সংরক্ষণের প্রতীক্ষায় ভগ্নপ্রায় কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি

প্রিয়াঙ্কা দত্ত, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

কালিম্পং এ গৌরীপুর হাউসএর কথা কমবেশি অনেক বাঙালীই জানেন। কারণ আমরা বাঙালিরা তো ভ্রমণ পিপাসু, আর কালিম্পং বেড়াতে গিয়ে মর্গান হাউসের সাথে গৌরীপুর হাউসেও ঘুরতে যান প্রায় প্রত্যেকেই।  আসলে এই অট্টালিকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য। অথচ এর বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। অবহেলা আর অযত্নের আঁচড়ে কালের গর্ভে মিশে যেতে চলেছে এই বাড়ি। ভূমিকম্পের প্রকোপে  বাড়িটিতে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল ফাটল। অথচ  গৌরীপুর হাউস হেরিটেজ ঘোষিত হয়েছে বেশ কিছু বছর আগেই। কাছাকাছি মংপু তে বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য আরও একটি বাড়ি, যা কিনা মৈত্রেয়ী দেবীর  ছিলো, তা কিন্তু ইতিমধ্যেই নতুন রূপে সেজে উঠছে। কিন্তু পর্যটকরা এই গৌরীপুর হাউসে এসে প্রায়ই আশাহত হন। এই সুবিশাল অট্টালিকায় অনায়াসেই গড়ে তোলা যায় সংগ্রহশালা বা গেস্ট হাউস। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী যে সেসব সম্ভব হচ্ছে না বাড়িটির মালিকানা নিয়ে কিছু জটিলতা থাকায়। বর্তমানে একটি পরিবার কেয়ার টেকার হিসাবে সেখানে বাস করেন।

বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কিন্তু কম নয়। কারণ ১৯৩৮ সালে এই বাড়িতে বসেই রবি ঠাকুর রচনা করেন “জন্মদিন ” কবিতাটি। আর সেই বছরেই পঁচিশে বৈশাখ,কবির আটাত্তরতম জন্মদিনে, এই বাড়ি থেকেই কবিতাটি টেলিফোনে আবৃত্তি করেন কবি স্বয়ং। সকাল সাতটা চল্লিশ থেকে পনেরো মিনিট ধরে চলে সেই লাইভ অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন মৈত্রেয়ী দেবী ও তাঁর স্বামী। ছিলেন All India Radio এর অধ্যক্ষ ও।শুধু তাই নয় সেই অনুষ্ঠানই ছিলো কালিম্পং শহরে টেলিফোন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এ বিষয়ে একটি ফলকও লাগানো আছে বাড়ির সম্মুখে। পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর তত্বাবধানে এখানে থাকতেন কবি।১৯৩৭ থেকে ১৯৪০ এর মধ্যে প্রায় চার বার এখানে এসে বসবাস করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অসুস্থ অবস্থায় শেষবারের মত গৌরীপুর হাউস এ ছিলেন তিনি এবং এখান থেকেই অসুস্থতার জন্য ফিরে যেতে হয় কলকাতায়। সেই শেষ। আর কোনোদিনও এ বাড়িতে কবির পায়ের চিহ্ন পড়েনি । রবীন্দ্রনাথ এই বাড়িটিতে বাস করতে বিশেষ পছন্দ করতেন। তাই কবির মৃত্যুর পর ১৯৪১ সালে পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী এই বাড়িটি লীজ নেন এবং এর নাম রাখেন ‘ চিত্রভানু ‘।

কিন্তু তার পরবর্তী সময়ে কালের ষড়যন্ত্রে ক্রমেই বিস্মৃতির আড়ালে চলে যায় এই বাড়ি। যদিও স্থানীয় কিছু কিছু সংস্থার উদ্যোগে এখানে প্রতি বছরই পালিত হয় রবি ঠাকুরের জন্মদিন। কিন্তু বাড়িটির প্রকৃত মর্যাদা রক্ষায় বোধায় আমরা বিফল হয়েছি।  আশা করব খুব শীঘ্রই এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। রক্ষা পাবে গুরুদেবের অমূল্য স্মৃতি।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top