সম্পাদকীয়- মানুষ যেখানে মৌলিক প্রয়োজনগুলি পূরন করতে পারছেনা, সেখানে তাকে দেওয়া হচ্ছে ‘ধর্মের অহংকার’

আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে আমাদের দেশের প্রায় ৪২ শতাংশ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে একটা চাকরির আশায় ঘুরে বেরাচ্ছে, একটা বিরাট অংশের সাধারণ মানুষ নিজেদের মৌলিক প্রয়োজনগুলি পূরন করতে পারছেনা, এই রূঢ় বাস্তবতা প্রায়ই তাদের মধ্যে হতাশার অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে।অন্যদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এমন একটি উৎসব দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল যেখানে ধর্মকে ‘ধর্মের অহংকার’হিসেবে তুলে ধরা হল। আমাদের দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মের নেশায় মত্ত হয়ে ধর্মকে প্রতিযোগিতার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে ,এমন রাজনৈতিক সমাজের কিছু হওয়া কঠিন।

আমরা এমন একটি দেশে রয়েছি যেখানে দারিদ্র্য এবং অসমতা সেই স্বাধীনতার সময় থেকে আজও এক বাস্তব সত্য হিসাবে রয়েছে। আজও জনগণের একটি বিরাট অংশকে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সরকারের অনুদানের উপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের উন্নয়ন মূলক প্রকল্প ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে জনসংখ্যার এই উল্লেখযোগ্য অংশটি খাদ্য, বিশুদ্ধ জল, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং আশ্রয়ের মতো মৌলিক প্রয়োজনগুলি সহজেই পূরন করতে পারছে ঠিকই ,কিন্তু এটি সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনছে।যখন ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয়, তখন এটি তাদের অর্থনীতি এবং সমাজে অর্থপূর্ণভাবে অবদান রাখার ক্ষমতাকে বাঁধা দেয়। যার ফলস্রুতি সমাজে ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে, যা অনেক প্রান্তিক সম্প্রদায়কে মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব স্থিতিশীল কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ব্যক্তিদের বাঁধা দিচ্ছে যা দারিদ্র্যের চক্রকে স্থায়ী করছে।অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলিতে যথাযথ অবকাঠামোর অভাব এবং অত্যাধিক রোগীর চাপ সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার আমাদের রামের দয়ায় ছেড়ে দিয়েছে।স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে নাটক ছাড়া কিছুই হয়নি। আমি শুধু মোদি সরকারের কথা বলছি না, সব সরকারের কথা বলছি। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে কিছু বিল্ডিং বানানো হয়েছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করার সুযোগ হারিয়েছে। বীমার নামে জনগণকে বোকা বানানো সহজ।  এটি একটি সহজ প্রশ্ন, যখন হাসপাতাল নেই, শয্যা নেই, পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই  এবং  ওষুধেরও ঘাটতি রয়েছে  তখন বীমা করে কী করবেন? সাধারণ মানুষ ওষুধ কিনতে পারবে না। তাকে বেঁচে থাকার জন্য ওষুধের পরিবর্তে ধর্মের মহিমা দেওয়া হবে।সমাজ কি এতই অসাড় হয়ে গেছে ?

সরকারের উচিত একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি সমাধান করার সময় ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নত করতে ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। যেখানে মৌলিক প্রয়োজনগুলি পূরন করতে মানুষকে আর সরকারের উপর নির্ভর করতে হবে না , হতাশা থেকে মুক্তির  জন্য তাদের কোনও ধর্মের আশ্রয় নিতে হবে না ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top