মণিপুর,সংকট উন্মোচন: কারণ বোঝা এবং সমাধান খোঁজা
মণিপুর,সংকট বর্তমানে ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।পরিস্থিতি এতটাই ভায়াবহ যে বিদেশেও আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে । বর্তমান মণিপুর সংকটের শিকড় রয়েছে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক কারণের জটিল জালে। তাই প্রায় টানা তিনমাস ধরে চলতে থাকা এই সমস্যার আজও কোনও সমাধান নেই।
বর্তমান মণিপুর,সংকট বোঝার জন্য, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অনুসন্ধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মণিপুরের আঞ্চলিক পরিচয়, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং স্ব-শাসনের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশদের দ্বারা মণিপুরের অধিভুক্তি, এবং ১৯৪৯ সালে ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার পরে, মণিপুরী জনগণের মধ্যে একটি বিরক্তি এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল।
বর্তমান মণিপুর সংকটে জাতিগত উত্তেজনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজ্যটি মেইতি, নাগা, কুকি এবং পাঙ্গল সহ বিভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। এই সম্প্রদায়গুলির প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন আকাঙ্খা রয়েছে, যা জমি, সম্পদ বা রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে তাদের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা স্বায়ত্তশাসন বা পৃথক রাষ্ট্রের দাবি বছরের পর বছর ধরে বিদ্রোহ আন্দোলনকে উস্কে দিয়েছে, যার ফলে সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির একটি চক্র তৈরি হয়েছে।
মণিপুরে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ বিচ্ছিন্নতাবাদসহ বিভিন্ন এজেন্ডা অনুসরণকারী এই দলগুলো সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এবং নিজেদের মধ্যেও সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত বিচারবহির্ভূত হত্যা, মহিলাদের উপর নির্যাতন সহ অগণিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে যার ফলে মণিপুরের সাধারণ জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পর্যাপ্ত উন্নয়ন উদ্যোগের অভাব এবং ক্রমাগত আর্থ-সামাজিক বিভাজনও মণিপুর সংকটের জন্য দায়ী। মণিপুর, বর্তমানে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যেমন অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো, সীমিত চাকরির সুযোগ এবং উচ্চ বেকারত্বের হার সেই সাথে দুর্নীতি এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে।
মণিপুর সংকট মোকাবেলা করার জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন যা ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক জটিলতাগুলিকে বিবেচনা করে সংকট দূর করতে সাহায্য করতে পারবে ।এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সরকার, সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাগুলির মধ্যে অর্থপূর্ণ বোঝাপড়া এবং বিশ্বাস বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক এই বোঝাপড়ার মাধ্যমে সংকটের মূল কারণগুলিকে সমাধান করা উচিত এবং রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের সম্ভাবনাগুলি অন্বেষণ করা উচিত।সেইসাথে প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, এবং সুশাসনের প্রচার মণিপুরের আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে।
এছাড়াও মণিপুরের সমস্ত সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী । সেই সাথে মণিপুরের দীর্ঘমেয়েদী উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং আর্থ-সামাজিক বিভাজন দূর করা অত্যন্ত প্রয়োজন।সেইসাথে আইনের শাসন নিশ্চিত করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন