অসীম পাঠক


দক্ষিণ বঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাসটি বার কয়েক গোঁ গোঁ শব্দ করে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়লো। ড্রাইভার কোনোভাবেই স্টার্ট দিতে পারছে না। জ্যৈষ্ঠ মাসের কাঠফাটা দুপুর , কোলকাতা থেকে লালমাটির পুরুলিয়া গামী একটি বাস হঠাৎই যান্ত্রিক গলযোগে থেমে পড়ল। ড্রাইভার জানালো দেরী হবে। ঘন্টা দুয়েক যাত্রী রা কাছাকাছি বিশ্রাম নিতে পারেন। নিকটবর্তী শহরে যোগাযোগ করা হচ্ছে মেকানিকের জন্য।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো সব যাত্রীরা। ভিড় ঠাসা বাস থেকে খদ্দরের পাঞ্জাবী আর জিনস পরিহিত ব্যাগ কাঁধে নামলেন উদীয়মান সাংবাদিক বিমান ব্যানার্জি। সবে তার ক্যারিয়ার শুরু। জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেলের স্বল্প পরিচিত মুখ বি. বি। মোটা ফ্রেমের পুরু লেন্সের আড়ালে বুদ্ধিদীপ্ত দু চোখে ব্যাকুলতার সুস্পষ্ট ছাপ। মাইলস্টোনে দেখলো শ্রীকৃষ্ণ পুর। দুপাশে জংগল। একটু গঞ্জের মতো জায়গা। হাত বিশেক দূরে বাসযাত্রী প্রতীক্ষালয়। এই জংগলে মাঝে মাঝে হাতির দল হানা দেয়। বিমানের গন্তব্য স্থল সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে খ্যাত জয়চন্ডী পাহাড়। পাহাড়। শ্রীকৃষ্ণপুর তার পরিচিত জায়গা। বছর দশেক আগে একবার এসেছিলো, দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র সাথে। সেই স্মৃতি এখনো টাটকা। গ্রামে ঢোকার মুখে তাল তমালে ঘেরা বিরাট পুকুর। বাস স্টপে কয়েকটা ঠেলা তে চপ ঘুগনী ফুচকা আর খড়ের চাল দেওয়া দোকানে চা পকোড়া মুড়ি মেচা সন্দেশ গুড়ের লাড্ডু এসব ই পাওয়া যায়। সামনের চা দোকান গুলোর দিকে এগিয়ে যায় বিমান। দেখে নেয় গ্রামে ঢোকার মাটির রাস্তা এখন কংক্রিটের। আর দেখে মাটির দেওয়ালের বড়ো ঘরটা, বাইরে কাঠের মাচা। আচ্ছা ডাক্তার বাবু কি এখনো এখানে বসেন? দুপুর দেড়টা। দোকানপাট সব বন্ধ। যাত্রী রা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছের ছায়ায় বিশ্রামে মগ্ন, কেও বা সেলফিতে। দুঘন্টা সময় কম নয় ….. তবুও কনডাক্টর কে বলে, দাদা কতো দেরী হবে? একটু এই গ্রামের ভেতরে ঘুরে আসতাম। কনডাক্টর বলে আরামসে যান দাদা, আড়াই ঘন্টা র আগে নয়, দেড়টা বাজে চারটায় গাড়ি ছাড়বো, তার মধ্যে আসুন।
গ্রামের ভেতরে এগিয়ে যায় বিমান।
দশ বছর … সময়ের স্রোতে কোথায় দাঁড়ালো সে। একটা জঘন্য অপরাধ বোধ তাকে কুরে কুরে খায়। সে এসেছিলো এখানে তার এক পিসতুতো দাদার সহযাত্রী হয়ে। গঞ্জে র ডাক্তার মাধব বাবুর ছেলে অরুন ছিলো বিমানের দাদা সমীরের বন্ধু। সেই সূত্র ধরেই তার গ্রাম দেখতে আসা। সে তখন কলেজ স্টুডেন্ট। এখানে তখন ছিলো শরতকাল। বিকালে ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো হয়েছিলো। যে কয়েকটি বর্দ্ধিষ্ণু পরিবার রয়েছে গ্রামে তাদের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিলো সে সময়। আজো কি আকাশে ঘুড়ি ওড়ে? মাত্র দুটো দিন এখানে কাটিয়েছে। এলাকায় প্রায় চুরি হয় বলে ডাক্তার বাবুর ঘরের বারান্দায় একটা দোনলা বন্দুক শোভা পেতো। সব ছবির মতো মনে পড়ে বিমানের। সেবার দুপুরে চারাপোনার ঝোল আর ডিমের কালিয়া দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে বেশ লম্বা ঘুম দিয়েছিলো বিমান। ঘুম ভেঙিছিলো এক কিশোরী র মিষ্টি কন্ঠে। কেমন যেনো মায়াবী মুখ। বিমানের সমীরদার বন্ধু অরুনের বোন রিম্পা। ক্লাশ টেনের ছাত্রী। খিলখিলিয়ে হাসলে গালে টোল পড়তো রিম্পার। একবার ই তো দেখা। রিম্পা মজা করে বলেছিলো, কোলকাতার গুলো খালি ঘুমায়। চলো, ছাদে ঘুড়ি ওড়া হবে। ওখানেই চা খাবে। বিমান ছাদে গিয়ে দেখে সবাই ঘুড়ি ওড়ানোর তোড়জোড়ে লেগেছে। ডাক্তার বাবু এলাকার একমাত্র ডাক্তার। এম বি বি এস না হলেও পশার মন্দ নয়। বেশ রাশভারী। ঘুড়ি টা বিমান কোনোকালেই ওড়াতে শেখেনি। তার ভালোও লাগতো না। ছাদের সেদিনের আয়োজনে সে ছিলো নীরব দর্শক। পাশাপাশি বেশ কিছু বাড়ি থেকে ঘুড়ি উড়তে শুরু করে। সমীর বলে ঘুড়ি ওড়াটা একটা আর্ট, অরুন বলে নারে যুদ্ধ বললে ভুল হয়না। কতোরকম সব আয়োজন। গ্রাম্য বিনোদনের এক নির্ভেজাল টনিক।
সমীর বিমানকে দেখিয়ে রিম্পা কে বলে , এটাও তোর একটা মিনি দাদা। এ ভালো ছবি আঁকে। রিম্পা বেশ খুশী হয়ে বলে, মিনি দাদা কাল সকালে বাড়ির সদর দরজা য় একটা ঘুড়ি র ছবি এঁকে দেবে তো। হঠাৎ বিমানের খেয়াল হয় রিম্পার বাড়ির দরজায় তার সযত্নে আঁকা ঘুড়ির ছবিটা দশবছর পরে কেমন আছে দেখতে হয়তো ,,,, আছে কি নেই তার ই ঠিক নেই। পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে অগ্নিসংযোগ করে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে সামনে এগোয় বিমান। তার পা কাঁপছে। ডাক্তার বাবুর পরিবারের কেও যদি চিনে ফেলে ,,, তারপর ভাবে না সম্ভব নয় চেনা, মাত্র দুদিন, তারপর দশটা শরত পেরিয়ে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে সে অতীত হাতড়াতে ব্যাস্ত। আসলে যা হরিয়ে ফুরিয়ে যায় তাকে রোমন্থনের মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তি থাকে শান্তি থাকে।
বিমানের মানসপটে সব যেনো উজ্জ্বল থেকে উজ্বলতর। মনে পড়ে কচি পাঁঠার ঝোল মেখে ভাত খাওয়া। অরুনের সাথে বুনো হাঁস শিকার। জংগল ঘেরা গ্রামের মাঠে ভলিবল খেলা। আর দুটো বিকালে জমজমাট ঘুড়ি ওড়ানোর মেলা। দুদিনে সবার সাথে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিলো। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় অরুন সমীর দুজনে বাইকে করে দেশী মুরগির খোঁজ করে বেড়াচ্ছে, বোধহয় কাছের শহরে দু এক পেগ রঙিন পানীয় গিলেই আসবে। বিমান অবশ্য ও রসে বঞ্চিত। বিমান ছাদে সিগারেটে টান দিয়ে শরতের মেঘমুক্ত নির্মল আকাশে তারা দেখছে। হঠাৎই পরিচিত সেই খিলখিলিয়ে হাসি। পেছনে রিম্পা। বলে ওঠে মিনি দাদা তোমার আঁকা ছবিটা আমি মুছতে দেবো না কাওকে। বিমান গুনগুন করে গেয়ে ওঠে , ও আকাশ সোনা সোনা ,,,, গলা মেলায় রিম্পা, এ মাটি সবুজ সবুজ …. নতুন রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে ….. দুজন দুজনের মুখ পানে তাকায়। রিম্পা বলে বাঃ তুমি গান জানো। বিমান বলে তুমিও দারুন গান করো ….. এভাবেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তারা। তারাভরা আকাশের নীচে দুটি সবুজ প্রানে অনাবিল খুশীর উচ্ছ্বাস। রিম্পা বিমানের হাতে হাত রেখে দূরে বাঁশবনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে ওখানে পেত্নী থাকে। বিমান বলে আর আমার পাশে যেটা আছে সেটা কি শাঁকচুন্নী … রিম্পা কপট রাগে বিমানের ফোলা গালগুলো দুহাতে ধরে টান মেরে বলে, এই গলুমলু তুমি একটা কচ্ছপ। হঠাৎ কি হয় বিমানের নিজেই বুঝে উঠতে পারেনা,আচমকাই বুকে টেনে নেয় রিম্পাকে। রিম্পা যেনো যন্ত্র চালিতের মতো মোহাচ্ছন্ন। কোন বাধা দেয়না, মাংসল বুকে বিমান যেনো মিশিয়ে নিতে চায় রিম্পাকে, ঠৌটে ঠৌঁট রাখে। শরীরের উষ্ণতায় সংযমের পারদ গলতে শুরু করে।
হঠাৎই নীচে বাইকৈর শব্দে ঘোর কাটে দুজনের। বিমান মাথা নীচু করে ছাদের একপাশে সরে যায়। রিম্পা শুধু বলে, নীচে যাচ্ছি, চলে এসো। তারপর কিছু টা গিয়ে ফিরে এসে বিমানের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলে , কিছু ভাববে না।
এ কি করলো বিমান? গ্রামের স্কুলে পড়া সদ্য ফোটা এক কিশোরী মেয়ে, তার সাথে। পাপবোধে মাটিতে মিশে যেতে থাকে বিমান।
না সে রাতে তার দেশী মুরগির ঝোল খাওয়া হয়নি। মাথা ধরার অজুহাতে রুমের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে নিয়েছিলো। গোটা রাত চোখের পাতা এক হয়নি বিমানের। ভোরবেলায় যখন কোলকাতার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে, গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দেখেছিলো ছাদের উপরে এক নিষ্পাপ পবিত্র মুখের অসহায় করুন দৃষ্টি।
কোলকাতায় ফিরে রিম্পার একটা চিঠি পেয়েছিলো সে, রিম্পা লিখেছিলো তার কৈশোরের প্রেমকে তার সব কিছু নিবেদন করতে সে রাজি। আগামীর স্বপ্ন দেখে তাকে নিয়ে। বিমান সে চিঠির উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা, টুকরো টুকরো করে গঙ্গার জলে ফেলে দিয়েছিলো। কেননা তার পক্ষে এভাবে প্রেম করা সম্ভব ছিলো না। তার ভবিষ্যৎ পড়াশোনা সাংসারিক দায়িত্ব, অনেক চাপ ছিলো মাথার মধ্যে। তবে রিম্পার কাছে সে অপরাধী মনে করতো নিজেকে। হয়তো এই ক্ষনিকের ভুল, অপরাধ বোধ থেকেই সে এখনো বিয়ে করতে পারেনি কাওকেই, প্রেম তার জীবনে আর আসেনি।
এসব ভাবতে ভাবতেই আনমনা হয়ে পড়ে বিমান । কখন সে ডাক্তার বাবুদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে , নিজেই জানে না।
সম্বিত ফিরে আসে স্কুটির হর্ন এর শব্দে। পেছনে তাকিয়ে দেখে হলুদ স্কুটিতে গোলাপি চুড়িদারের উপরে সাদা এপ্রন পরা একটি মেয়ে। হেলমেট খুলে সে বলে, আপনি কি কাওকে চাইছেন? বিমান আমতা আমতা করে বলে, না মানে ওই বাসে আসছিলাম, বাসটা খারাপ হলো ভাবলাম গ্রামটা ঘুরে দেখি। মেয়েটি বলে, হ্যাঁ ওই রাস্তা দিয়েই আমি এলাম, আমি তো এখানের প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারে নার্সের জব করি। তা আপনি কি এই গ্রামে আগে এসেছেন। বিমান স্তম্ভিত হয়ে যায়, কি উত্তর দেবে। এরপর আশ্চর্য চমক, মেয়েটি হেলমেট খুলে বিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, মিনি দাদা একটু ঘোলের সরবত খাবে? বিমান আঁতকে ওঠে ,,, এ যে রিম্পা, রিম্পা বলে যাক বাবা শেষ অবধি সামনাসামনি দেখা টা হলোই। পালিয়ে বেড়াতে পারলে না।
এমন সময় এক বয়স্ক মহিলার কোলে একটি দু বছরের বাচ্চা ছেলে কাঁদতে কাঁদতে আসে। রিম্পা স্কুটি দাঁড় করিয়ে বাচ্চা কে কোলে তুলে বিমান কে বলে এটি আমার ছেলে বল্টু। যা বিচ্ছু। ঘুড়ি ওড়াবে তার বায়না। পাশের গ্রামেই বিয়ে ,,,,, কি করবো বলো, তুমি তো মগ্ন মৈনাক হয়ে গেলে। বিমান নিরুত্তর। তারপর বিমানের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে এই বেটু ওই মামা টা না দারুণ ছবি আঁকে। তারপর বিমানের দিকে ঘুরে বলে তোমার সব খবর রাখি, আলাদা একটা ফেসবুক আইডিতে তোমার ফ্রেন্ড লিষ্ট এ আছি। বিমান বলে ডাক্তার বাবু অরুন দা এরা সব ভালো আছে তো ?
রিম্পা বলে সব গল্প কি বাইরেই করবে। ভেতরে এসো, তোমার আঁকা ছবিটা দেখো বিবর্ণ হয়ে গেছে, তবুও আছে। বিমান বলে না আসলে বাস ছাড়বে তো। পরে আসবো কোনোসময়। রিম্পা বলে আর সময় হবেনা তোমার, বাবা গতবছর হঠাৎই হার্ট আ্যটাকে মারা গেলেন। দাদা দিল্লিতে থাকে, বৌ বাচ্চা সব সেখানে। আমার হাজবেন্ড প্রাইমারি স্কুল টীচার। আমি এখানে মায়ের কাছেই বেশী থাকি ।
চলো না একটু চা খেয়ে যাবে। বিমান বলে আজ থাক রিম্পা। দশ বছরে একদিনের জন্য ও তোমাকে ভোলা যায়নি বলেই আমি আজো একা। চললাম , আবার দেখা হবে। ভালো থেকো রিম্পা।
রিম্পার চোখের কোনে জল চিকচিক করে , …. বিমান কিছু দূর এগিয়ে হাত নাড়ে। রিম্পা বলে আমার ছেলের ভালো নাম ভালোবেসে রেখেছি বিমান। ডাকনাম বল্টু। কিছু না হোক লোক চক্ষুর সামনে ভালোবাসার নাম ধরে ডাকতে তো পারবো। বিমানের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, ফিরতে হবে …. তার চলার পথে ভালোবাসার মাইলস্টোন টা আজ বড্ড ফাঁকা, অবহেলায় যা হারিয়েছে অপরাধবোধে যে ভালোবাসার সলিলসমাধি ঘটিয়েছে সে ….. এভাবেই কত শত ভালোবাসার ফুল চোখের আড়ালে ঝরে যায় কে তার খবর করে। চারদিকে খবর করতে করতে সাংবাদিক বিমান নিজের খবর রাখতেই যে ভুলে গেছে। লাটাই বিহীন ঘুড়ি র মতো জীবন। ঝাপসা চোখে দেখে আকাশের নিঃসীম শূন্যতা য় দূরে কোথাও যেনো একটা ঘুড়ি উড়ছে।।
আরও পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন