

উত্তরাপথঃ কল্পনা করুন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) এর মতো ক্ষতিকারক দূষণকে দ্রুত এবং সস্তায় কার্যকর জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে কিনা। বিশ্ব যখন গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে এবং আরও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠার জন্য কাজ করছে, তখন এই ধরণের নতুন পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়, হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আজুল এনার্জি, ইনকর্পোরেটেডের বিজ্ঞানীরা CO₂ কে কার্বন মনোক্সাইডে (CO) রূপান্তর করার একটি নতুন উপায় তৈরি করেছেন। CO হল সিন্থেটিক জ্বালানি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় একটি মূল উপাদান। তাদের নতুন প্রক্রিয়াটি আগের তুলনায় অনেক দ্রুত – এটি 24 ঘন্টার পরিবর্তে মাত্র 15 মিনিট সময় নেয়।
তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিউ তেংজি ব্যাখ্যা করেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে CO₂ কে CO₂ এ রূপান্তর করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিগুলির সমস্যা ছিল: সেগুলি ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ সময় নিত,সেই কারণে কারখানাগুলির জন্য ব্যবহারিক ছিল না। আমরা এটি ঠিক করতে চেয়েছিলাম।”
এই প্রক্রিয়াটিকে আরও ভালো করার জন্য, গবেষকরা phthalocyanines (Pcs) নামক বিভিন্ন উপকরণ পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ধাতু-মুক্ত (H₂Pc), এবং লোহা (FePc), কোবাল্ট (CoPc), নিকেল (NiPc), এবং তামা (CuPc) এর মতো ধাতুর সংস্করণ। তারা এই অনুঘটকগুলিকে বিশেষ ইলেকট্রোডে স্প্রে করে প্রয়োগ করেছেন—একটি সহজ পদ্ধতি যা সরাসরি পৃষ্ঠের উপর একটি স্ফটিক স্তর তৈরি করে।
এর মধ্যে, কোবাল্ট phthalocyanine (CoPc) সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে। এটি একটি সস্তা রঙ্গক এবং ধাতব যৌগ। এই স্প্রে পদ্ধতি ব্যবহার করে, তারা প্রক্রিয়ার সময় কয়েক ঘন্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ১৫ মিনিট করে। ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিগুলিতে সাধারণত এক দিন সময় লাগে কারণ এতে মিশ্রণ, শুকানো এবং গরম করার ব্যাপার থাকে। এছাড়াও, নতুন সিস্টেমটি ১৫০ mA/cm² বর্তমান ঘনত্বে ১৪৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ভালভাবে কাজ করেছে, যা দেখায় যে এটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য।
বিজ্ঞানীরা একটি বৃহৎ ডাটাবেসের সাথে তাদের অনুঘটক পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এটি পূর্ববর্তী সমস্ত অনুরূপ অনুঘটককে ছাড়িয়ে গেছে, যা CO₂ কে CO₂ এ রূপান্তরের জন্য এখন পর্যন্ত সেরা পছন্দ করে তুলেছে।
কেন এটি এত ভালো?
লিউ বলেন, “আমাদের অনুঘটক কেবল অন্যদের তুলনায় ভালো কাজ করে না বরং দ্রুত এবং আরও স্থিতিশীলও – এগুলি শিল্প ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” কেন এটি এত ভালো কাজ করে তা বোঝার জন্য, দলটি উন্নত কৌশল ব্যবহার করে এর গঠন বিশ্লেষণ করেছে। তারা দেখেছে যে অনুঘটক স্ফটিকগুলিকে ঘন করে তোলা ইলেকট্রনগুলিকে মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে, প্রক্রিয়াটিকে আরও দক্ষ করে তোলে।
### পরিষ্কার জ্বালানির ভবিষ্যত
তাদের স্প্রে কৌশল এবং তড়িৎ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে CO₂ থেকে CO তৈরির এই নতুন পদ্ধতি আরও দক্ষতার সাথে এবং সস্তায় সিন্থেটিক জ্বালানি উৎপাদনের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। এটি CO₂ ক্যাপচার এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলি অতিক্রম করতে সাহায্য করে, দূষণকে দরকারী শক্তিতে রূপান্তর করার ধারণাটিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তোলে।
সামগ্রিকভাবে, এই প্রযুক্তির ভবিষ্যতে গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস এবং পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের একটি নতুন উপায় হয়ে ওঠার শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে।
#Phthalocyanine #The future of clean energy
সূত্রঃ “Surface Charge Transfer Enhanced Cobalt-Phthalocyanine Crystals for Efficient CO2-to-CO Electroreduction with Large Current Density Exceeding 1000 mA cm−2” by Tengyi Liu, Di Zhang, Yutaro Hirai, Koju Ito, Kosuke Ishibashi, Naoto Todoroki, Yasutaka Matsuo, Junya Yoshida, Shimpei Ono, Hao Li and Hiroshi Yabu, 4 April 2025, Advanced Science.
DOI: 10.1002/advs.202501459
আরও পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন