

উত্তরাপথঃ আমাদের অনেকেরই পছন্দ মত খাবার হলেই বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যায়,যা পরবর্তীকালে অতিরিক্ত ওজনে পরিণত হয়। বর্তমানে সারা বছর প্রায় সব জায়গায় উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত হলেও এই খাবার কিন্তু মানুষের কোনো কাজে আসে না।গবেষকরা এই প্রথমবার দেখেছেন যে রান্না করা বা প্রক্রিয়াজাত খাবারে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যাকে উন্নত গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্ট বা AGEs বলা হয়, এটি ক্ষুধা বাড়ায় সেই সাথে এটি নির্দিষ্ট কিছু খাবার আমাদের খাবার ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
“ছোট নেমাটোড কৃমিতে করা বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাটি মানুষের খাদ্যতালিকাগত পছন্দ এবং নির্দিষ্ট কিছু খাবার অত্যধিক খাওয়ার প্রবণতার উপর ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে ,” বলেছেন বাক(Buck)-এর অধ্যাপক পঙ্কজ কাপাহি, পিএইচডি, গবেষণার সিনিয়র লেখক। “AGEs সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত আধুনিক খাদ্যগুলি খেতে প্রলুব্ধ করে কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের উপর তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি।” কাজটি সম্প্রতি The journal elife প্রকাশিত হয়েছে।
মানুষ কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে যা আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে খাবার খেতে উৎসাহিত করে। যা পরবর্তীকালে আমাদের গ্রহণ করা অতিরিক্ত ক্যালোরি চর্বি হিসাবে আমাদের দেহে সঞ্চয় হয় , আমরা উপবাসের সময় বেঁচে থাকার জন্য সঞ্চিত এই চর্বি ব্যবহার করি, ব্যাখ্যা করেছেন মুনিশ মুথাইয়ান শানমুগাম, পিএইচডি, কাপাহি ল্যাবরেটরির পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো এবং গবেষণার প্রধান লেখক। । গবেষকদলের মতে উন্নত গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্ট বা AGEs এর ব্যপক ব্যবহার নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে যেমন আবেদন বাড়াতে পারে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে AGE-এর অত্যধিক ব্যবহার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


AGEs হল বিপাকীয় উপ-পণ্য যা একটি প্রোটিন, লিপিড বা নিউক্লিক অ্যাসিডের অংশের সাথে চিনি একত্রিত হলে ঘটে। আমরা যখন বেকিং, ভাজা এবং গ্রিলিংয়ের দ্বারা তৈরি খাবার গুলি গ্রহণ করি তখন স্বাভাবিকভাবে আমাদের শরীরে AGEs প্রবেশ করে। শানমুগাম বলেন, “রান্নার সময় যে বাদামী রঙ দেখা যায়, যা খাবার এবং তার গন্ধকে আরও আকর্ষণীয় করে।মূলত, আমরা দেখতে পায় যে AGEগুলি খাবারকে আরও লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় করে যার ফলে লোভ সম্বরণ করা করা কঠিন হয়ে পড়ে।”
চিনি এবং প্রোটিন তাপের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে যে “বাদামী” প্রতিক্রিয়া ঘটে, যা রান্নায় শেফদের খুব প্রিয়, তাকে মেলার্ড প্রতিক্রিয়া বলা হয়। এর ফলে শত শত থেকে হাজার হাজার লোভনীয় AGE তৈরি হয়। Maillard প্রতিক্রিয়ার প্রধান বিশেষত্ব হল খাবারগুলিকে সুস্বাদু করে তোলার ক্ষমতা, এই সব খাবার গ্রহনের পর রাসায়নিকগুলি যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন এটি শরীরে সব ধরনের বিপর্যয় ঘটায়।এটি শরীরে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি সহ রক্তনালী শক্ত হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়বিক সমস্যার বিকাশে অবদান রাখে। বিভিন্ন অঙ্গে এই বিপাকীয় উপ-পণ্যের জমা হওয়া সম্ভবত বিভিন্ন অঙ্গ এবং সমগ্র জীবের বার্ধক্যের অন্যতম প্রধান কারণ। একবার উন্নত গ্লাইকেশন পণ্য তৈরি হয়ে গেলে, সেগুলিকে ডিটক্সিফাই করা যায় না।যেমন টোস্ট করার পর সাদা পাউরুটি বাদামী হয়ে যায়,সেটিকে আবার পুনরায় সাদা পাউরুটি করা যায় না অনুরূপ।গবেষকরা দেখেছেন যে এই রাসায়নিকগুলি রোগ সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘায়ু হ্রাস করার পাশাপাশি শরীরে কৃমির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন কিভাবে AGEs আমাদের খাবার ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত খাওয়াকে উৎসাহিত করে।প্রথমেই আসা যাক টেক্সচার এর প্রসঙ্গ, যা আমাদের লালসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাস্তা, কুঁচকে যাওয়া এবং ক্রিমি টেক্সচারের সংমিশ্রণ সহ খাবারগুলি একটি আনন্দদায়ক সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে। টেক্সচারের বৈসাদৃশ্য আমাদের স্বাদ গ্রহণকে উদ্দীপিত করে এবং আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে সক্রিয় করে, আমরা খাওয়া থেকে যে আনন্দ পাই সেই অনুভূতিকেও তীব্র করে। আলুর চিপসের আকর্ষণীয় ক্রাঞ্চ বা চকোলেটের ক্রিমি মসৃণতা সম্পর্কে চিন্তা করুন – এই টেক্সচারগুলি আমাদের অতিরিক্ত খাবার ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
সেই সাথে খাদ্যের উপস্থাপনা শুধুমাত্র নান্দনিকতা সম্পর্কে নয়; এটা আমাদের cravings প্রভাবিত করতে পারে. গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে দৃশ্যত আকর্ষণীয় খাবার আমাদের ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করতে পারে। প্রাণবন্ত রং, শৈল্পিক প্রলেপ, এমনকি উপাদানগুলির বিন্যাস একটি খাবার থালাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। খাবারের চাক্ষুষ আবেদন আমাদের মস্তিষ্কে খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছাকে আরও সক্রিয় করতে পারে, এবং আরও বেশি খাদ্য গ্রহণে লিপ্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে তোলে।
শরীরে AGE-এর পরিমাণ কমাতে এবং আমাদের খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গবেষকরা ভাজা বা গ্রিল করা খাবারের পরিবর্তে ভাপানো খাদ্য গ্রহণকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
Reference: “Methylglyoxal-derived hydro imidazoline, MG-H1, increases food intake by altering tyramine signalling via the GATA transcription factor ELT-3 in Caenorhabditis elegans” by Muniesh Muthaiyan Shanmugam, Jyotiska Chaudhuri, Durai Sellegounder, Amit Kumar Sahu, Sanjib Guha, Manish Chamoli, Brian Hodge, Neelanjan Bose, Charis Roberts, Dominique O Farrera, Gordon Lithgow, Richmond Sarpong, James J Galligan and Pankaj Kapahi, 20 September 2023, eLife.
আরও পড়ুন
৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল: হাইকোর্ট ও পর্ষদের টানাপড়েন অব্যাহত
উত্তরাপথ: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলা। বিচারপতির বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় এই শিক্ষকেরা অপ্রশিক্ষিত ছিলেন আর এই 'অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের' নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতির ত্রুটির কারণে এই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হল। .....বিস্তারিত পড়ুন
যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষও আমি
ড. জীবনকুমার সরকার: ৭ এপ্রিল ২০২৩ প্রয়াত হলেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষ। তাঁর প্রয়াণে দেশ ভারাক্রান্ত। যুক্তিবাদীরা চরম মর্মাহত। আমিও। তাঁর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলাম সে এক ইতিহাস। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পাস করে গাজোল হাইস্কুলে সবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। নতুন বইয়ের মধ্যে ডুবে আছি। আর নিয়মিত ক্লাস করছি। এইভাবে পুজোর ছুটি এসে যায়। পুজোর ছুটির আগের দিন অর্থাৎ যেদিন স্কুল হয়ে এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল, সেইদিন আমি আর রাজেন লাইব্রেরীতে যাই। রাজেন আমার ছাত্রজীবনের সেরা বন্ধু। দুজনে কী বই নেবো, কী ধরনের বই নিয়ে .....বিস্তারিত পড়ুন
ব্রিজভূষন সরণ সিং ও মোদী ইমেজ
উত্তরাপথ: কে এই ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং ? কি করে তিনি হঠাৎ খবরের শিরোনামে ? তার বিরুদ্ধে ভারতীয় রেসলারদের অভিযোগ সত্বেও কেন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছেনা ? বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করছে তবু সরকার চুপ ? এটা কি মোদী ইমেজে ধাক্কা নয় ? না কি ২০২৪ এর রাজনীতির বাধ্য বাধ্যকতা ? প্রথমে আসা যাক ব্রিজভূষন সরণ সিং প্রসঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপির বাহুবলী নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা, কায়সারগঞ্জ এবং বলরামপু .....বিস্তারিত পড়ুন
পরম সুন্দরী
মৈত্রেয়ী চৌধুরী: চাকরির বাজার ভীষণ মন্দা। পাত্র সৃজিত এম. এস.সি পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছে না। অগত্যা পরিবারের ব্যাবসার হাল ধরেছে। পারিবারিক সূত্রে তাদের মিষ্টির বেশ বড় দোকান রয়েছে। সৃজিত পড়াশোনা তে বেশ ভালো ছাত্র ছিল। প্রতিদিন সকালে পেপারে চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজা তার একটি কাজ। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বয়স তো থেমে থাকবে না। বাবা মা ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা কিছু দিনের মধ্যেই ছেলের বিয়ে দেবেন এরকম স্থির করেন। মোনালিসা ভূগোলে সদ্য এম.এ, পি. এইচ. ডি করে একই ভাবেই চাকরির খোঁজ করে যাচ্ছে। বাবা সুভাষ বাবু সরকারি .....বিস্তারিত পড়ুন