

উত্তরাপথঃ সামগ্রিক সুস্থতার জন্য আমাদের অনুসন্ধানে, আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন ভেষজ প্রতিকারগুলি কীভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে তা দেখে অনুপ্রেরণাদায়ক। এরকম একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল Caesalpinia bonduc ভেষজ, যা Bonduc Nut নামেও পরিচিত, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষায় – বুদ্ধ শাকামুনির শিক্ষা সহ – সম্মানিত।
Caesalpinia bonduc এর প্রাচীনত্
প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক গুণাগুণ আজকের দিনে বিজ্ঞানের আলোয় আবার নতুনভাবে আবিষ্কৃত হচ্ছে। এমনই একটি আশ্চর্যজনক উদাহরণ হলো Caesalpinia bonduc, বা আমাদের পরিচিত বোনডাক নাট। হাজার বছর আগে এই ভেষজটি বুদ্ধ শাক্যমুনির শিক্ষায় উল্লেখিত ছিল। আর আজ আধুনিক গবেষণা বলছে—এই গাছটি আমাদের কিডনি রক্ষা করতে পারে!
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা Caesalpinia bonduc কে তার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহার করে আসছে। এটি Hjam-hbras এর মতো ফর্মুলেশনে বিশিষ্টভাবে উপস্থিত রয়েছে, যা কিডনি স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে সমর্থন করে বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে, সম্প্রতি পর্যন্ত, এর নির্দিষ্ট প্রভাবের বৈজ্ঞানিক বৈধতা সীমিত ছিল।


X-handle থেকে সংগৃহীত।
কী বলছে আধুনিক বিজ্ঞান?
সম্প্রতি প্রফেসর ভূষনার( Bhusnar) ও তাঁর গবেষকদল একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকাশ করেছেন । এই গবেষণায় তারা হজম–ভ্রাস (Hjam-hbras)নামক তিব্বতীয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধের মূল উপাদান বোনডাক নাট-এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন।তারা নেটওয়ার্ক ফার্মাকোলজি এবং বায়োইনফরমেটিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আবিষ্কার করেন, এই ভেষজটি কিডনি-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ জিন এবং রাসায়নিক পথের (signaling pathways) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। ফলে এটি কিডনির কোষকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং কিডনি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
বোনডাক নাট: ঐতিহ্য ও ব্যবহার
Caesalpinia bonduc বা বোনডাক নাট ভারতসহ এশিয়ার অনেক দেশেই পরিচিত একটি ভেষজ গাছ। এর বীজ ও পাতা বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ, ইউনানি এবং তিব্বতীয় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ঐতিহ্যগতভাবে এর ব্যবহার:
- জ্বর ও প্রদাহ কমাতে
- হজমশক্তি বাড়াতে
- রক্ত বিশুদ্ধ করতে
- কিডনি ও যকৃত পরিষ্কার রাখতে
আজকের বিজ্ঞান এই দাবিগুলো যাচাই করছে, এবং প্রাথমিক ফলাফলগুলো অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
বিজ্ঞান বলছে কীভাবে এটি কাজ করে?
গবেষণায় দেখা গেছে বোনডাক নাট:
- কিডনি কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়
- প্রদাহজনিত রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে
- Renin-angiotensin system, MAPK pathway, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বায়োকেমিক্যাল পথগুলোর সাথে যোগাযোগ করে, যা কিডনি রক্ষায় সহায়ক
কেন এখন এই প্রাকৃতিক সমাধান জরুরি?
বর্তমানে বিশ্বে কিডনি রোগ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং জীবনযাত্রার ধারা এই সমস্যার মূলে।বেশিরভাগ আলোপ্যাথিক ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন হওয়ায়, মানুষ এখন প্রাকৃতিক ও নিরাপদ বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে। ঠিক তখনই প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসার এমন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে।
বোনডাক নাট বা Caesalpinia bonduc কেবলমাত্র একটি প্রাচীন ওষুধ নয়—এটি আজকের আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এক নতুন আলো হয়ে উঠছে। কিডনি রক্ষায় এর কার্যকারিতা শুধু ঐতিহাসিক নয়, বরং গবেষণালব্ধও।প্রকৃতির কোষাগারে লুকিয়ে থাকা এই রত্নসম ভেষজটি আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে—“প্রাচীন জ্ঞান আর আধুনিক বিজ্ঞান একসাথে চলতে পারে!”
দ্রষ্টব্য: যেকোনো প্রকার ভেষজ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র Network Pharmacology Approach to Evaluate the Therapeutic Effects of Caesalpinia bonduc (L.) Components for the Nephroprotective Activity: Natural Product Chemistry. (2025). Innovation of Chemistry & Materials for Sustainability, 2(1), 23-31. https://doi.org/10.63654/icms.2025.02023
আরও পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন