

উত্তরাপথঃ এর আগে বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) সবজি চাষ করেছেন, তবে তাদের লক্ষ্য আরও বড়। মহাকাশে মানুষের প্রজনন সম্ভব করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এবং জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA) এর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী বলেছেন যে তারা মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরি করেছেন। যা ইঙ্গিত দেয় ভবিষ্যতে মানুষের পক্ষেও মহাকাশে প্রজনন করা সম্ভব হতে পারে।
জাপানের ইয়ামানাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডভান্সড বায়োটেকনোলজি সেন্টারের প্রফেসর তেরুহিকো ওয়াকায়ামা এবং জাপান অ্যারোস্পেস স্পেস এজেন্সি (JAXA) এর একটি দল ২০২১ সালের আগস্টে স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলের সাহায্যে হিমায়িত ইঁদুরের ভ্রূণ ISS-এ পাঠিয়েছিল। এই ডিভাইসটি স্থানের মাইক্রোগ্রাভিটি পরিবেশে ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় একটি স্থিতিশীল তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং অক্সিজেনের মাত্রা বজায় রাখে।
মহাকাশে পৌঁছানোর পর, একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ভ্রূণগুলিকে হিমায়িত থেকে স্বাভাবিক করা হয়েছিল এবং তারপরে ৪ দিনের জন্য স্পেস স্টেশনে তাদের বিকাশ করা হয়েছিল।বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণ সফলভাবে বৃদ্ধি করে মহাকাশ জীববিজ্ঞানে একটি বড় মাইলফলক অর্জন করেছেন। এই যুগান্তকারী গবেষণাটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিকাশে মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব অধ্যয়নের জন্য নতুন পথ খুলে দেয় এবং মহাকাশে মানুষের প্রজনন বোঝার জন্য এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
কক্ষপথে ছয় দিন পরে, ভ্রূণগুলি আইএসএস থেকে বের করা হয়েছিল এবং পৃথিবীতে ফিরে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছেন যে ভ্রূণগুলি স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয়েছিল এবং এমনকি প্রাথমিক ভ্রূণের বৃদ্ধির লক্ষণও দেখায়, যেমন ব্লাস্টোসিস্টের গঠন, একটি কাঠামো যা ভিতরের কোষের ভর এবং ট্রফেক্টোডার্ম ধারণ করে। আইসায়েন্স নামের একটি জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে গবেষকরা বলেছেন, ভ্রূণের ওপর মাধ্যাকর্ষণ কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেনি। পৃথিবীর গবেষণাগারে যখন ভ্রূণের ব্লাস্টোসিস্ট পরীক্ষা করা হয়, তখন দেখা যায় যে ভ্রূণের ডিএনএ এবং জিনের অবস্থার কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
এই সফল পরীক্ষাটি স্থানের অবস্থার দ্বারা স্তন্যপায়ী প্রজনন কীভাবে প্রভাবিত হয় তা বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে মাইক্রোগ্রাভিটি জীবন্ত প্রাণীর উপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, জিনের প্রকাশের পরিবর্তন থেকে কোষের বৃদ্ধি এবং পার্থক্যের পরিবর্তন পর্যন্ত। যাইহোক, এই কারণগুলি কীভাবে ভ্রূণের বিকাশকে প্রভাবিত করে এবং মানুষ মহাকাশে সফলভাবে প্রজনন করতে পারে কিনা সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণ বৃদ্ধি করে, বিজ্ঞানীরা এই প্রভাবগুলির অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াগুলি উন্মোচন করতে শুরু করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে দীর্ঘ-মেয়াদী মহাকাশ মিশনে কীভাবে তারা মানুষের প্রজননকে প্রভাবিত করতে পারে তা নির্ধারণ করতে পারেন। এই গবেষণাটি ভ্রূণের বিকাশের মৌলিক জীববিজ্ঞানের নতুন অন্তর্দৃষ্টির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা পৃথিবীতে উর্বরতা এবং গর্ভাবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন প্রক্রিয়াগুলির উপর আলোকপাত করে।
এর বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য ছাড়াও, এই অধ্যয়নেরও মহাকাশ অনুসন্ধান এবং উপনিবেশের জন্য ব্যবহারিক প্রভাব রয়েছে। প্রজননের উপর মহাকাশযানের প্রভাব বোঝা মঙ্গল গ্রহ এবং তার বাইরে দীর্ঘমেয়াদী মিশনের পরিকল্পনা করার জন্য অপরিহার্য, যেখানে মহাকাশচারীরা মাইক্রোগ্রাভিটিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে পারে। মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণ অধ্যয়ন করে, গবেষকরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন যা মহাকাশে মানব প্রজননকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তি এবং প্রোটোকলগুলির বিকাশকে সাহায্য করবে।
সামগ্রিকভাবে, মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণের সফল বৃদ্ধি মহাকাশ জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ সীমাবদ্ধতার বাইরে স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিকাশ অধ্যয়নের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ নতুন সম্ভাবনার উন্মোচন করে। এই গবেষণাটি মহাকাশে প্রজনন সম্পর্কে ভবিষ্যতের গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করে এবং মহাজাগতিক জীবন সম্পর্কে আমাদের বোঝার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে।
সূত্রঃScience Advances জার্নাল, iScience জার্নাল।
আরও পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন