

ছবি -প্রতীকী
উত্তরাপথ: আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজির জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলাহয়েছে, পরিমিত অ্যালকোহল সেবন সম্ভাব্য মানসিক চাপের মাত্রা হ্রাস করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এই নতুন গবেষণা মানব স্বাস্থ্যের উপর অ্যালকোহলের প্রভাব সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিতর্ককে একটু কম করতে সাহায্য করবে । সেইসাথে মাঝারি অ্যালকোহল সেবনের সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাবগুলির উপর আলোকপাত করেছে ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের গবেষকদের একটি দল , মাঝারি অ্যালকোহল সেবনের সাথে, মানসিক চাপের মাত্রা এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের সম্পর্ককে তদন্ত করেছে। গবেষকরা দীর্ঘ সময় ধরে গবেষনায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশের যাবতীয় তথ্য যেমন, বয়স, লিঙ্গ, জীবনধারা এবং তার স্বাস্থ্যের অবস্থার মতো বিভিন্ন কারণ বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যক্তিরা পরিমিত অ্যালকোহল সেবন করেছেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক থেকে দুইটি পানীয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি পানীয় পান করেছে , এবং অন্যদিকে যারা অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত ছিলেন বা অতিরিক্ত মদ্যপানে নিযুক্ত ছিলেন তাদের তুলনায় তাদের মানসিক চাপের মাত্রা কম ছিল। মাঝারি অ্যালকোহল সেবন করোনারি ধমনী রোগ এবং হার্ট অ্যাটাক সহ হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত বলে গবেষকরা মত প্রকাশ করেছেন।
গবেষকদের অনুমান যে মধ্যম অ্যালকোহল সেবন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর চাপ-হ্রাসকরতে সাহায্য করতে পারে।আবার অ্যালকোহল একটি হালকা প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসাবে কাজ করতে পারে, যা ব্যক্তিদের মানসিক চাপ কমানোর সাথে সাথে সামাজিক মালামেশা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং দৈনন্দিন চাপ থেকে সাময়িক ত্রাণ দিতে পারে।
গবেষণায় মাঝারি অ্যালকোহল সেবনের সম্ভাব্য কার্ডিওভাসকুলার সুবিধাগুলিও তুলে ধরা হয়েছে। পরিমিত অ্যালকোহল সেবন উন্নত হৃদরোগের সাথে যুক্ত ছিল, যার মধ্যে করোনারি ধমনী রোগ হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস উল্লেখযোগ্য। গবেষকদের পরামর্শ যে এই প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব অ্যালকোহলের উচ্চ-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (HDL) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানোর ক্ষমতার কারণে হতে পারে, যাকে প্রায়ই “ভাল” কোলেস্টেরল বলা হয়, যা ধমনীতে প্লেক তৈরি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
যদিও গবেষণার এই ফলাফলগুলিতে আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রায় অ্যালকোহল সেবনের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ,সেইসাথে অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে লিভারের রোগের ঝুঁকি, আসক্তি,ক্যান্সার এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অন্যতম।তাই গবেষণার সঠিক সুফল পেতে প্রস্তাবিত নির্দেশিকাগুলি মেনে পরিমিতভাবে অ্যালকোহল সেবন করা অপরিহার্য।
কিন্তু যেকোনো অধ্যয়নের মতো, এই গবেষণারও একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গবেষণাতে যে ধরনের ব্যক্তিদের স্যাম্পেল হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে সেই স্যাম্পেল নির্বাচনে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা যায় না ,যা পুরো গবেষণার ফলকে প্রভাবিত করতে পারে । অতিরিক্তভাবে, গবেষণায় মাঝারি অ্যালকোহল সেবনের উপকারিতার কথা বলা হলেও তার প্রভাব বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য অবস্থার ব্যক্তিদের উপর অন্বেষণ করেনি।
এই ফলাফলগুলিকে যাচাই করার জন্য এবং মাঝারি অ্যালকোহল সেবন কীভাবে চাপের মাত্রা এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে তার অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াগুলি বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। বৃহত্তর এবং আরও বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার সাথে দীর্ঘমেয়াদী অধ্যয়নের মাধ্যমে মাঝারি অ্যালকোহল সেবনের সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে আরও মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে।
সাম্প্রতিক এই গবেষণায় মাঝারি অ্যালকোহল সেবনের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধার উপর এক নতুনভাবে আলোকপাত করা হয়েছে । গবেষণায় মাঝারি অ্যালকোহল গ্রহণের সাথে, চাপের মাত্রা হ্রাস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কম হওয়ার একটি সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। সেইসাথে অতিরিক্ত মদ্যপানের বিরুপ প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। তবে শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অ্যালকোহল গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী ।
বিঃদ্রঃ- অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন