

ড. নিমাইকৃষ্ণ মাহাতঃ নাচনি নাচের উৎস সন্ধান খুবই দুরূহ কাজ । মানভূমের লোকসংস্কৃতির অন্যান্য অঙ্গের মতো নাচনি নাচের শুরু হয়েছিল কোন এক সুদূর অতীতে – একথা বলা যায় । লোকসংস্কৃতির অন্যান্য আঙ্গিক যেমন বিভিন্ন যুগ-পরিবেশে লোকসমাজে উদ্ভূত হয়ে সাধারণের মধ্যে লালিত , চর্চিত , অনুশীলিত হয়ে কালের কষ্টিপাথরে যাচিত হয়ে বংশপরম্পরায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত হয়ে চলেছে , নাচনি নাচও অনেকটা তাই।
দ্বিতীয় অর্থে – নাচনি কারও নয় । জীবন সংগ্রামের জ্বালায় জর্জরিত হয়ে এই রূঢ় পৃথিবীতে সে নিজের প্রাণ ধারণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রত । সেখানে সে প্রয়োজনে স্বামীকে ছেড়ে রসিকের কাছে বা এক রসিককে ছেড়ে অন্য রসিকের সাহচর্য বেছে নিতে বাধ্য হয় । এই পরিস্থিতিতে সে কারও নয় । আবার , মানভূমে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে , তা হল –


নাচ, নাচনি আর নাগর – এই তিন নিয়ে নাচনি।
লোকগবেষকরা মনে করেন ‘ নাচনি ‘ শব্দটি ‘ নাচ ‘ শব্দ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে । অনেকে ‘ নাই চিনি ‘ শব্দগুচ্ছথেকে ‘ নাচনি ‘ শব্দের উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করেন । অর্থাৎ নাচনিকে কেউ চেনে না বা নাচনি কাউকে চেনে না – এই ধারণা থেকেই ‘ নাচনি ‘শব্দটির লোক সমাজে প্রচলিত হয়েছে । প্রথম অর্থে নাচনি লোকসমাজে অচেনা , অবজ্ঞাত , অবহেলিত , প্রান্তিক শ্রেণির।
মানভূমের লোক সাধারনের মধ্যে নাচ ও গান স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসে যায় । অর্থাৎ এখানকার মানুষের নাচ-গান স্বভাবজ বলা যায় , রক্তের মধ্যেই রয়েছে । তাই কেউ ভালোবেসে নাচ- গানকে আশ্রয় করেন , কেউ জীবন- জীবিকার টানে একে আঁকড়ে ধরেন । নাচনি নাচের ইতিহাস অনেকটা এরকমই।
নাচনি নাচের উৎস সন্ধানকে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা করতে পারি । যেমন –
১ ) ইতিহাসগত দিক , ২ )সামাজিকদিক , ৩ ) সাহিত্যিক দিক ইত্যাদি।
ইতিহাসগত দিক
মানভূম , ধলভূম , গোপভূম , ভঞ্জভূম , শিখরভূম প্রভৃতি অঞ্চলের সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ইতিহাস – কিছুটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন । তাই , এই অঞ্চলে বিস্তারলাভ করা নাচনি নাচের উদ্ভব ও বিকাশের রূপরেখাও কুয়াশাচ্ছন্ন।
নাচনি নাচকে অশ্লীল , নিম্নরুচি ও নিম্ন শ্রেণির নাচ বলে দেগে দেওয়ার একটা প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে সমাজের বৃহত্তর অংশের মধ্যে রয়েছে । তাই , অনালোকিত ও অনালোচিত বা স্বল্প আলোচিত লোকায়ত এই নাচ সমাজের আলোকিত অংশের বাইরে রয়ে গেছে দীর্ঘকাল।
অনেক গবেষক মনে করেন সামন্ত , ভূস্বামী ও সমাজের অর্থবানদের মনোরঞ্জন ও বিনোদন দানের জন্যই নাচনি নাচের উদ্ভব ও ব্যাপ্তি । এ যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা অস্বীকার করা যায় না ।
এ বিষয়ে গড় পঞ্চকোট , গড় জয়পুর , গড় পাথরমহড়া , পাতকুম , বাঘমুন্ডি, হেঁসলা ও সরাইকেলার সামন্ত রাজাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমন , সিন্ধুবালাদেবী কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন । এই সমস্ত সামন্ত-রাজাদের উদ্যোগে যে বার্ষিক পরব অনুষ্ঠিত হত সেখানে ছৌ- নাটুয়া- বুলবুলি নাচের পাশাপাশি নাচনি নাচেরও আসর বসত। রাজারা নাচনিদের নানা উপহার ও নগদ অর্থ দিয়ে সম্মাননা জানাতেন । মানভুমেই এমন অনেক সামন্ত রাজা ছিলেন যাঁরা নাচনি – ঝুমুরের আকর্ষণে একটু একটু করে সব হারিয়ে কেবল ‘ রসিক ‘ হয়ে শেষ জীবন অতিবাহিত করেছেন । এ বিষয়ে বাঘমুন্ডির রাজা মদনমোহন সিংহ দেব ও ঝুমুরিয়া, রামকৃষ্ণ গাঙ্গুলির নাম সর্বাগ্রেই উল্লেখ করা যায় । এ কাহিনি প্রচলিত আছে যে ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের রাস উৎসবে একটানা ১৪ দিন ধরে নাচনি নাচ ও ঝুমুর গানের আনন্দে মগ্ন হয়ে বাঘমুন্ডির রাজা মদনমোহন সিংহদেব রাজকোষ শূন্য করে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন।
এছাড়া মানভূমের ছোট জমিদার বা সামন্ত প্রভুদের রাজ দরবারে বিনোদন মঞ্চ থেকেই মূলত নাচনি নাচ বা বাই নাচের উদ্ভব ও ব্যাপ্তি – একথা বলা যেতেই পারে ।
ইতিহাস থেকেও আমরা জানতে পারি দ্বাদশ শতাব্দীর সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন জয়দেব । কথিত আছে জয়দেবের স্ত্রী পদ্মাবতী নৃত্যকলা পারদর্শী ছিলেন । অর্থাৎ এক অর্থে জয়দেবকে নৃত্য পটিয়সী পদ্মাবতীর রসিক বলা যেতে পারে । শোনা যায়, জয়দেব রসিক হয়ে গান ধরতেন এবং স্ত্রী পদ্মাবতী সেই গানের সুরে- তালে- ছন্দ মিলিয়ে নাচ করতেন । মানভূমের লোকগবেষক ড. সুভাষ রায় তাঁর ‘পুরুলিয়াজেলার লোকসংস্কৃতি ‘গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন –
‘ কামতা কামরূপের রাজসভার কবি রাম সরস্বতীর ‘ গীতগোবিন্দ ‘ অবলম্বনে একটি কাব্য পাওয়া যায় । সেখানে আমরা দেখতে পাই , জয়দেব রসিক হয়ে গান ধরছেন এবং স্ত্রী পদ্মাবতী গানের তালে তালে সুললিত ছন্দে নৃত্য করছেন । ‘ ১


সেখানে তাই বলা হয়েছে –
‘ কৃষ্ণের গীতক জয়দেব নিদগতি ।
রূপক তালা চেবে নাচে পদ্মাবতী ।। ‘ ২
ভারতে মুসলিম শাসনকালেও নাচনি নাচ , বাই নাচ , খেমটি নাচের পরম্পরা ছিল । মুসলিম শাসকরা আমোদ-প্রমোদ ও মনোরঞ্জনের জন্য নাচনিওয়ালিদের ভরণ-পোষণ করতেন। তাঁরা ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে নাচ -গান জানা সুন্দরী রমণীদের ধরে এনে নাচ মহলে স্থান দিতেন । সুলতানি যুগে ও মুঘল যুগে নাচনিদের বিশেষ কদর ছিল।
সুলতানি শাসক গিয়াসুদ্দিন বলবন শাহ নাচনিদের জন্য আলাদাভাবে একটি নাচমহল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । মুঘল সম্রাট আকবর , জাহাঙ্গীর , শাহজাহান প্রমুখের রাজসভায় নাচমহলে সুন্দরী নাচনিওয়ালিদের উপস্থিতির কথা জানা যায়। এছাড়া আকবরের রাজ দরবারে ‘ নটচারণ ‘ নামে এক সম্প্রদায়ের উল্লেখ পাওয়া যায় যাদের মূল কাজ ছিল নাচ ও গান করে রাজার মনোরঞ্জন করা ।
দক্ষিণ ভারতের বাহমনী রাজ্যের রাজা দ্বিতীয় মহাম্মদ শাহ দিল্লী , লাহোর , পারস্য প্রভৃতি স্থান থেকে সুন্দরী নাচনিওয়ালিদের নিয়ে আসতেন ।
এমনকি কঠোর নিয়মশৃঙ্খলে থাকা মারাঠা শাসক শিবাজীও নাচমহলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও- এর সঙ্গে নর্তকী মস্তানির সম্পর্ক সুবিদিত । এই সম্পর্ক নিয়েও বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘ বাজিরাও মস্তানি ‘ নির্মিত হয়েছে ।৩ এছাড়াও পাঞ্জাবের শাসক রঞ্জিত সিংহ নাচনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
সুদূর বৌদ্ধযুগের অসামান্য নর্তকী আম্রপালী থেকে শুরু করে বর্তমান যুগের নাচনি শিল্পী সিন্ধুবালাদেবী, প্রমুখদের নাচনি নাচের যে পরম্পরা বহমান হয়ে চলেছে , তাতে বড় সম্রাট , বাদশাহ , ছোটো জমিদার , সামন্তপ্রভু প্রমুখের অবদান ও পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নাচনি নাচের উদ্ভব ও বিকাশে এইসব রাজা-সামন্ত প্রমুখের অবদান অনস্বীকার্য । ইতিহাসের পাতায় তার সাক্ষ্য রয়েছে।
নর্তকীদের প্রাগৈতিহাসিক , প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় সিন্ধু সভ্যতায় । বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরে দেওয়ালে , গুহাচিত্রে , ভাস্কর্যে নর্তকীদের চিত্র পাওয়া যায় ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে নাচনি নাচের একটি ঐতিহাসিক পরম্পরা রয়েছে ।
সামাজিক দিক
নাচনি নাচের উৎস সন্ধানে সামাজিক দৃষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । লোকায়ত সামাজিক জীবন থেকেই নাচি নাচের উৎপত্তি – একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় । মূলত জনসমাজেই এই নাচের চর্চা , কদর ও ব্যাপ্তি । জনসমর্থন ও জনমনোরঞ্জনের উপাদান না থাকলে এই নাচ শুধু ছোটো বড় জমিদার ও সামন্তপ্রভুদের নাচশালাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ত , আপামর লোকায়ত জনমনের সমর্থন পেত না।
নাচনি নাচের উৎস সন্ধানে সামাজিক দিকের আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমে ‘দেবদাসী ‘ প্রথার উল্লেখ করতে হয়।
এই প্রথায় দেখা যায় উচ্চ জাতের মেয়েদের দেব -দেবীর মন্দিরে উৎসর্গ করা হত। পুরীর মন্দির এবং দক্ষিণ ভারতের অনেক মন্দিরে এই দেবদাসীদের দেখা যেত। এমনকি যে মন্দিরে যত বেশি দেবদাসী থাকত , সেই মন্দিরকে তত বেশি সমৃদ্ধশালী ভাবা হত । এই দেবদাসীদের কাজ ছিল সকাল ও সন্ধ্যায় ঈশ্বরের সম্মুখে নাচ- গান পরিবেশন করা । বিশেষ বিশেষ পার্বণ এবং উৎসবেও তারা নৃত্য প্রদর্শন করত। ঈশ্বরের সামনে নাচ-গান করা তাদের মূল কাজ হলেও অনেক যুবতী দেবদাসী চারিত্রিক স্খলতার পথে স্থূলরসের নাচের দিকে এগিয়ে যায় । কেউ কেউ মন্দির থেকে বিতাড়িত হয়ে আদিরসের নাচের মাধ্যমে জনমনোরঞ্জন করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন । ফলে দেবদাসী প্রথার স্খলিত ও কিছু বিকৃত রূপকে কেন্দ্র করে
আদিরসাত্মক নাচনিওয়ালিদের সমাজে উদ্ভব ঘটে । পরবর্তীকালে বিভিন্ন সমাজ- সংস্কার আন্দোলনের ফলে দেবদাসী প্রথার অবলুপ্তি ঘটলেও আদিরসভিত্তিক নাচনি ওয়ালির অধ:ক্ষেপটি সমাজে রয়েই যায় ।
পন্ডিত হরেকৃষ্ণ সাহিত্যরত্ন- এর মতে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের ফলে বাংলাদেশে বৈষ্ণবীয়ভাব ও প্রেমরসের বন্যা হয়ে যায় । কিন্তু এই বন্যার ঢেউ কিছুটা স্তিমিত হলে অনেক কীর্তনীয়ার দল জীবিকা অর্জনের জন্য বৈষ্ণবের মার্জিত আধ্যাত্মিক রস ছেড়ে স্থূল- আদিরসকে বেছে নিতে শুরু করেছিল । তার ফলে বৈষ্ণবীয় ভক্তিভাব থেকে বিচ্যুত হয়ে , পদাবলী ত্যাগ করে অনেকে খেউর , কবিগান, ঝুমুর ইত্যাদি ধরেছিল এবং বৈষ্ণবীয় নৃত্য আঙ্গিক ছেড়ে খেমটা নাচ অবলম্বন করেছিল । এই খেমটা নাচ ক্রমবিবর্তিত হয়ে বর্তমান নাচনি নাচের রূপ পরিগ্রহ করেছে বলে অনেকে মনে করেন । যদিও এ কথা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য যে ঝুমুর ও নাচনি নাচের অস্তিত্ব এর আগে থেকেই ছিল । একটি প্রাচীন লোকগীতে নাচনি নাচের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায় –
‘ ঢোল বাজে , ধমসা বাজে , বাজেরে মহুরি
কত ছলে নাচনি নাচে দহলি দহলি । ‘
ক্ষেত্রসমীক্ষা করে নাচনি নাচের বিবর্তনের যে রূপটি সাধারণভাবে উঠে আসে তা হল
ধুমড়ি নাচ > বাই নাচ > নাচনি নাচ
সাহিত্যিক দিক
নাচনি নাচের উদ্ভব ও বিকাশে সাহিত্যিক দিকটি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে ।
অনেকে মনে করেন নাচনি নাচের উৎস হল মঙ্গলকাব্য , বিশেষ করে মনসামঙ্গল কাব্য । পশ্চিমবঙ্গীয় শাখার মনসামঙ্গল কাব্যে বেহুলাকে অনেকবার নাচনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে । কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের ‘ মনসাবিজয় ‘ কাব্যে বেহুলা নাচনির উল্লেখ আছে –
‘দেবতা সভায় গিয়া মৃদঙ্গ মন্দিরা লইয়া নৃত্য করে বেহুলা নাচনী। ‘
আজও যেমন লুব্ধ , লোলুপ অজস্র পুরুষ দৃষ্টির সামনে নাচনি নৃত্য প্রদর্শন করে তাদের মনোরঞ্জন করে , সেই কবে , পুরাণের কালে বেহুলাও তেমনি নাচনি হয়ে পুরুষদেবতাদের সন্তুষ্ট করে নিজের স্বামী লখিন্দরের প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন। কথিত আছে নেতা ধোপানি সেখানে বাজানদারের ভূমিকা নিয়েছিল।
পূর্ববঙ্গের কবি নারায়নদেব তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যে এক- দুবার বেহুলাকে ‘ নটি ‘ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বেহুলার গাওয়া গানকে ‘ নাটগীত ‘ বলে উল্লেখ করেছেন । নারায়ণদেব লিখেছেন –
‘ লখাই বাজায় খোল বেহুলা নাচনী ।’
