

সি সেল মিউজিয়াম ছবি সৌজন্যে – প্রিয়াঙ্কা দত্ত
প্রিয়াঙ্কা দত্তঃ রাজা মহম্মদ, এমন একজন মানুষের নাম, যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছার কাছে হেরে যায় সব বাধা। ইচ্ছার চেয়ে বলা ভালো নেশা। সামুদ্রিক প্রাণীদের খোল সংগ্রহের নেশা। যা তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে। আর সেই দীর্ঘ পথের শেষে , তিনি সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সি সেল মিউজিয়াম সেটি বর্তমানে চেন্নাইয়ের মহাবলিপূরম মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট।
রাজা মহম্মদ ছোট্ট বেলা থেকেই সমুদ্র তট থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহাংশ। কুড্ডালোর থেকে রামেশ্বরম এর সমুদ্রতট, সেখান থেকে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশে গিয়েছেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সংগ্রহ করেছেন অসাধারণ সব সামুদ্রিক প্রাণীর ফসিল, মুক্ত, ঝিনুক, শঙ্খ আরও কত কি। কিন্তু তা করতে গিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে তাঁর ব্যাক্তিগত সব সম্পত্তি। তবু দমে যাবার পাত্র নন তিনি। কোনও রকম সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য ছাড়াই এগিয়ে গেছেন নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে। ১৯৭৯ সাল থেকে তাঁর যাত্রা শুরু। শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কেনিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে রাজা মহম্মদ সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৬০০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর খোল। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১৩ সালে এই সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই যাত্রা যে সহজ ছিলো না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


চেন্নাই এর এই বিশাল মিউজিয়াম এ সাজানো আছে প্রায় ৪০০০০ সামুদ্রিক প্রাণীর খোল, বহু বিচিত্র দর্শন শামুক, ঝিনুক, শঙ্খ, সমুদ্র অশ্ব আরও কত কি। প্রতিটা নিদর্শনের পাশে লেখা আছে তাদের বৈজ্ঞানিক নাম, প্রজাতি, উৎসস্থল প্রভৃতি নানা প্রয়োজনীয় তথ্য , যা যেকোনো দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করবে। দেশী বিদেশী পর্যটকরা বিস্মিত হন এই বিপুল সম্ভার দেখে। এখানে একদিকে যেমন আছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মুক্ত তেমনি আছে ৫০ কেজি ওজনের বিশালাকার শঙ্খ, আছে গোলাপের আকারের মুক্ত এবং জীবন্ত মাছের অ্যাকুয়ারিয়াম বা জীবন্ত স্টার ফিশদের হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ। রাজা মহম্মদ নিজে স্কুলছুট হলেও সংগ্রহশালার সমস্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছেন। সংগ্রহশালা়টিকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে এখানে ডক্টর মাছেদের দ্বারা পেডিকিওর এবং ডায়ানাসরদের নিয়ে থ্রী ডি শো এর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যদিও এতো সব আয়োজনের তুলনায় প্রবেশমূল্য খুব একটা বেশি নয়। স্কুল পড়ুয়াদের কাছে এই সংগ্রহশালা হতে পারে এক বিস্ময়কর স্থান।


কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে এই মহান উদ্যোগের এখনও পর্যন্ত সেভাবে প্রচার নেই। ফলে মিউজিয়ামের বিপুল খরচা চালানো খুবই অসুবিধাজনক হয়ে পড়ছে। এই সব বহুমূল্য জিনিসপত্রের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য যে বিশাল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন তা ব্যাক্তিগত ভাবে কতদিন বয়ে চলা সম্ভব তাই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মিউজিয়ামের বর্তমান তত্বাবধায়ক রাজা মহম্মদ এর পুত্র। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে সরকারী হস্তক্ষেপ করা হবে। তাই চেন্নাই গেলে অবশ্যই ঘুরে আসুন সি সেল মিউজিয়াম।
আরও পড়ুন
৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল: হাইকোর্ট ও পর্ষদের টানাপড়েন অব্যাহত
উত্তরাপথ: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলা। বিচারপতির বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় এই শিক্ষকেরা অপ্রশিক্ষিত ছিলেন আর এই 'অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের' নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতির ত্রুটির কারণে এই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হল। .....বিস্তারিত পড়ুন
ChatGPT শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ ?
উত্তরাপথ: ChatGPT বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ বিশেষকরে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এবার আসা যাক ChatGPT নিয়ে ছাত্র সমাজের কেন এত আগ্রহ? ChatGPT হল একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence)। OpenAI এটিকে ২০২২ নভেম্বরে বাজারে আনে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তে পেতে পারে এছাড়াও এই অ্যাপ ইমেল, প্রবন্ধ সেই সাথে কোড রচনার কাজেও সাহায্য করে। এবার আসাযাক ChatGPT র কাজ প্রসঙ্গে ধরুন আপনি রবীন্দ্রনাথের মত কবিতা লিখতে আগ্রহী অথচ আপনি কবি .....বিস্তারিত পড়ুন
বঞ্চনার আর এক নাম শবর
বলরাম মাহাতো: শবর কথাটির উৎপত্তি হয়েছে ‘সগর’ থেকে। ‘সগর’ শব্দের অর্থ হলো কুঠার। বোঝাই যাচ্ছে, শবররা কুঠার হাতে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। সেখান থেকেই শবর নামটির প্রচলন হয়। শবররা বাস করেন পশ্চিম বাংলা, চেন্নাই, মধ্যপ্রদেশ, ছোটনাগপুর আর উড়িষ্যায়। আমাদের দেশে বর্তমানে শবরদের সংখ্যা ২,০০০ এর কিছু বেশি। শবর কোনো একজনের নাম নয়, এটি একটি জনগোষ্ঠীর নাম। বর্তমানে ভারতে এই শবর জনগোষ্ঠী একটি .....বিস্তারিত পড়ুন
পরম সুন্দরী
মৈত্রেয়ী চৌধুরী: চাকরির বাজার ভীষণ মন্দা। পাত্র সৃজিত এম. এস.সি পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছে না। অগত্যা পরিবারের ব্যাবসার হাল ধরেছে। পারিবারিক সূত্রে তাদের মিষ্টির বেশ বড় দোকান রয়েছে। সৃজিত পড়াশোনা তে বেশ ভালো ছাত্র ছিল। প্রতিদিন সকালে পেপারে চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজা তার একটি কাজ। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বয়স তো থেমে থাকবে না। বাবা মা ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা কিছু দিনের মধ্যেই ছেলের বিয়ে দেবেন এরকম স্থির করেন। মোনালিসা ভূগোলে সদ্য এম.এ, পি. এইচ. ডি করে একই ভাবেই চাকরির খোঁজ করে যাচ্ছে। বাবা সুভাষ বাবু সরকারি .....বিস্তারিত পড়ুন