর্ণ এলাকা কাঁসাই, সুবর্ণরেখা, ডুলু্ং, কুমারী, শিলাই, দ্বারকেশ্বর, দামোদর নদীর জলধারায় পুষ্ট এবং শাল, পলাশ, কেন্দ্, হরিতকি, বহেড়া, অর্জুন মহল প্রভৃতি গাছ-গাছালির মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বেষ্টিত যে অঞ্চল তাই মানভূম।

পুরুলিয়া জেলা ও সংলগ্ন অঞ্চল তথা সাবেক মানভূমের অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। কৃষিসংক্রান্ত ঐতিহ্য বা কৃষিসংস্কৃতি মানভূমের মানুষের জীবনে পরতে পরতে লক্ষ্য করা যায়। তাই পুরুলিয়া ও সংলগ্ন অঞ্চলের তথা মানভূমের উৎসব গুলি অধিকাংশই কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষি তাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জীবনযাত্রায় মিলেমিশে থাকা কৃষির বিভিন্ন লোকবিশ্বাস আচার-আচরণগুলি উৎসব, পাল-পার্বণ এর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত।

রোহিন পরবে বাড়ির দেওয়ালে গোবর লেপা

 লোক-উৎসব হল ভাবকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোন একটি লোকের কৃষ্টি ও বিশ্বাস প্রকাশিত হয় সেই গোষ্ঠীর উৎসবগুলির মধ্য দিয়ে । উৎসব পালনের লক্ষ্য মূলত তিনটি –

       ১ ) শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কর্মজীবনের মধ্যে না থেকে একটু ভিন্নতর জীবনের আস্বাদ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জীবনকে নতুন করে পাওয়া।

       ২ ) জীবনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় আচার-আচরণগুলি ও লোকোবিশ্বাসগুলি নান্দনিক উপায়ে সম্পন্ন করা।

      ৩ )  বিভিন্ন লোকের সংস্কৃতির আদান-প্রদান ঘটানো। 

আমরা প্রথমে পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের তথা মানভূমের কৃষি কেন্দ্রিক  লোক-উৎসবগুলির শ্রেণীবিন্যাস করে শুধুমাত্র লিরন মাসে অর্থাৎ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে পালিত কৃষিকেন্দ্রিক লোক-পার্বণগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অগ্রসর হব। 

      কৃষিকেন্দ্রিক লোক-পার্বণগুলির শ্রেণীবিন্যাস : 

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষকদের কৃষিবৎসরের সূচনা ‘আখ্যান যাত্রা’ অর্থাৎ ১  লা মাঘ থেকে এবং শেষ হয় টুসু উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তিতে। এই সময়সীমার মাঝে যেসব কৃষিউৎসব ও পাল -পার্বণ রয়েছে সেগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় –

ক ) প্রাক শস্য উৎসব ( Pre- sowing Festival):

এই অঞ্চলে  ১লা মাঘ থেকে কৃষিবছর -এর সূচনা হয়  । জ্যৈষ্ঠ মাসে এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিজ ফসল আমন ধানের বীজ বপন শুরু হয়। আষাঢ় মাসের পরে বীজ বপন কখনোই সম্ভব নয় । তাই , মাঘ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত হওয়া কৃষিউৎসবগুলিকে প্রাক শস্য উৎসবের মধ্যে ফেলা যেতে পারে। যেমন-

 ১ ) আখ্যান যাত্রা ও হালপুণ্যাহ  ( ১ লা মাঘ).

 ২ ) চড়ক পূজা ও ভগতা ঘূরা  (চৈত্র সংক্রান্তি) , 

 ৩ ) ছাতুপরব   ( চৈত্র সংক্রান্তি ) ,

  ৪ ) বীজপূণ্যাহ (সাধারণত অক্ষয় তৃতীয়ায়),

৫ ) রোহিন পার্বণ ( ১৩ ই জ্যৈষ্ঠ  , যদিও এর ব্যাপ্তিকাল ৭ দিন অর্থাৎ ১৯ শে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত),

৬ ) ডা বা  ডাহা (২০ শে জ্যৈষ্ঠ  , এরও ব্যপ্তিকাল ৭ দিন অর্থাৎ ২৬ শে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত ),

৭ ) ক্ষেতিকারী বা কেতকাহি বতর , ২৬ শে জ্যৈষ্ঠ থেকে ৭ই আষাঢ় ),

৮ ) অম্বুবাচী বা আমাবতী পার্বণ ( ৭ ই আষাঢ়)।

খ )  শস্যকালীন উৎসব ( Harvesting Period Festival):

আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি থেকে শস্যচারা মাঠে বপন সম্পূর্ণ হয়ে যায় ।  আর শস্য ঘরে তোলা হয় অগ্রহায়ণ মাস নাগাদ । এই সময়ের মধ্যে এই অঞ্চলে যে কৃষি- উৎসবগুলি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলিকে শস্যকালীন উৎসব বলা হয়। যেমন- 

      ১ )  পাঁচ আটি করা  । ( আষাঢ় মাসে যে কোন শুভ দিনে ধান্য রোপণের প্রথম সূচনা করা).

      ২ ) করম বা জাওয়া পার্বণ  ( ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে ),

      ৩ ) ইঁদ  পরব  (ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ),

      ৪  ) ছাতা পরব ( ভাদ্র সংক্রান্তি ),

      ৫ ) ভাদু পরব  ( ভাদ্র সংক্রান্তি),

      ৬ ) জিহুড় ডাক ( আশ্বিন সংক্রান্তি ),

      ৭ ) বাঁধনা পরব  (কার্তিক মাসের অমাবস্যায় ),

      ৮ )  খামার বাঁধা  ( হেমন্তকালে পাকা ধান খামারজাত করার আগে বিশেষ রীতিসহ খামার প্রস্তুতিকরণ ),

      ৯ ) ডেনিঠাকুর আনা ( অগ্রহায়ণ মাসে যার যেদিন ফসল তোলা শেষ হয় বা ফসল তোলার পর কোন শুভ দিন বা অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি )।

গ ) ফসল -উত্তর শস্য উৎসব  ( Post Harvesting Festival ) : 

 অগ্রহায়ণ মাসের পর থেকে পরবর্তী মাঘ মাসের পূর্ব পর্যন্ত যে কৃষিউৎসবগুলি পালিত হয় সেগুলিকে ফসল -উত্তর শস্য উৎসব বলা যেতে পারে। যেমন – 

      ১ ) বা‍ঁউড়ি বাঁধা (পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন ) , 

      ২ ) টুসু পরব  (পৌষ সংক্রান্তি) , 

     ৩ ) মকর পরব  (পৌষ সংক্রান্তি )।

এছাড়াও এই অঞ্চলে আরো কিছু কিছু অনালোচিত বা স্বল্পালোচিত লোক-পার্বণ রয়েছে।আমরা এবার মানভূম অঞ্চলে লিরণ মাসে অর্থাৎ গরমকালে, মূলত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে পালিত লোক- পার্বণগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব। এই আলোচনায় চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত চড়ক পূজা বা শিবের গাজন ও ছাতুপরব সম্পর্কেও আলোচনা করব, কারণ এগুলোর রেশ বৈশাখ , জ্যৈষ্ঠ মাসেও থেকে যায়। 

 চড়ক পূজা /  শিবের গাজন / ভগতা ঘুরা

 চৈত্র মাসের প্রধান আকর্ষণ হল চড়ক পূজা। এই উৎসবের সূচনা হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে। তবে এর রেশ চলতে থাকে রোহিন পরব অর্থাৎ ১৩ ই জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত।  মানভূমের কৃষি চেতনায় লিরণ মাস হল গরমকালের বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস।  লিরন মাসের শুরু থেকেই পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষিকেন্দ্রিক ‘হড়মিতান’ (‘হড়’ শব্দের অর্থ ‘মানুষ’ ও ‘মিতান’ শব্দের অর্থ ‘মিত্র’ অর্থাৎ  সব মানুষই মিত্র) কৃষক সমাজ মেতে উঠে চড়ক পরব ও শিবের গাজনে।  মানভূমের কৃষকদের চেতনায় শিব হলেন কৃষির  আদি দেবতা।  ‘শিবায়ন’ কাব্যেও শিবের লোকায়ত রূপটি দেখা যায়। মানভূমের কৃষিভাবনায় শিব হলেন একজন কৃষক এবং পার্বতী হলেন কৃষক গৃহিণী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের কোচ- সমাজেও শিব কৃষির দেবতা হিসাবে পরিগণিত হন। মানভূমের প্রায় প্রতিটি গ্রামে শিবের মন্দির দেখা যায়। 

এই সময় আপমর কৃষক সাধারণ শিবের গাজনে মত্ত হয়ে ওঠে  । এই উপলক্ষে অনেক জায়গায় ‘ভগতাগণ ‘ কে চড়ক ঘুরতে দেখা যায়। অনেক ভগতা  নিজের পিঠে লোহার শিক বিদ্ধ করে গলায় ফুলের মালা ( প্রধানত টগর ফুল  ) নিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম করতে করতে চড়ক ঘুরতে থাকে। এছাড়া জিহ্বা ও পিঠে ‘বান ফোঁড়া’ (লোহার শিক্ গাঁথা) ও ‘দন্ডি কাটা’ চলতে থাকে। পুরুলিয়ার চিড়কার গৌরীনাথধাম, আনাড়ার বানেশ্বর মন্দির ও বুধপুরের বুদ্ধেশ্বর মন্দিরে খুব ধুমধাম করে চড়ক পূজা হয়। এছাড়া পুরুলিয়ার কাশিপুর থানার গগনাবাদ গ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘ভগতা ঘুরা’ হয়।

এই অনুষ্ঠানের আচার- পদ্ধতিতে কৃষিসংস্কৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে। পুকুরে স্নানান্তে শিবের মূর্তির রূপকল্পে তৈরি কাঁটাযুক্ত পাটাতন ‘পাটনি’ নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে মন্দিরে আসেন প্রধান ভগতা। তাঁর পিছনে দলবদ্ধ ভগতাগণসহ ( যাদের মধ্যে বান ফোঁড়া ভগতাও থাকেন ) সমবেত জনমণ্ডলী আসেন।এই ‘পাটনির’ জল সমবেত জনতা মাথায় নেয়। এই ক্রিয়াকলাপ- এর মধ্যে উৎপাদিকা শক্তির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। প্রত্যেক ভগতার হাতে থাকে বেতের লাঠি । এই লাঠিটি প্রতীকী।  চাষের কাজে লাঙ্গল বা গাড়ি চালানোর সময় গবাদি পশু তাড়ানোর কাজে লাঠি ব্যবহৃত হয়। ভগতারা শিবের অনুচর নন্দী-ভৃঙ্গির মতোই নানা ধরনের লাফ- ঝাঁপ করেন। এসবের মূল উদ্দেশ্যই হল কৃষির দেবতা শিবকে সন্তুষ্ট করা। কৃষকেরা বিশ্বাস করে, এর ফলে কৃষির দেবতা শিবের অনুগ্রহ তারা পাবে এবং আসন্ন কৃষি মরশুমে চাষবাস ভালো হবে।

 ছাতু পরব

চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতেই মানভূমে ‘ছাতু পরব’ খুব আগ্রহের সঙ্গে পালিত হয়। এই উপলক্ষে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে গম, ছোলা, যব, ভুট্টা, মুড়ি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি এবং সঙ্গে কাঁচা আম ও গুড়  নিবেদন করা হয়। ‘ছাতু পরব’ – এর দিন প্রতিটি কৃষকপরিবার প্রতিবেশীদের ছাতু খাওয়ার নিমন্ত্রণ করে এবং তা আন্তরিকভাবে পরিবেশন করে। এই অঞ্চলে কৃষকসমাজে ছাতু পরবে নিমন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে পুরনো ঝগড়া, বিবাদ, মনোমালিন্য ও মান -অভিমানের পালা মিটিয়ে নেওয়া হয়। শিবগাজনের একটি প্রচলিত গানের অংশ এখানে উল্লেখ্য-

    ‘ চৈত পরবের ছাতু ,কুড়হা চালে শুকাছে, 

      সেই যে বন্ধু মাইরে ছিলি এখনো দুখাছে।’

চৈত পরবের  ‘ ছাতু কুড়হা ‘ (মুড়ি,যব, ছোলা, গম ইত্যাদি ভাজা থেকে তৈরি গু‍ঁড়ো ) ঘরের চালে শুকাচ্ছে । বন্ধু তুমি যে আঘাত করেছিলে তা এখনো বেদনার সৃষ্টি করে। এখানে যা উহ্য রয়েছে তা হলো বন্ধু তোমার জন্য ছাতু কুড়হা  পরিবেশনের অপেক্ষায়। ছাতু খাওয়ার নিমন্ত্রণ রক্ষা করলে তোমার দেওয়া বেদনা আমার মন থেকে দূর হবে। এই চৈত পরবের উদ্দীপনা মিলিয়ে যেতে না যেতেই বর্ষা এসে পড়ে। মানভুমের কৃষিজীবী মানুষ নতুন উদ্যমে কৃষিকাজে নেমে পড়ে।

 বীজপুণ্যাহ বা বীজ বাহির করা 

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষকেরা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসকে একত্রে ‘লিরন মাস’ বলে। এই লিরন মাসে এই অঞ্চলের কৃষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিকেন্দ্রিক আচার- অনুষ্ঠান হল বীজপুণ্যাহ বা বীজ বাহির করা।

সাধারণত বৈশাখ মাসে শুক্লপক্ষে তৃতীয়া তিথিতে অর্থাৎ ‘অক্ষয় তৃতীয়া’ য় কৃষকেরা এই ‘বীজপুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান করে থাকে। তবে কারো পক্ষে অক্ষয় তৃতীয়ায় বীজপুণ্যাহ করা সম্ভব না হলে সেই চাষী ‘রোহিন দিন’ ( ১৩ ই জ্যৈষ্ঠ) বীজপুণ্যাহ করে থাকে। বীজ বাহির করা অর্থাৎ বীজপুণ্যাহ -এর দিন চাষির ঘর-দোর, উঠান গোবর জল দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। বাড়ির মহিলারা এই পবিত্র দিনে মাঙ্গলিক আলপনা ও মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন আঁকে। এই দিন মা লক্ষ্মীকে ক্ষেতে অর্থাৎ ঘরের বাইরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন আঁকা হয় বহির্মুখী। একটি কাঁসার বড় পাত্রে সামান্য বীজ ধান ও কিছু দূর্বা ঘাস একটি নতুন বস্ত্রের দ্বারা আবৃত করে প্রথমে বাড়ির তুলসী মঞ্চের সামনে আলপনা দেওয়া পিঁড়ির উপরে রেখে কৃষকেরা পূজা করে। তারপর, সেই পাত্রে বীজ ধান বস্ত্র দ্বারা আবৃত অবস্থায় বীজতলার ক্ষেতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আড়াই মুঠো ধান মাটির সঙ্গে  মিশিয়ে দেওয়া হয়। এই সামগ্রিক অনুষ্ঠানটিকেই ‘বীজ পুণ্যাহ’  বা ‘বীজ বাহির করা করা’ বলে। এই দিনে অনেক কৃষকের বাড়িতে  আনন্দ- অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে পিঠে তৈরি করা হয়।

অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে বীজ পুণ্যাহ করার বিষয়ে প্রচলিত লোকবিশ্বাস হলো যে, এই তিথিতে বীজপুণ্যাহ করলে নানা রকম রোগব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে চারাগাছ অক্ষত অবস্থায় বেড়ে উঠবে। বলা বাহুল্য , বীজ বাহির করা বা বীজপুণ্যাহ- এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো আসন্ন মরশুমে ধানের বীজতলা তৈরির আগে বীজধানের উৎপাদিকা শক্তি পরখ করে নেওয়া।   

 রোহিন পার্বণ 

জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ দিনটি পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষক সম্প্রদায়ের কাছে একটি পবিত্র দিন। এই দিনটিতে এই অঞ্চলের কৃষকেরা ‘রোহিন পার্বণ’ পালন করেন। এ বিষয়ে এ অঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। প্রবাদটি হল –

              ‘ বারো দিনে বারুণী,

                তেরো দিনে রহিন।’