মানভূমের কবি চৈতন্যদাস মন্ডল তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যেও অনেকবার বেহুলাকে নাচনি বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি লিখেছেন-
‘ বাণকন্যা ঊষা অনিরুদ্ধের রমণী।
হরশাপে হইয়াছে বেহুলা নাচনী। ‘
আধুনিক যুগের নাট্যকার ও নাট্য- অভিনেতা শম্ভু মিত্র তাঁর ‘ চাঁদ বণিকের পালা ‘ নাটকে সদ্য বিবাহিত লখিন্দরের জবানিতে উল্লেখ করেছেন – ‘ নাচুনী বেহুলা তুমি নিছনি কামিনি দ্বীপ হয়ো , অপরূপ দ্বীপ হয়ো আমার জীবনে। ‘
বেহুলার নাচ নাচনি নাচেরে ইঙ্গিতবাহী বলে অনেক গবেষক মনে করেন । মনসামঙ্গল কাব্যে ‘ নাচনী ‘ শব্দটির অনেকবার উল্লেখ থাকায় অনেকে মনসামঙ্গল কাব্যকে নাচনি নাচের আদি উৎস বলে মনে করেন।
বর্তমানে যেমন সমাজের তথাকথিত অন্ত্যজ শ্রেণির অর্থাৎ ডোম, বাউরি, বাগদি , তাঁতি , কামার , কুড়মি, সিংসর্দার , নাপিত , হাড়ি (সহিস) , কুম্ভকার, মুচি ইত্যাদি জাতি থেকে মূলত নাচনিরা উঠে আসে তেমনি সেই চর্যাপদের যুগেও অন্তজ শ্রেণি থেকেই নাচনিদের অস্তিত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় । চর্যাপদের চব্বিশ জন পদকর্তার মধ্যে প্রধান পদকর্তা কাণ্হপা-র একটি পদে আমরা ডোম সম্প্রদায়ের একজন নাচনির পরিচয় পাই –
‘ এক সে পদুমা চৌষঠঠী পাখুড়ী।
তহি মধ্যে নাচঅ ডোম্বি বাপুড়ী । । ‘
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নাচনি নাচের উদ্ভব ও বিকাশে ইতিহাসগত দিক ,সামাজিক দিক , সাহিত্যিক দিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । এই লোকায়ত আঙ্গিকটি বিভিন্ন আর্থসামাজিক ,সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে লোকসমাজে উদ্ভূত হয়ে লোক মনের সমর্থন লাভ করে আজও বহমান রয়েছে । কিন্তু বর্তমান যুগ -পরিবেশে নাচনি নাচের ধারা ও পরম্পরা কতদিন বহমান থাকবে তা জোর দিয়ে বলা যায় না । এখন বিভিন্ন বিনোদনের মাধ্যম মানুষের হাতের কাছে হাজির স্মার্টফোনের রকমারি অ্যাপ্লিকেশনে আধুনিক প্রজন্ম এখন মগ্ন। তারা এখন রাত জেগে নাচনি নাচ দেখতে যাওয়ার প্রতি চরম বিমুখ । পালা- পার্বণে , সামাজিক- পারিবারিক অনুষ্ঠানে নাচনি শিল্পীরা আজকাল আর বিশেষ ডাক পান না । নাচনি শিল্পীদের সন্তান-সন্ততিরাও আর এই পেশায় আসতে চায় না । মানভূমের নাচনি শিল্পীদের সংখ্যা কমতে কমতে আজ প্রায় ৭০ জনে দাঁড়িয়েছে । মানভূমের এই ধারাটি হারিয়ে গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই , সরকারি , বেসরকারি উদ্যোগে তথা সকলের সমবেত চেষ্টায় এই ধারাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ।
মূল তথ্যসূত্র :
১) পুরুলিয়া জেলার লোকসংস্কৃতি – ডক্টর সুভাষ রায় , টেরাকোটা , ডিসেম্বর ২০২১ পৃষ্ঠা : ১৮৩
২ ) ঐ
৩) মানভূমের নাচনিকথা : প্রবীর সরকার পুরুলিয়া দর্পণ , পূজা বার্ষিকী, ১৪২৪ ,পৃষ্ঠা ১৭২
আরও পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন