সুপার পটেটোর অনুসন্ধান – বিজ্ঞানীরা আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করেছেন

আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করেছে গবেষকরা ছবি – উত্তরাপথ

উত্তরাপথঃ আলু বহু শতাব্দী ধরে রান্নার বহুমুখীতা এবং উচ্চ পুষ্টির মানের জন্য খাদ্যের একটি প্রধান উৎস। আলু আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোণে উৎপাদিত হয়, যা আলুকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ফসলগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে । বছরের পর বছর ধরে, বিজ্ঞানীরা আলুর ফলন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টি উপাদান উন্নত করার জন্য এবং আরও ভাল আলুর জাত প্রজননের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। আলুর জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করেছেন যা আলু গবেষণা এবং প্রজননে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত হবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা ।

 গবেষকরা আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করে আলু গবেষণা এবং প্রজননে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক স্থাপিত করেছে।বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় জিনোমগুলি বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা আলু প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্যের একটি সমৃদ্ধ ট্যাপেস্ট্রি চিহ্নিত করেছেন। তারা বিভিন্ন পছন্দসই বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী অসংখ্য জিন আবিষ্কার করেছে, যেমন সাধারণ রোগের প্রতিরোধ, খরা এবং তাপ সহনশীলতা, উন্নত পুষ্টি উপাদান এবং উন্নত কন্দের গুণমান ইত্যাদি।

আলুর গবেষণায় এই অগ্রগতি শুধুমাত্র আলু প্রজননকারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবেনা বরং বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে । সুপার প্যানজেনোমের সাহায্যে, আমরা দীর্ঘমেয়াদী আলু চাষকে উৎসাহিত করতে পারি যা ক্রমবর্ধমান বিশ্বের জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে আরও পুষ্টিকর এবং দীর্ঘ মেয়াদী আলুর জাতগুলি বিকাশ করতে পারবে।

এবার আসা যাক “সুপার প্যানজেনোম” প্রসঙ্গে । আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে প্যানজেনোম কী। প্যানজেনোম হল একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির মধ্যে পাওয়া জিনের সম্পূর্ণ সেট, যার মধ্যে রয়েছে মূল জিনোম (সব ব্যক্তির মধ্যে উপস্থিত জিন) এবং ডিসপেনসেবল জিনোম (ব্যক্তির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন জিন)। প্যানজেনোমিক্স একটি প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্যের একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা বিজ্ঞানীদের জিনগত বৈচিত্র্যের সম্পূর্ণ পরিসর অন্বেষণ করতে সাহায্য করে।

প্যানজেনোম পদ্ধতি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, বিশেষ করে শস্যগুলিতে, কারণ এই পদ্ধতিতে গবেষকরা সমস্ত প্রজাতির মধ্যে লুকানো সম্পূর্ণ জেনেটিক তথ্য উন্মোচন করতে পারে। এই তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ফলন এবং পুষ্টি উপাদানের মতো উন্নত বৈশিষ্ট্য যুক্ত ফসলের নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করতে পারে ।

এই নতুন প্রযুক্তিতে গবেষকরা প্রায় ৩০০ ধরনের আলু এবং তাদের বন্য কাজিনের জিনোম ক্রম সংকলন করেছেন যাতে আরও পুষ্টিকর, রোগ প্রতিরোধী এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থিতিস্থাপক ফসল তৈরি করা যায়।বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ক্রমবর্ধমানভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে এনেছে।ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আলুর স্থিতিস্থাপকতা এবং পুষ্টির মান উভয়ই বাড়ানোর পদ্ধতিগুলি অন্বেষণ করছেন৷  প্রফেসর মার্টিনা স্ট্রোমভিকের নেতৃত্বে, দলটি জেনেটিক বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে একটি আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি করেছে  যা ভবিষ্যতের আলু প্রজনন কর্মসূচির জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে ।

আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানীদের দ্বারা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ । ক্রমবর্ধমান বিশ্ব জনসংখ্যার সাথে বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ তাদের পুষ্টিকর খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান সরবরাহ করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।যেহেতু আলু, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ফসল, তাই আলুর সুপার প্যানজেনোম তৈরির প্রচেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সুপার প্যানজেনোমে উপস্থিত জিনগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে, বিজ্ঞানীরা এবং প্রজননকারীরা ভবিষ্যতে আরও উন্নত আলুর জাত উদ্ভাবন করতে পারবে যা কীটপতঙ্গ, রোগ এবং পরিবেশগত চাপের জন্য আরও স্থিতিস্থাপক হবে। এটি কৃষকদের ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং রাসায়নিক কীটনাশক ও সারের উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে,যা আলু চাষকে আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলবে।

আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরির আলু প্রজননের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে, প্রজনন কর্মসূচি সীমিত সংখ্যক অভিভাবক জাতের উপর নির্ভর করত, যার ফলে একটি সংকীর্ণ জিন পুল তৈরি হয়। সুপার প্যানজেনোমের সাহায্যে, প্রজননকারীরা জেনেটিক উপাদানের অনেক বিস্তৃত পরিসরে অ্যাক্সেস করতে পারে, যা উন্নত আলুর জাত তৈরির সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে।আলু প্যানজেনোম তৈরি করতে, গবেষকরা কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পেরুর জিন ব্যাংক সহ পাবলিক ডেটাব্যাঙ্ক থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেছিলেন।

আলু সুপার প্যানজেনোম তৈরি আলু গবেষণা এবং প্রজননে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করে।গবেষকদের মতে, প্রায় ১০.০০০ বছর আগে দক্ষিণ পেরুর পাহাড়ে প্রথম আদিবাসীদের দ্বারা এই গুরুত্বপূর্ণ ফসলের চাষ শুরু হয়েছিল।গবেষকদের আশা আলুর বিবর্তন সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এই প্যানজোম।যা জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলুকে একটি সুপার স্পুড তৈরি করতে সাহায্য করবে ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top