এবার শিক্ষা ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ রাজ্যের

উত্তরাপথঃ ১০০ দিনের কাজের পর সমগ্র শিক্ষা অভিযানে’ বরাদ্দ ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা আটকানো হবে বলেই শিক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর। শুধু বাংলা নয়, ভোটের ঠিক প্রাক্কালে এই খাতে টাকা আটকানো হচ্ছে দিল্লি, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে ‘পিএম-শ্রী’ বা পিএম স্কুলস ফর রাইজিং ইন্ডিয়ায় অনাগ্রহ। এই পাঁচ-ছ’টি রাজ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি। পাঞ্জাব শুরুতে রাজি হয়েও পরে সরে এসেছে। তারই সাজা হিসেবে কোপ বসানো হচ্ছে প্রাপ্য অর্থে। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৩-’২৪) সমগ্র শিক্ষা অভিযানে বাংলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৭২ কোটি দেওয়া হয়েছে। বাকি ১ হাজার ২৭৩ কোটি আপাতত আটকে রাখা হচ্ছে। পিএম-শ্রী প্রকল্প রূপায়ণে রাজি হলে তবেই মিলবে সেই টাকা।

আবার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে (আরএমএসএ ) রাজ্যে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বাড়লেও রাজ্যের আটটি জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ভাগ্যে প্রাপ্তি তেমন কিছুই নেই ৷ তার মধ্যে আবার একেবারেই উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে শিক্ষা উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা মুর্শিদাবাদ ৷ সেই সঙ্গে দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ারও৷ এই তিন জেলার কোনও স্কুলের নামই হয়নি কোনও বরাদ্দ ৷ যদিও ১২টি জেলার একগুচ্ছ স্কুল লক্ষ লক্ষ টাকার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেয়েছে৷ কেন এই বঞ্চনা , তা নিয়ে শুরু হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন৷ তবে স্কুলশিক্ষা দন্তরের কর্তারা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করছেন না৷ বিকাশ ভবনের এক কর্তার মতে , চলতি আর্থিক বছরের জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে প্রজেক্ট অ্যাপ্রুভাল বোর্ডের (প্যাব ) বৈঠকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে৷

 স্কুলে স্কুলে ভবন ও অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরি , শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ , পানীয় জল , ল্যাবের সরঞ্জাম , লাইব্রেরি কক্ষ তৈরি , শৌচাগার তৈরি , পড়ুয়াদের পোশাক প্রদান এবং ছাত্রীদের ভাতা খাতে ফি -বছরই অর্থ বরাদ্দ করা হয় আরএমএসএ প্রকল্পে৷ গত বছরের তুলনায় এই সব খাতে রাজ্যের বরাদ্দ বেড়েছে ৷রাজ্যের তরফে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের আর্জি জানানো হয়েছিল , দিল্লি ২৪৩ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছে ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের দশটি , বর্ধমান , কোচবিহার ও দক্ষিণ দিনাজপুরের আটটি করে , হুগলি , হাওড়া এবং বীরভূমের ২১টি স্কুল , দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়ার ৬টি করে , উত্তর দিনাজপুরের ৫টি , বাঁকুড়ার ৪টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার ৩টি স্কুল অর্থ পাচ্ছে৷ বাকি জেলাগুলি বঞ্চিত রইল কেন ? স্কুলশিক্ষা দন্তর সূত্রে খবর, স্কুলগুলি পরিকাঠামো উন্নয়নে আনুমানিক খরচের রিপোর্ট জেলা প্রকল্প আধিকারিকদের কাছে পাঠায়৷ তা মেনেই দিল্লিকে বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট পাঠানো হয়৷

মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক আবার রাজ্যের অফিসারদের অ্যাপ্রাইজালের জন্য ডেকে পাঠায়৷ সে সময় রাজ্যের আধিকারিকরা স্কুলভিত্তিক রিপোর্টে অর্থ বরাদ্দের পক্ষে যথাযথ সওয়াল করতে না পারলে পর্যান্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ জোটে না৷ তবে এক আধিকারিকের দাবি , ‘পরিবর্তনের পর সাড়ে সাত হাজারের বেশি সাহায্যপ্রান্ত স্কুল পোষিত স্কুলে উন্নীত হয়ে এই অর্থ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে৷ এ বার ২০টি জেলার ২০০টি স্কুলের তালিকা দিল্লিতে পাঠানো হয়৷ বেশ কিছু স্কুলের কোডিংয়ে সমস্যা ছিল এবং কেন্দ্রীয় নীতি মেনে পরিচালন সমিতিই গঠিত হয়নি৷ ফলে স্কুলের তালিকা দেড়শোর নীচে চলে আসে৷ সে সময় পিছিয়ে পড়া ও বড় জেলার স্কুলগুলির জন্য আধিকারিকদের দরবার করার দরকার ছিল৷ কিন্তু তাঁরা সেই সওয়াল করতে পারেননি বলেই রাজ্যের ৮টি জেলার স্কুল বঞ্চিত হয়েছে৷

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্ব মানবতার আলোয় যৌবনের পূজারী নজরুল

অসীম পাঠকঃ জীবনের প্রয়োজনে যুগের পরিবর্তন যেমন সত্য তেমনি যুগের প্রয়োজনে জীবনের আবির্ভাব অমোঘ। এই বাস্তব সত্যটিকে আরও গভীর ভাবে উপলব্ধি করার কাল এসেছে। তারই অভ্যাস অনুরণিত হচ্ছে দিকে দিকে। সর্বত্র আলোড়ন উঠেছে বিদ্রোহী কবির জীবন দর্শন নিয়ে , তাঁর আগুন ঝরা কবিতা নিয়ে। সর্বহারার কবি নজরুল ইসলাম। যারা বঞ্চিত অবহেলিত , নিপীড়ন আর শোষণের জ্বালা যাদের বুকে ধিকি ধিকি জ্বলে বুকেই জুড়িয়ে যাচ্ছিল দাহ, তাদের মূক বেদনার ভাষা দিয়েছিলেন নজরুল।পদদলিত পরাধীন জাতির বুকে স্বাধীনতার তৃষ্ণা জাগিয়েই তিনি শান্ত থাকেননি , দেশের সমাজের বুক থেকে মানুষে মানুষে বিভেদ ব্যাবধান দূর করবার ব্রত ও গ্রহন করেছিলেন। তিনিই প্রথম কবি যিনি সমাজের সমাজপতি দের ছলনার .....বিস্তারিত পড়ুন

ধানের সাধ ভক্ষণ : জিহুড়

ড.  নিমাইকৃষ্ণ মাহাত: আশ্বিন সংক্রান্তিতে কৃষক সমাজের মধ্যে জিহুড় পার্বণ পালিত হয়। কৃষক সাধারণের মধ্যে জিহুড় পার্বণের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জিহুড় অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তির সময় বহাল জমিতে লাগানো ধান বা বড়ান ধানে থোড় আসতে শুরু করে। সুতরাং ধান গাছ গর্ভাবস্থায় থাকে। মানুষের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের আচার-সংস্কার পালন করা হয়। এই সংস্কারগুলির অন্যতম হলো " ন' মাসি " অর্থাৎ গর্ভাবস্থার নবম মাসে যে আচার -অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই সন্তানজন্মগ্রহণ করে। মানব- সমাজের গর্ভাবস্থাজনিত এই ধরনের আচার সংস্কারের সঙ্গে ধান গাছের গর্ভাবস্থার কারণে পালনীয় অনুষ্ঠান জিহুড়ের সাদৃশ্য থাকে দেখা যায়। সেই জন্য অনেকে জিহুড় অনুষ্ঠানকে ধান গাছের 'সাধভক্ষণ'  বলে থাকেন। জিহুড়-এ ধান গাছ .....বিস্তারিত পড়ুন

ছৌশিল্পী পদ্মশ্রী নেপাল মাহতো ও বিশ্ব মঞ্চে ভারতের লোকনৃত্য

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ আমাদের চারিদিকে বিশ্ব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে,পরিবর্তিত হচ্ছে শিল্প সাধনার প্রকৃতি। এই পরিবর্তিত শিল্প সাধনার যুগে আমাদের সেই সমস্ত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং সম্মান করা অপরিহার্য যারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এমনই একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন ছৌশিল্পী পদ্মশ্রী নেপাল মাহতো। নেপাল মাহাতো, যার ছৌনৃত্যের জগতে  দেশে ও বিদেশে অতুলনীয় অবদান তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী´এনে দিয়েছে। নেপাল মাহতোর জন্ম ১৭ জুন ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বরাবাজার থানার আদাবনা নামে একটি ছোট গ্রামে। তার পিতা স্বর্গীয় নগেন্দ্রনাথ মাহাতো ও মাতা তুষ্ট মাহাতো। .....বিস্তারিত পড়ুন

এবার থেকে সংসদের কর্মীরা নতুন ইউনিফর্ম সহ ভারতীয় ঐতিহ্য প্রদর্শন করবে

উত্তরাপথঃ আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা ৩১ আগস্ট সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহলাদ যোশী করেছিলেন। অধিবেশন চলাকালীন কেন্দ্রের দ্বারা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ভারত রাখার প্রস্তাবও আনা হতে পারে।সংসদের বিশেষ অধিবেশন এগিয়ে আসার সাথে সাথে, কর্মীদের পরের সপ্তাহে নতুন ভবনে যাওয়ার সময় সংসদ কর্মীদের নতুন ইউনিফর্ম পরতে হবে।এই ইউনিফর্মগুলিতে ভারতীয় সংস্কৃতির উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । নেহেরু জ্যাকেট' এবং খাকি রঙের প্যান্ট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন ড্রেস কোড সংসদের উভয় কক্ষে কার্যকর করা হবে।ইউনিফর্মটি তৈরি করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (NIFT)। তবে নতুন সংসদ ভবনে আনুষ্ঠানিক প্রবেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত হয়েছে,সেদিন গণেশ চতুর্থীর একটি ছোট 'পূজা' অনুষ্ঠান হবে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top