

উত্তরাপথঃ বিজ্ঞান বদলে দিতে পারে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ—এই সত্যি বারবার প্রমাণ করেছেন কিছু অসাধারণ মানুষ, যাঁদের আবিষ্কার ও চিন্তাধারা আমাদের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারনাটাই বদলে দিয়েছেন। এই অসাধারণ মানুষগুলো পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তারা তাদের কাজ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার এবং বিশ্বকে বদলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। তাদের জ্ঞানের অদম্য সাধনা মানবজাতিকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যা একসময় অকল্পনীয় ছিল।এই সব অসাধারণ মানুষদের মধ্যে অন্যতম হলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। আজ আমরা তাঁর জীবনের গল্প এবং বিজ্ঞান জগতে তাঁর অসামান্য অবদান নিয়ে কথা বলব।
আলবার্ট আইনস্টাইন শুধু একজন বৈজ্ঞানিক প্রতিভা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় এবং কৌতূহলী ব্যক্তিত্ব। তাঁর বিখ্যাত সূত্র *E = mc²* এবং আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিজ্ঞানের ভিতকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনিই দেখিয়েছেন, কিভাবে সময় ও স্থানের ধারণা একে অপরের সাথে জড়িত।
আইনস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯ সালে, জার্মানির উলম শহরে। ছোটবেলায় কেউ ভাবতেও পারেনি, এই ছেলেটিই একদিন বিজ্ঞানের রূপ বদলে দেবে। অনেকেই বলেন যে তিনি অঙ্কে নাকি একবার ফেল করেছিলেন, যা একেবারেই সত্য নয়। বরং ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল আলো, চৌম্বকত্ব ও মহাকাশের রহস্যে।
১৯০৫ সালে তিনি সুইস পেটেন্ট অফিসে কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই বছরটি ‘*আইনস্টাইনের অলৌকিক বছর’ নামে পরিচিত। তিনি এক বছরে চারটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যার মধ্যে ছিল বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিখ্যাত সূত্র **E = mc²*, যা বলে, ভর (mass) ও শক্তি (energy) একে অপরের রূপান্তর।এই তত্ত্বগুলোর সাহায্যে আজকের নিউক্লিয়ার শক্তি, জিপিএস প্রযুক্তি এবং আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি হয়েছে।১৯১৬ সালে তিনি সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি প্রস্তাব করেন যে ভর স্থান এবং সময়ের কাঠামোকে বিকৃত করে।
১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, তবে এটি সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য নয়, বরং আলোকবৈদ্যুতিক প্রভাব আবিষ্কারের জন্য। তাঁর অবদান তাঁকে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান এনে দিয়েছে।১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কের একটি বিজ্ঞান যাদুঘরে আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল। এত লোক ভিড় করেছিল যে, প্রায় ৪,৫০০ মানুষ একসাথে গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। অন্যদিকে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, “টিকিট ছাড়া প্রবেশ নেই,” ফলে শুরু হয় ইতিহাসের প্রথম “বিজ্ঞান দাঙ্গা,” যা শিকাগো ট্রিবিউন নামে পরিচিত।
আইনস্টাইনের জনপ্রিয়তা অসাধারণ ছিল। তাঁর বিশেষ চুলের স্টাইল, ঢিলে জামা, আর তীক্ষ্ণ রসবোধ তাঁকে করে তুলেছিল আলাদা। তাঁর বিখ্যাত উক্তি – *“ঈশ্বর পাশার দান খেলেন না”* — অর্থাৎ প্রকৃতি চলেঃ নিয়ম মেনে।
তাঁর আরও একটি বিখ্যাত উক্তি – “জ্ঞান সীমিত, কল্পনা আকাশ ছুঁতে পারে।”
১৯৫৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আইনস্টাইন মারা যান। কিন্তু তাঁর কাজ আজও চলমান। তাঁর জেনারেল আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে আজকের দিনে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, আর গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং বোঝার চেষ্টা করছেন।বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ *জেমস ওভারডুইনের কথায়,-“আইনস্টাইন হচ্ছেন শেষ বিজ্ঞানী, যিনি সাধারণ মানুষের মনে এতটা প্রভাব ফেলেছেন।”
আইনস্টাইন শুধু বিজ্ঞানের জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবতা, শান্তি ও নাগরিক অধিকারের প্রবক্তা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নাৎসিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, আফ্রিকান-আমেরিকানদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, এবং শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন বারবার।
আলবার্ট আইনস্টাইন দেখিয়ে দিয়েছেন, কল্পনা এবং জিজ্ঞাসা—এই দুটো জিনিস থাকলেই মানুষ পৌঁছে যেতে পারে তারার রাজ্যে। তাঁর মতো বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার আমাদের শুধু প্রযুক্তিতে নয়, চিন্তা-ভাবনাতেও এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি আজও তরুণ বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন।
* আপনি যদি জানেন এমন আরও কোনো বিজ্ঞানীর গল্প, জানাতে ভুলবেন না। আগামী পর্বগুলিতে আমরা কথা বলব মাদাম কুরি, নিউটন ও এডা লাভলেস-এর মতো আরও কিংবদন্তি বিজ্ঞানীদের নিয়ে।*
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন