সম্পাদকীয়-

আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র ও বোরখা বিতর্ক

আবার নতুন করে ‘বোরখা বিতর্ক’-এর খবর সামনে এল । এবারের ঘটনাস্থল মুম্বায়ের চেম্বুরে অবস্থিত একটি কলেজ।সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে দিন কয়েক আগে দুইজন ছাত্রী হিজাব পরে হাজির হয়। সেই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ,নিরাপত্তাকর্মীরা দুই ছাত্রীকে  গেটে আটকে দেয় ।এরপর খবর পেয়ে তাদের অভিভাবকেরা এসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ।

কলেজ  কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তাকর্মীরা কোনও অন্যায় করেননি। কারণ সম্প্রতি কলেজে পোশাক বিধি লাগু হয়েছে। সকল পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের জানানো হয়েছিল যে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরেই কলেজে আসতে হবে। ওই ছাত্রীরা তা অমান্য করেছেন । কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী গত ১ মে বৈঠকে অভিভাবকদের নতুন পোশাক বিধির কথা জানানো হয়েছিল ,সাথে এও জানানো হয় যে কলেজে বোরখা, হিজাব, স্কার্ফ নিষিদ্ধ।তবে শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ  ‘বোরখা বিতর্ক’ -এর জেরে বোরখা পরে কলেজে আসার অনুমতি দিলেও শর্ত দেয় যে ক্লাসে যাওয়ার আগে তা খুলে দিতে হবে।  

এখন প্রশ্ন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে একটি নির্দিষ্ট পোশাক বিধি রয়েছে সেখানে এই জাতীয় ধর্মীয় পোশাক বিধি নিয়ে কি বিতর্ক কাম্য ?কারণ একজন শিক্ষার্থী যখন কোনও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় তখন সে প্রতিষ্ঠানের পোশাক সহ যাবতীয় বিধি মেনে চলতে বাধ্য, তারপর এই জাতীয় বিতর্ক শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করে। আজ যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় পোশাক কেউ বোরখা তো কেউ নামাবলী আবার কেউ তাদের নির্দিষ্ট রাজপুতি পোশাক পরে শিক্ষাঙ্গনে হাজির হয় তাহলে কল্পনা করুন পরিবেশটা কি হতে চলেছে।

 শিক্ষা জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্য গড়ে তোলার এবং ধর্মীয় বৈষম্য দূর করার একটি উপায় হল ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অভিন্ন পোষাক কোড প্রয়োগ করা।

একটি অভিন্ন পোষাক কোড নিশ্চিত করে ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে সমস্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমান। সমস্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একই পোশাক যেমন তাদের সামাজিক , আর্থিক ও ধর্মীয় বৈষম্য দূর করে তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্যের বোধ জাগিয়ে তোলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে একই পোষাক পরতে হয় বলে,শিক্ষার্থীরা পোশাক বা চেহারার পার্থক্য নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে তাদের পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত উন্নতিতে মনোযোগ দিতে পারে।কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বোরখা নিয়ে বারবার বিতর্কের জের শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে কলুষিত করছে না এটি সামাজিক ঐক্যের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করছে।  

এছাড়াও একটি অভিন্ন পোষাক কোড শিক্ষার্থীদের মধ্যে পেশাদারিত্ব এবং শৃঙ্খলার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব সহজেই তাদের শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করতে পারে, এবং বাইরের সদস্যদের প্রবেশ বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন বাড়ে, সেই সাথে স্কুলে অনুপ্রবেশকারী বা অননুমোদিত ব্যক্তিদের প্রবেশের ঝুঁকি কমানো যায়।

কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বারবার ‘বোরখা বিতর্ক’-এর জের, শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে কলুষিত করছে না এটি সামাজিক ঐক্যের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করছে।তাই সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য আমাদের দ্রুত এই জাতীয় বিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে এক ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ গঠন করতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top