৪০০০ বছর আগেও কি ইরানের মহিলারা লিপস্টিক পরতেন? কবর থেকে বেরিয়ে এল এমন তথ্য

উত্তরাপথঃ সম্প্রতি গবেষকরা ইরানে একটি আশ্চর্যজনক আবিষ্কার করেছেন যা প্রাচীন সৌন্দর্য অনুশীলন সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারনা বদলে দিতে পারে। ইরানের ইসফাহান শহরে অবস্থিত ৪০০০ বছর আগের একটি সমাধিস্থল খনন করার সময়, প্রত্নতাত্ত্বিকরা গয়না এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে সজ্জিত একজন মহিলার দেহাবশেষ পান। কবরে পাওয়া নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি লাল পদার্থে ভরা একটি ছোট পাত্র ছিল যা আধুনিক লিপস্টিকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।এই থেকে গবেষকদের ধারনা যে প্রাচীন ইরানের মহিলারা লিপস্টিক পরে থাকতে পারে।বিশদ বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন অনুসারে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে মারহাসি সভ্যতার সময়ও প্রসাধনী ব্যবহার করা হত।এই সভ্যতা এখন পূর্ব ইরান নামে পরিচিত।

সমীক্ষা অনুসারে, এই লিপস্টিকটি ১৯৩৬ থেকে ১৬৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের।এই সূক্ষ্ম লিপস্টিক বক্সটি ২০০১ সালে প্রথম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, যখন ইরানের হালিল নদী প্লাবিত হয়েছিল এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে পুরানো কবরগুলিকে ধুয়ে দিয়েছিল।  এ কারণে সেগুলোতে রাখা জিনিসপত্রও বেরিয়ে আসে।সেখানকার এক স্থানীয় খবরে প্রকাশ, এই লিপস্টিকটি এখন জিরফট আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামে রাখা আছে।

আবিষ্কারটি গবেষকদের হতবাক করেছে, কারণ লিপস্টিক সাধারণত সাম্প্রতিক সভ্যতার সাথে জড়িত। প্রসাধনী, বিশেষ করে লিপস্টিকের ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরে নারী সৌন্দর্য ও ক্ষমতায়নের প্রতীক। যাইহোক, প্রাচীন ইরানের মহিলারা তাদের চেহারা সুন্দর দেখানোর জন্য লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারে এমন ধারণা আগে শোনা যায়নি।

 এই গবেষণার জন্য, গবেষকরা বাক্স থেকে আলগা গাঢ় বেগুনি রঙের পাউডার বের করেছেন।যা প্রমান করে যে এই পাউডারটি হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট, ব্রুনাইট, গ্লেনা, অ্যাঙ্গেল সাইট এবং উদ্ভিদ ভিত্তিক মোম দিয়ে তৈরি।সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যেটা সামনে এসেছে তা হল যে লিপস্টিকগুলি থেকে আজকের লিপস্টিকগুলি তৈরি করা হয় সেই উপাদানগুলি থেকে সেই সময় লিপস্টিকগুলি তৈরি করা হয়েছিল।

লিপস্টিক বক্সটিও সবুজ ক্লোরাইট দিয়ে তৈরি।এ বিষয়ে গবেষক বলেন, এই পাত্রটি জিরফ্ট সংস্কৃতির অন্যান্য পুরানো ক্লোরাইট নিদর্শনের সাথে মিলে যায়।  এছাড়া এর গঠনেও কিছু অনন্য ডিজাইনও রয়েছে।গবেষণার সহ-লেখক আর্থার ম্যাসিমো ভিডালের মতে, পাত্রের আকার সেই যুগের পাত্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।  যা থেকে মনে হয় সেই যুগেও কসমেটিক পণ্যের ব্র্যান্ডিং, প্যাকেজিং এবং ব্যবসা বিশেষ পদ্ধতিতে হতো। এটি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল যাতে তাদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।  ঠিক যেমনটা আজও হয়।এ ছাড়া লিপস্টিকে সুগন্ধ থাকার সম্ভাবনা  নিয়েও দাবি গবেষকদের।কারণ, এতে ভেজিটেবল ফাইবারও যুক্ত হয়েছে।গবেষকদের ধারনা এই লিপস্টিক সেই যুগের বিলাসিতা প্রতীক হতে পারে, যা প্রাচীন যুগের উচ্চ শ্রেণীর মহিলারা পরতেন।

খননকার্যের প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক ডঃ ফারাহ আপুর এই সন্ধানে তার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। “আমরা সর্বদা জানতাম যে প্রাচীন সভ্যতাগুলি সৌন্দর্য এবং সাজসজ্জাকে মূল্য দেয়, কিন্তু এই সমাধিস্থলে লিপস্টিকের আবিষ্কার সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল।“

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top