

ছবি- রমেশ মাহাতো,বড়ঊরমা ,পুরুলিয়া।
গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ জঙ্গলের মাটির নিচে, শুকনো পাতার স্তূপের আড়ালে ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট জীব কেন্নোকে অনেকেই ভয়ঙ্কর “কীটপতঙ্গ” বলে ভাবেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বহু পা-ওয়ালা প্রাণীর দেহে লুকিয়ে আছে এমন কিছু রাসায়নিক যা শুধু পিঁপড়েকে বিভ্রান্তই করে না, মানুষের মস্তিষ্কেও কার্যকর হতে পারে! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অদ্ভুত যৌগ ভবিষ্যতে স্নায়বিক ব্যাধি ও ব্যথা উপশমে নতুন ধরনের ওষুধ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
আমেরিকার ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানী এমিলি মেভার্স এবং তার দল এক নতুন শ্রেণির জটিল যৌগ আবিষ্কার করেছেন, যা কেন্নোর দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। এরা আলকালয়েডস নামক প্রাকৃতিক রাসায়নিক পরিবারের অন্তর্গত। গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন অ্যান্ড্রোগনাথানলস এবং অ্যান্ড্রোগনাথিনস, মিলিপিড Andrognathus corticarius–এর নাম অনুসারে।


কেন্নোর (millipede; A. corticarius প্রজাতির) শরীরে পাওয়া ১৮-র বেশি জটিল অ্যাল্কেলয়েড যৌগ
এই যৌগগুলো এতটাই শক্তিশালী যে পিঁপড়েরা এদের সংস্পর্শে এসে দিকভ্রান্ত হয়ে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এরা মানুষের মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ রিসেপ্টরের সঙ্গেও প্রতিক্রিয়া করতে পারে, যা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষক মেভার্স মূলত অজানা বা উপেক্ষিত প্রাণী থেকে ওষুধ আবিষ্কারের নতুন রাস্তা খুঁজে বের করেন। তিনি দেখেছেন, কেন্নোরা যখন শিকারির আক্রমণে পড়ে, তখন দেহ থেকে বিশেষ রাসায়নিক নিঃসরণ করে। এভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করে, আবার একই সঙ্গে কাছের সঙ্গীদেরও সংকেত দিতে পারে।
এখনও পর্যন্ত কেন্নোদের নিয়ে অনেক রহস্য অমীমাংসিত — এদের খাদ্যাভ্যাস, সঠিক সংখ্যা, আচরণ, এমনকি রাসায়নিক গঠন নিয়েও অজানা অনেক কিছু আছে। তাই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পল ম্যারেক গবেষণা করছেন, যাতে এই তথ্যগুলো মানুষের উপকারে ব্যবহার করা যায়।
এর আগেও গবেষকরা একটি ভিন্ন প্রজাতির কেন্নো (Ishchnocybe plicata) থেকে এমন রাসায়নিক পেয়েছিলেন, যা Sigma-1 নামের একটি বিশেষ নিউরোরিসেপ্টরের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। এই রিসেপ্টর ব্যথা ও অন্যান্য স্নায়বিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। সর্বশেষ আবিষ্কৃত যৌগগুলিও একই রিসেপ্টরের সঙ্গে কাজ করে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, কেন্নো আমাদের জন্য একদিন ব্যথানাশক বা স্নায়ুরোগের ওষুধ তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এখন বড় প্রশ্ন হলো—এই রাসায়নিক ল্যাবে তৈরি করা যাবে কি না। মেভার্স বলছেন, “এই যৌগগুলো অত্যন্ত জটিল। তাই ল্যাবে তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগবে।” একবার বেশি পরিমাণে তৈরি করা গেলে, বিজ্ঞানীরা এর কার্যকারিতা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে পারবেন।
যে প্রাণীকে আমরা এতদিন কেবল অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর ভেবেছি, সেই কেন্নোই হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় আশ্চর্য এক দিশা দেখাবে।
সূত্র: “The Discovery of Complex Heterocycles from Millipede Secretions” by Paige Banks, Carla Menegatti, Lin Du, Paul E. Marek and Emily Mevers, 17 July 2025, Journal of the American Chemical Society.
https://doi.org/10.1021/jacs.5c08079
আরও পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন