সরকার যতই খরচ করে স্বচ্ছ ভারত বা নির্মল বাংলা অভিযান করুক, স্বচ্ছতা অধরাই থাকবে

প্রীতি গুপ্তাঃ এখনও রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে মাঝে মধ্যে স্বচ্ছ ভারত -এর দু-একটা ব্যানার চোখে পড়ে। কিন্তু ব্যাস ঐ পর্যন্ত বাস্তবে মোদীজির স্বচ্ছ ভারত বা নির্মল বাংলা অভিযান কতটা সফল তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।সম্প্রতি দেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের গর্ব, হুগলি নদীর তলদেশে চলমান পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো, হাওড়া ময়দান এবং এসপ্ল্যানেডের মধ্যে ৪.৮ কিলোমিটার রাস্তা উদ্বোধনের কিছু দিনেই মধ্যে যা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে এইসব অভিযানের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

আমাদের রাজ্যের এমন বহু মানুষ আছেন যাদের কলকাতায় মেট্রো ভ্রমণের কোনও অভিজ্ঞতা নেই, তাদের জন্য, পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো হাওড়া ময়দান থেকে ফুলবাগান প্রায় ১৬ কিলোমিটার পথ, যার মধ্যে একটা বড় অংশ হুগলি নদীর ৩০ মিটার তলদেশ দিয়ে গিয়েছে ভ্রমণের এক দারুন অভিজ্ঞতা হতে পারে ।খবরে প্রকাশ বহুল প্রত্যাশিত এই মেট্রোর উদ্বোধনী দিনে ৭০,০০০ জন যাত্রী প্রথম জলের নিচে মেট্রো প্যাসেজের অভিজ্ঞতা উপভোগ করেছেন। তারপর থেকে, দৈনিক গড়ে ৫০,০০০ যাত্রী এই মেট্রো পথ ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।

কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র এক সপ্তাহ পরে, সংবাদপত্রগুলি মেট্রো স্টেশনগুলির একেবারে নতুন মেঝে এবং দেওয়ালে যাত্রীদের পান এবং গুটকা থুতু ফেলার বিষয়ে ছবি এবং প্রতিবেদনগুলি প্রকাশ করে যা সত্যিই লজ্জাজনক। এইভাবে সরকারী সম্পত্তি নষ্ট করার জন্য শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের সমস্ত সমস্যাগুলির মতো এটি নিয়েও আমরা কান্নাকাটি করব কিন্তু এটিকে কার্যকর ভাবে সমাধানের চেষ্টা করব না।

যাত্রীদের মেট্রো স্টেশন এবং ট্রেন নোংরা করা থেকে বিরত রাখতে অবিলম্বে এবং মোটা জরিমানা করতে হবে।সেই সাথে টয়লেটগুলিকে যাতে টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।কিন্তু একটা বড় অংশের মানুষ টয়লেটগুলিকে টয়লেট হিসাবে ব্যবহার করার পাশাপাশি আবর্জনার ফেলার ডোবা হিসাবে ব্যবহার করছে, যার ফলে টয়লেটের নিকাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি টয়লেট এবং ডাস্টবিনের মধ্যে পার্থক্য করতে জানি না, না কি পরিচ্ছন্নতা ব্যাপারটাকে আমরা পাত্তাই দিই না?

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি একজন ব্যক্তি যতই অশিক্ষিত বা অনভিজ্ঞ হোক না কেন, তাদের বাড়ির টয়লেটগুলিকে নিশ্চয় ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে না।এটা ঠিক যে নাগরিক হিসেবে সরকারি সম্পত্তির মালিকানা আমাদের নেই।তবে আমাদের চারধারে যেভাবে পাবলিক সম্পত্তির ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তা বন্ধ করতে কেউই আগ্রহী নয় – না নাগরিক, না প্রশাসন, না রাজনীতিবিদ ।

তবে এক্ষেত্রে যে সমস্ত দোষ যে যাত্রীদের তাও দেওয়া যায় না। মেট্রো রেলের নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও দুর্বল পরিকল্পনার দায় বহন করতে হবে।উদ্বোধন করা স্টেশনের প্রতিটিতে মাত্র ৩টি করে টয়লেট রয়েছে, একটি পুরুষদের জন্য, একটি মহিলাদের জন্য এবং একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য। টয়লেটের আকারও খুবই ছোট, তবে জানা গেছে হাওড়ার টয়লেটটি সবচেয়ে বড়।যে রুটে প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ যাত্রী যাতায়াত করে সেখানে স্টেশনে মাত্র তিনটি টয়লেট এটি কোন ধরনের রসিকতা ?যেখানে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায় করে এই নতুন মেট্রো পরিষেবা শুরু করল সেখানে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে আর কি কয়েকটি টয়লেট তৈরি করা যেত না ? আমি নিশ্চিত যাত্রী ও জনসাধারণের সুবিধার জন্য আরও কিছুটা ব্যয় করা যেত। সর্বোপরি, এটি একটি ‘পাবলিক’ পরিবহন ব্যবস্থা।

পাবলিক হাইজিন এবং স্যানিটেশনের ইস্যুতে আমাদের ঢিলে মানসিকতা নতুন কিছু নয়। কলকাতার  রাস্তাগুলিতে পাবলিক টয়লেটের উপস্থিতি সত্বেও লোকের বাড়ির দেওয়ালে টয়লেট করা এক অতি পরিচিত দৃশ্য। এছাড়াও, যে কোনও জায়গায় আবর্জনা ফেলার জন্য আমাদের ঝোঁক প্রায় বিরক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।রাজ্যের সর্বত্র বিশেষকরে সবজি বাজারগুলিতে দুর্গন্ধ পরিষ্কার করার কোনো তাগিদ না প্রশাসন না পাবলিক কারও আছে বলে মনে হয় না।যখন কলকাতার একটি চা এর দোকানে বসা কিছু লোককে রাজ্যের সর্বত্র শহর থেকে গ্রাম জমে থাকা আবর্জনা নিয়ে প্রশ্ন করি তখন তাদের জবাব”আমাদের শহর দেশের অনেকের চেয়ে পরিষ্কার – কোন সমস্যা নেই।”যখন একটি সমস্যার অস্তিত্ব স্বীকার করতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়, তখন সমাধানের কোনো আশা থাকে না।সুতরাং সরকার যতই খরচ করে স্বচ্ছ ভারত বা নির্মল বাংলা অভিযান করুক না কেন স্বচ্ছতা অধরাই থাকবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top