অর্থাৎ তিথি- বার- নক্ষত্র নির্বিশেষে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তম দিনটি ‘রোহিন’ বলে বিবেচিত হবে ।   ‘রোহিন’ হলো কৃষিকেন্দ্রিক আচার- অনুষ্ঠান। কৃষির সাথে এই পার্বণটির ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে।

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের চাষবাস মূলত এক ফসলি ও বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। তাই , কৃষিকেন্দ্রিক এই পার্বণটিকে কৃষকেরা খুবই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে। যারা অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে বীজ পুণ্যাহ  করেনি, তারা সকলেই এই দিনে বীজ পুণ্যাহ করে। এই অঞ্চলে কৃষিকাজের প্রকৃত সূচনা হয় এই দিন থেকেই। চাষিরাও এই দিন থেকেই নতুন আশায় বুক বাঁধে নতুন ফসল ফলানোর জন্য।

‘রোহিন পার্বণ’ কয়েকটি পর্যায়ে পালিত হয়।  ১২ ই জ্যৈষ্ঠ বারুণী – ‘বার’ বা তৈরি হওয়ার দিন । ১৩ই জ্যৈষ্ঠ রোহিন যদিও এর ব্যাপ্তিকাল ৭ দিন অর্থাৎ ১৯ শে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত । এই ৭ দিন ধরে চলে ‘রহিনালী- বতর’ ( রহিন- পরবর্তী সাত দিন ধানের বীজ বপনের অনুকূল প্রাকৃতিক অবস্থা )। এই ‘রহিনালী-বতর’ – এ ধানের বীজ বপন করলে তা থেকে সৃষ্ট চারা সুস্থ সবল ও সতেজ হয় বলে চাষীদের বিশ্বাস।

‘রোহিন দিনে’ থাকে নানা ধরনের আচার- অনুষ্ঠান। বাড়ির মেয়েরা ভোরবেলা সূর্যোদয়ের পূর্বে বসতবাড়ির চারদিকের দেয়ালে গোবর দিয়ে গন্ডি কেটে দেয়। প্রচলিত লোকবিশ্বাস এই যে, আসন্ন বর্ষাকালে বিষাক্ত কীটপতঙ্গ বা সাপ এই গন্ডি পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনা ; ফলে বিষাক্ত কীট বা সাপের দংশন থেকে গৃহস্থ রক্ষা পাবে। ঘর- দুয়ার গোবর জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিকানো হয়। মা লক্ষ্মীর  পদচিহ্নের আলপনা আঁকা হয়। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে মেয়েদের ‘রোহিন মাটি’  (এক ধরনের সাদাটে পাঁক মাটি) ও সাহাড়া গাছের ডাল সংগ্রহের কাজ। স্নান করে শুচিশুভ্র হয়ে বাড়ির মহিলারা যায় ‘রোহিন মাটি’ সংগ্রহ করতে। প্রত্যেকের কাছেই থাকে বাঁশের তৈরি নতুন টুকি (পাত্র)। এই টুকিটিকে প্রথমে সিন্দুর লাগিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় এবং টুকিটির গায়ে একটি লোহার টুকরো গেঁথে দেওয়া হয়। যাতে কারো অশুভ দৃষ্টি বা কুপ্রভাব না পড়ে। ক্ষেত থেকে রোহিন মাটি ও সাহাড়া গাছের ডাল টুকি ভর্তি করে এনে প্রতিটি ঘরের চৌকাঠ, খামারে ,ধানের  গোলাসহ গৃহস্থের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়। ‘রোহিন মাটি ‘কে উর্বরতা শক্তির প্রতীক হিসাবে ভাবা হয়। এই মাটি জমির উর্বরতা শক্তির ধারক ও কীটনাশক। ফলে সুস্থ ,সবল ধান চারা জন্মানোর পক্ষে সহায়ক। এছাড়া , চাষীর পরিবারের সকলেই সন্ধ্যাবেলা দুধের সাথে মিশিয়ে আষাড়ী ফল (এক ধরনের ফল যা ‘রোহিন ফল’ নামেও  পরিচিত) ভক্ষণ করে। কৃষকেরা বিশ্বাস করে যে রোহিন ফল ভক্ষণ করলে আসন্ন বর্ষা মরশুমে জলে- কাদায় চাষবাস করার সময় সাপ- খোপ, কীটপতঙ্গের আক্রমণজনিত বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে কাজ  করবে। তাই , কৃষিকেন্দ্রিক সংস্কার ও বিশ্বাসের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই রোহিন মাটি সংগ্রহের কাজে মহিলাদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। রোহিন মাটি সংগ্রহের সময় সংগ্রাহক মহিলাদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতার বিচ্যুতি  ঘটাতে ছেলের দল বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে নাচ জুড়ে দেয়। বিচিত্র রঙ্গ- তামাশা করে মেয়েদের হাসানোর চেষ্টা করে। মাটি সংগ্রাহক মহিলা রোহিন মাটি নিয়ে আসার সময় একবার হেসে ফেললে পুনরায় তাকে মাটি সংগ্রহ করতে যেতে হয় নতুবা মাটি সংগ্রহের সংকল্প নষ্ট হয় এবং বিনাশ ঘটে বলে কৃষকেরা বিশ্বাস করে।

        রোহিন পার্বণের শাস্ত্রীয় দিক : 

অনেকেই মনে করেন, এই দিন পৃথিবীর কাছাকাছি আসে রোহিণী নক্ষত্র।  ফলে কৃষিকাজের পক্ষে উপযুক্ত হয়ে ওঠে এই সময়। কৃষ্ণের বড় ভাই বলরাম ভারতীয় বিশ্বাসে কৃষিদেবতা। বলরামের মায়ের নাম রোহিণী। সেই রোহিণীর দিনেই পুরুলিয়া জেলা ও দর্শন অঞ্চলের কৃষকেরা ইজ বপন করেন সুতরাং দেখা যাচ্ছে রোহিন পার্বণ সম্পূর্ণভাবেই একটি কৃষিকেন্দ্রিক পার্বণ। 

                 রোহিন -বতর 

‘বতর’ শব্দটির অর্থ হল অনুকূল অবস্থা বা সুযোগ ‌ রোহিন (১৩  ই জ্যৈষ্ঠ ) পরবর্তী প্রায় সাতদিন হালকা বৃষ্টিতে ধানের বীজতলা ক্ষেতের মাটি ধুলার মত বলে তা বীজ বপনের অনুকূল থাকে। এই অনুকূল অবস্থাকেই  ‘রোহিন বতর ‘ বলে।

                 ডা বা ডাহা

রোহিন পার্বণের ৭ দিন পর অর্থাৎ ২০ শে জ্যৈষ্ঠ পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে  ‘ডা’ বা ‘ডাহা’  নামে আর একটি কৃষিকেন্দ্রিক পার্বণের সূচনা হয়। ডা বা ডাহা এর ব্যাপ্তিকাল রোহিন পার্বণ এর মতোই সাত দিন। ডা এর ব্যাপ্তিকালে চাষের কাজ,  বিশেষত বীজ বপনের কাজ বন্ধ থাকে। ডা বা ডাহা কথাটির অর্থ হলো বিশ্রাম। কৃষকেরা দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছে যে, এই অঞ্চলে এই সময় সাধারণভাবে যে আবহাওয়া বিরাজ করে তা চাষের কাজ বিশেষত বীজ বপনের অনুকূল নয়। কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে ডা বা ডাহা চলাকালীন বীজ বপন করলে সেই চারা গাছে ফলন ভালো হয় না এবং তাতে রোগ পোকার আক্রমণ সহজেই ঘটে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে , লিরণ মাসে অর্থাৎ বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে সাবেক মানভূম তথা বর্তমান পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত কৃষিকেন্দ্রিক পার্বণগুলির অন্তরালে এক বৈচিত্র্যময় লোকবিশ্বাসের ধারা বহমান যা এই অঞ্চলের কৃষি সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে আরো নিবিড় ও সমৃদ্ধ করেছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

1 thought on “লিরন মাসে (বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস) মানভূমের লোক- পার্বণ।”

  1. Pingback: Manbhum Sanskriti: মানভূমের কৃষিকেন্দ্রিক ব্যঙ্গাত্মক প্রবাদ - উত্তরাপথ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top