জয়পুরের মিউজিয়ামে ২৩০০ বছরের পুরনো মমি দেখলে মনে হবে যেন মারা গেছে একটু আগে

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ আপনি কি জানেন শুধু মিশরের পিরামিডে নয় হাজার হাজার বছরের পুরনো মমি আমাদের দেশেও রয়েছে।আমি কোনও চলচ্চিত্র, বই বা ম্যাগাজিনে থাকা মমির কথা বলছিনা এখানে আমি জয়পুরের বিখ্যাত অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে থাকা মমির কথা বলছি। এটি একটি মহিলার মমি এবং এর বয়স সম্ভবত ২৩৪০ বছর।এই মমির সংরক্ষণের যাবতীয় দায়িত্ব মিশরীয় বিশেষজ্ঞদের। কয়েক বছর আগে এই মমির অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য মিশরীয় বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছিল। আলবার্ট মিউজিয়াম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মিশরের প্রাচীন শহর প্যানোপোলিসে খননকালে এই মমিটি পাওয়া গেছে। যে মহিলার এই মমি তার নাম ‘টুটু’। কথিত আছে, সে সময় মিশরে খেম নামে এক দেবতার পূজা করা হতো। এই মহিলা সেই দেবতার পুরোহিতদের পরিবারের সদস্য ছিলেন।

এরপর ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ সরকার মিশর থেকে এই মহিলার মমি ভারতে নিয়ে আসে। তারপর থেকে এটি জয়পুরের অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। প্রতি বছর বহু পর্যটক শুধুমাত্র এই মমিটি দেখতে এখানে আসেন। তাদের মধ্যে বহু বিদেশি পর্যটকও রয়েছে। আপনি জেনে খুশি হবেন যে এই রকম একটি মমি গুজরাটের ভাদোদরা মিউজিয়ামেও রয়েছে। ভাদোদরা মিউজিয়ামের মমিটি ভাদোদরার মহারাজা স্যাজিরাও গায়কওয়াদ তৃতীয় কিনেছিলেন এবং যাদুঘরে রেখেছিলেন। এই মমিটি মিশরের রাজপরিবারের প্রায় ২০ বছর বয়সী একটি মেয়ের।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই মমিগুলির যত্ন কারা করেন? মিউজিয়াম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে মিশরের কায়রো মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ অনুসারে  এই মমিগুলির যত্ন করা হয়, যারা মিশরের পিরামিডগুলিরও যত্ন নেন।আজও জয়পুরের আলবার্ট মিউজিয়ামে রক্ষিত মমির শরীর একই রকম রয়েছে ,দেখলে মনে হবে যেন এই মহিলা মারা গেছে একটু আগে।

শোনা যায় ১৯ শতকে এশিয়ার ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে মমি কেনার প্রবণতা বাড়তে থাকে।সেই সময় লোকেরা শখ হিসেবে মমি কিনে সরাসরি মানুষের মাঝে নিয়ে আসত।অন্যদিকে মিশরেও সেই সময় মমি তৈরির প্রথা শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সেখানে এত বেশি মমি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল যে এগুলির পরিচালনা করা সহজ ছিল না ,তাই বাধ্য হয়েই সেই দেশের সরকারকে কিছু কিছু মমি বিক্রি করে দিতে হয়।

জয়পুরের অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে থাকা মমিটি শুধুমাত্র মিশরের মৃতদেহ সংরক্ষণ ও সেখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি মূর্ত প্রতীক নয় ।এই অসাধারণ নিদর্শনটি হাজার হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা দীর্ঘ-হারানো সভ্যতার সাথে গভীর সংযোগ প্রদান করে। অতীতের গভীরে গিয়ে আমরা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে যেমন জানতে পারি,সেই সাথে সেই সময়ের বিজ্ঞান ও জ্ঞানের একটি প্রমাণ পায়। আজ এই মমির উপস্থিতি কৌতূহল এবং বিস্ময়ের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে ছাত্র, ইতিহাসবিদ এবং দর্শকদের মধ্যে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top