উত্তরাপথঃ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে এবার বিলকিস বানো ইস্যুতে ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেস। সম্প্রতি বিলকিস বানোর গণধর্ষণ কাণ্ডের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেয়েছে গুজরাত সরকার। বিলকিস বানো গণধর্ষণকাণ্ডে ১১ জন সাজাপ্রাপ্তকে মুক্তি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সেই সময় গুজরাত সরকার নিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অবিলম্বে ওই ১১ জনকে দু সপ্তাহের মধ্যে জেলে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত ৷
বিলকিস বানোর জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে বিচার পেতে। ৩ মার্চ, ২০০২ সালে গুজরাটের দাহোদ জেলার রন্ধিকপুর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস ইয়াকুব রসুল বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০০২ সালে, গুজরাটের গোধরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সবরমতি এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়। অযোধ্যা থেকে ফিরে আসা কয়েক ডজন কর সেবক ও রাম ভক্ত এই ট্রেনে যাতায়াত করছিলেন। এ অগ্নিকাণ্ডে শিশু ও নারীসহ পাঁচ ডজন লোক দগ্ধ হয়।
এই ঘটনার পরপরই গুজরাটের অনেক এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০০২-এ সহিংসতা দাহোদে পৌঁছেছিল। রন্ধিকপুর গ্রামে বসবাসকারী বিলকিস এবং তার পরিবার মনে করেছিল যে আগুন শীঘ্রই এখানে পৌঁছাবে। অতএব, ১৭ জনের পরিবার বাড়ি ছেড়ে যাওয়া জরুরি বলে মনে করেছিল। তাই পরিবার চলে যায়। এ সময় বিলকিসের বয়স ছিল ২১ বছর। তার কোলে সাড়ে তিন বছরের মেয়ে সালেহা, তিনি নিজে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ৩ মার্চ ২০০২-এ পরিবারটি ছাপারওয়াদ নামে একটি গ্রামে পৌঁছেছিল। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এদিন লাঠি, কাস্তে ও তরবারি নিয়ে প্রায় ৩০ জনের এক জনতা ওই পরিবারের ওপর হামলা চালায় শুরু হয় সহিংসতা। এই ভিড়ের মধ্যে সেই ১১ জনের নামও ছিল, যারা বিলকিস, তার মা ও আরও তিন নারীকে একের পর এক ধর্ষণ করে।
বিলকিসের সাড়ে তিন বছরের মেয়েকেও খুন করা হয়। বিলকিসের অনাগত সন্তানকেও হত্যা করা হয়। ১৭ জনের একটি পরিবারের ৮ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।গণধর্ষণের সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েন বিলকিস। তিন ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফেরার পর, তিনি এক আদিবাসী মহিলার কাছ থেকে কাপড় চেয়েছিলেন এবং হোম গার্ড জওয়ানের সাথে লিমখেদা থানায় যান। থানায় উপস্থিত হেড কনস্টেবল সোমাভাই গোরি অভিযোগটি সঠিকভাবে লেখেননি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কনস্টেবল অভিযোগ লেখার সময় ঘটনা বিকৃত করেছেন এবং মামলার একটি ভুল গল্প উপস্থাপন করেছেন।
এরপর গোধরায় ত্রাণ শিবিরে পৌঁছালেই বিলকিস বানোর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়। সিবিআই তাদের তদন্তে দাবি করেছে যে অভিযুক্তদের বাঁচাতে নিহতদের পোস্টমর্টেম তদন্তেও কারচুপি করা হয়েছিল। সিবিআই আধিকারিকরা যখন নিহতদের মৃতদেহ খুঁড়ে বের করেন, তখন তারা দেখতে পান যে সাতটি লাশেরই খুলি নেই। সিবিআই জানিয়েছে, পোস্টমর্টেমের পর নিহতদের মাথার খুলি ধ্বংস করা হয়েছে যাতে তাদের মৃতদেহ শনাক্ত করা না যায়।
২০০২ সালে প্রমাণের অভাবে মামলার তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তোলপাড় শুরু হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে। গুজরাটে ন্যায়বিচারের কোনো সম্ভাবনা না দেখে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি রাজ্যের বাইরে সরিয়ে দেয়। এবং ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে, বিশেষ সিবিআই আদালত এই ১১ জনকে ধর্ষণ ও খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে সকলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এর পর সব ধর্ষক তাদের আইনি পথ খুঁজতে থাকে।বিশেষ আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা বোম্বে হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করে, যা ২০১৭সালের মে মাসে খারিজ হয়ে যায়।
এরই মধ্যে গুজরাট সরকার বিলকিসকে গণধর্ষণ, হত্যা এবং বিচারের জন্য ৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেয়।বিলকিস তা মানতে রাজি হননি এবং তিনি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। এপ্রিল ২০১৯ -এ, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে বিলকিসকে ৫০ লক্ষ টাকা, একটি বাড়ি এবং একটি চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু কয়েক বছর পর সব আসামিকে জেল থেকে ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাধেশ্যাম শাহ, এই মামলার একজন দোষী, ২০২২ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টে তার সাজা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এই ছাড়কে মওকুফ বলা হয়। এতে দোষ বা শাস্তির চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। জেলে থাকার সময়কাল কমে যায়। এই আবেদনের শুনানির সময়, সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে শাস্তি শিথিল করার আবেদন রাষ্ট্রের নীতি অনুসারে বিবেচনা করা যেতে পারে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।নির্দেশে আরও বলা হয় গুজরাট সরকারের একটি কমিটিকে মওকুফ বিবেচনা করা উচিত। মনে রাখবেন যে এই আদেশটি বিবেচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে কোনও স্পষ্ট কথা ছিল না।সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে ঢাল হিসেবে নিয়ে গুজরাট সরকার ৯ জনের একটি কমিটি গঠন করে, যার মধ্যে পাঁচজন বিজেপি নেতা ছিলেন। এই কমিটি ১৪ আগস্ট সিদ্ধান্ত নেয়, ১১ ধর্ষককে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হবে, কারণ হিসেবে মুক্তি দেওয়ার সময়, ১৪ বছর সাজা, বয়স, অপরাধের প্রকৃতি, কারাগারে আচরণের মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন