পিএসজি ৪-০গোলে হারাল মেসির ইন্টার মায়ামিকে, উঠল ক্লাবওয়ার্ল্ডকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে

ছবি – এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

 উত্তরাপথঃ স্পোর্টস ডেস্ক প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি) রবিবার ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাতে লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিকে ৪-০ গোলে পরাজিত করল। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা দেখিয়ে দিল কেন তারা বিশ্ব ফুটবলের শীর্ষে—মায়ামির অভিজ্ঞ তারকাদের নিয়ে গঠিত দলটি যেন তাদের কাছে ছিল একদমই দুর্বল।

মায়ামি আশায় ছিল যে তাদের তারকা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় মেসি জাদু দেখিয়ে সাবেক ক্লাব পিএসজির বিরুদ্ধে একটা অপ্রত্যাশিত ফল এনে দিতে পারবেন, কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। লুইস এনরিকের দল এমনই দাপুটে ছিল যে মায়ামিকে কার্যত গুঁড়িয়ে দিল তারা।

মেসি এবং তার পুরনো বার্সেলোনা সতীর্থ—লুইস সুয়ারেজ, সের্হিও বুসকেটস ও জর্দি আলবা—দলকে শেষ ষোলোয় তুলেছিলেন ঠিকই, কিন্তু পিএসজির সঙ্গে মানের পার্থক্য ৯০ মিনিটে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ল।

পিএসজির হয়ে জোড়া গোল করেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস। এক আত্মঘাতী গোল করেন মায়ামির টমাস অ্যাভিলেস এবং চতুর্থ গোলটি করেন আশরাফ হাকিমি।

প্রথমার্ধেই খেলা শেষ

নেভেস ম্যাচের শুরুতেই দলকে এগিয়ে দেন। এরপর প্রথমার্ধের শেষ ১০ মিনিটে পিএসজি আরও তিন গোল করে কার্যত খেলার ফলাফল নির্ধারণ করে দেয়।

পিএসজির ওসমানে দেম্বেলে বলেন, “এই প্রতিযোগিতা এখন সত্যিই শুরু হয়েছে। আমরা সিরিয়াস ফুটবল খেলতে চেয়েছিলাম এবং সেটা পেরেছি।”

৬৬ হাজার দর্শকে ভর্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার মের্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে মেসির নামে গর্জে উঠছিল গ্যালারি। বেশিরভাগ দর্শকই মায়ামির উজ্জ্বল গোলাপি জার্সি কিংবা আর্জেন্টিনার জাতীয় জার্সি পরে এসেছিলেন।

তবে মাঠে ছিল একতরফা খেলা। শুরু থেকেই পিএসজি বল দখলে রাখে এবং আক্রমণের ঝড় তোলে। খভিচা kvaratskhelia ও ব্র্যাডলি বারকোলার আক্রমণ ঠেকালেও, মায়ামির ডিফেন্ডার মার্কেলো উইগান্টের একটি ফাউলের মাধ্যমে আসে প্রথম গোল।

মেসির ক্ষোভ আর নিরাশা

পিএসজির দ্বিতীয় গোলটি আসে বুসকেটসের ভুল থেকে, যার সুযোগ নিয়ে বারকোলা ও রুইজের পাসে নেভেসের দ্বিতীয় গোল। এরপর অ্যাভিলেসের আত্মঘাতী গোল ও হাকিমির রিবাউন্ড গোল পিএসজির দাপটের শেষ সিলমোহর বসায়।

হাকিমির প্রথম শট বারে লেগে ফিরে এলেও, তিনি ঠাণ্ডা মাথায় রিবাউন্ডে গোলটি করেন।

ম্যাচে হতাশ মেসি এক সময় বিরক্ত হয়ে পিএসজির ভিটিনহার ওপর রাগ ঝাড়েন। দ্বিতীয়ার্ধে মেসি একটি দারুণ পাস দেন সুয়ারেজকে, কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হন উরুগুয়ান তারকা।

একসময় মনে হচ্ছিল, ২০১৭ সালে লুইস এনরিকের বার্সার সেই ঐতিহাসিক ‘রেমন্টাডা’র পুনরাবৃত্তি হতে পারে, কিন্তু সেটি আর হল না। মেসি নিজেও গোলের জন্য একাধিক প্রচেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন।

আলবার ইতিবাচক মূল্যায়ন

ম্যাচ শেষে জর্দি আলবা বলেন, “অনেকেই ভাবেনি আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। আমরা গ্রুপে সেরা দল ছিলাম, কিন্তু আজকের প্রতিপক্ষ ছিল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। প্রথমার্ধে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে আমরা লড়াইয়ে ফিরেছিলাম, বেশি সুযোগ তৈরি করেছিলাম।”

পিএসজি কোয়ার্টার ফাইনালে এখন জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ অথবা ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর মুখোমুখি হবে, আগামী শনিবার আটলান্টায়।


এই ম্যাচটি দেখিয়ে দিল ফুটবলে শুধু নামী খেলোয়াড় থাকলেই হয় না, দলগত পরিকল্পনা, ফিটনেস ও কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মেসি ও তার বার্সেলোনা-সমসাময়িক সতীর্থদের অভিজ্ঞতা থাকলেও, তারা আর আগের মতো দ্রুতগতির খেলোয়াড় নন। সেই সুযোগটাই নিয়েছে পিএসজি।

এবার দেখার পালা—তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কি না।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top