জানেন কি পেঙ্গুইনরা দিনে ১০,০০০ বার, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঘুমায়

উত্তরাপথঃ আপনি হয়ত দেখে থাকবেন আমাদের মধ্যে অনেকেই একটানা বসে কাজ করার মাঝে হাল্কা ঘুমের অনুভুতি অনুভব করে এটি অপর্যাপ্ত ঘুমের একটি স্পষ্ট লক্ষণ ,তবে কিছু পরিস্থিতিতে এটি বিপজ্জনক হতে পারে যেমন গাড়ি চালানোর সময়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইনরা প্রতিদিন ১০,০০০  বার এই রকম হাল্কা ঘুমায়, গড়ে মাত্র চার সেকেন্ডের জন্য তাদের দৈনিক ঘুমের প্রয়োজন ১১ ঘণ্টারও বেশি।গবেষকদের অনুমান পেঙ্গুইনের প্রজনন স্থান গুলি কোলাহলপূর্ণ এবং চাপযুক্ত বিভিন্ন  শিকারী পাখি এবং তাদের আক্রমনাত্মক প্রতিবেশীর কারণে। তাদের এই ধরনের ঘুমের সময়সূচী  পেঙ্গুইনদের তাদের বাচ্চাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ওয়ান ইয়ং লি  যিনি ইনচনের Korea Polar Research Institute থেকে গবেষণা করেন কিভাবে প্রাণীদের আবাসস্থল তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে। প্রায় এক দশক আগে, তিনি অ্যান্টার্কটিকার কিং জর্জ দ্বীপে থাকতে শুরু করেন। সেই সময় তিনি  চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইনের (পাইগোসেলিস অ্যান্টার্কটিকাস) ঘুমের আচরণ সম্পর্কে অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। সেই সময় তার মনে হয় চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঘুমাচ্ছে ।

তারপরে, ২০১৮ সালে, লি জানতে পারেন যে কিছু সামুদ্রিক পাখি দিনব্যাপী বাতাসে ওড়ার সময় ঘুমিয়ে পড়ে। পরের বছর, লি অন্যান্য গবেষকদের সাথে চিনস্ট্র্যাপের ঘুমের তদন্তের জন্য দলবদ্ধ হন। তারা ১৪টি চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইনের প্রতিদিনের ঘুমের দিকে নজর দেয়। প্রসঙ্গত বিজ্ঞানীরা পাখির পিঠে স্লিপ-ট্র্যাকার বসিয়েছিলেন, তারপরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাখির মস্তিষ্কে এইগুলি সংযুক্ত করেছিলেন। এটি গ্যাজেটগুলিকে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করার অনুমতি দেয়। ডিভাইসের অন্যান্য যন্ত্র পেঙ্গুইনের গতিবিধি এবং অবস্থান রেকর্ড করে।

গবেষকরা জানতে পারেন নেস্টিং পেঙ্গুইনদের অবিশ্বাস্যভাবে ভাঙ্গা ঘুমের ধরন সম্পর্কে । তারা প্রতি ঘন্টায় ৬০০ টিরও বেশি “মাইক্রোস্লিপ” নেয়। প্রতিটি ঘুম গড়ে মাত্র চার সেকেন্ড। অনেক সময় পেঙ্গুইনরা তাদের মস্তিষ্কের অর্ধেক নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে;সেইসময় বাকি অর্ধেক জেগে থাকে। প্রতিদিন ১০,০০০ এরও বেশি সংক্ষিপ্ত ঘুম এবং বাকি অর্ধেক মস্তিষ্ক ১১ ঘন্টারও বেশি ঘুম দেয়।

এই প্রসঙ্গে গবে দলের গবেষকদের দলটি বেশ কিছু সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং অন্যান্য পাখির উদাহরণ তুলে ধরেন। ঘাতক-তিমি এবং ডলফিনের মায়েরা জন্ম দেওয়ার পর এক মাস পর্যন্ত জেগে থাকতে পারে ।গবেষক দলের মতে এই প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের সতর্ক থাকার প্রয়োজন হয় সেই কারণে তাদের অদ্ভুত ঘুমের ধরণ হয়। পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া সুস্থ মস্তিষ্ক এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেঙ্গুইনের অনেক মাইক্রোন্যাপ তাদের মস্তিষ্ককে অন্তত আংশিকভাবে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। ঘুম এর ধরন এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয় বলে মন্তব্য করে গবেষক দলটি। তাদের ধারনা , যে প্রাণীদের ঘুম সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অপ্রকাশিত আছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top