অনুগল্প- জয় মা সরস্বতী


অসীম পাঠকঃ দুপুর থেকেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি , অথচ না বেরুলেই নয়। একটু বেলা থেকেই জ্বরটা বেড়েছে রাজার। বাড়ির সবাই গেছে গ্রামে। ওখানে ধূমধাম করে সরস্বতী পূজো ও তার পরদিন হরেক রকম মাছ মুখরোচক সব সব্জী দিয়ে পান্তাভাতের অনুষ্ঠান। সাথে পিঠে পুলির আয়োজন ও সন্ধ্যায় যাত্রা পরদিন বাইরে থেকে ভালো শিল্পী নিয়ে ব্যান্ডের অনুষ্ঠান। সে একাই বাড়িতে রয়ে গেছে।
বাড়ির লোকদের ফোন করে বিব্রত করতেও মন চাইছে না রাজার। বাড়ির সবাই যাবার পর থেকেই শরীরটা ভালো নেই। গতকাল বিকেল থেকেই গা ম্যাজম্যাজ হাত পা ব্যাথা
ঘুসঘুসে জ্বর। ওষুধ দোকান এবং স্থানীয় ডাক্তারের ডিসপেনসারী বাড়ি থেকে দু কিমি তো হবেই।
নাঃ উঠতে চেষ্টা করেও পারলো না, মাথা ঘুরছে। শরীর বেশ দুর্বল। আজ সরস্বতী পূজোর দিন কাকে আর কষ্ট দেবে। সবাই তো কলেজের উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা। কলেজের পূজো মানেই ভ্যালেন্টাইন ডের অনুভূতি। সাতপাঁচ না ভেবেই তার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের মেসেঞ্জার গ্রুপে একটা ছোট্ট মেসেজ লিখে দিলো- দেবী সরস্বতীর আরাধনার দিনে বিষন্ন একাকী ,শরীর ভালো না থাকলে কোথায় আর সরস্বতী আর কোথায় স্ফূর্তি। ব্যাস আধঘণ্টা পর দেখলো তেমনই অবস্থায় মেসেজ পড়ে, দু একজন সিন করলেও নো রিপ্লাই, আরও সময় গড়িয়েছে। থার্মোমিটারে জ্বর একশো তিন। অবসন্ন হয়ে পড়‍ছে রাজা। বাইরে ঘনায়মান সন্ধ্যার অন্ধকারে বৃষ্টির দাপট বেড়েছে। মাঘ শেষের বৃষ্টি, ঠান্ডা টাও বেশ জাঁকিয়ে লাগছে। লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে রাজা। এমন সময় ডোরবেল বেজে ওঠে, দরজা খোলার সামর্থ্য নেই। তবুও নিজেকে টেনে হিঁচড়ে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে পাল্লা খোলে। ভেতরে ঢোকে মফস্বলের একমাত্র এম বি বি এস রতন ডাক্তার। পেছনে আর একটা একটা চেনামুখ , তাহের আলি। একই ডিপার্টমেন্টের ছেলে, কম কথা বলে মিশুকে একদমই নয়। তাহের বলে , একদম ভাববি না রাজা , তোর মেসেজ পেয়েই আমি ডাক্তার বাবুকে নিয়ে এলাম। একটু দেরী হয়ে গেলোরে সরি।
ডাক্তার বাবু জ্বর দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। একটা প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলেন। বললেন ঘাবড়াবার নেই , ইনফ্লুয়েঞ্জা , আসলে আজকের দিনটাতে সময় করাই মুশ্কিল। চারদিকে উৎসবের মেজাজ, আর যা ডি জে র আওয়াজ। তার উপর বৃষ্টি। এবার ডাক্তারকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেবার জন্য বেরিয়ে যায় তাহের। কিছুক্ষন পর ওষুধ সহ রাজার বিছানার পাশে তাহের দাঁড়ায়।
কে বলবে ভারতবর্ষ জুড়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানি চলছে। টেলিভিশনের পর্দায় ভাসে পূজো নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক জায়গায় হিন্দু মুসলিম সংঘর্ষ। বেশ কিছু এরিয়ায় মিলিটারি টহল চলছে।
আসলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ মৌলবাদের আখড়া হয়ে উঠছে। ওখানে মন্দির ভেঙে ফেলা হচ্ছে। হিন্দুদের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তার কিছু প্রভাব কাঁটাতারের এপারেও আছড়ে পড়ছে।
অথচ পশ্চিমবঙ্গের অখ্যাত এক ছোট্ট শহরে দুই বন্ধু নির্ভেজাল ভালোবাসার আড্ডায়। রাজা তাহেরের হাত ধরে তার বিছানায় বসিয়ে বলে থ্যাংকস জানাবার সাহস নেই রে। তুই আজ যে উপকার করলি তাই আমি সারাজীবন মনে রাখবো। তাহের বলে , চুপচাপ শুয়ে থাক, মাকে বলে এসেছি আজ রাতটা তোর সাথে থেকে সকালে ফিরবো। আর হ্যাঁ ইনফ্লুয়েঞ্জাতে খাবার অসুবিধা নেই , দুটো মোগলাই পরোটা নিয়ে এসেছি একটু পরে ওটাই আমাদের ডিনার।
কে পুষ্পাঞ্জলি দিলো আর কে ফ্যাশন করে পূজোতে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরলো সব যেনো দূরের কোলাহলে মিলিয়ে গেলো। দেয়ালের উপরে মা সরস্বতীর ছবির দিকে তাকিয়ে দুজনেই বলে ওঠে জয় মা সরস্বতী।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top