মহাকাশ স্টেশনে কেন অসুস্থ হচ্ছেন নভোচারীরা?

উত্তরাপথঃ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) হলো মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক ল্যাবরেটরি, যেখানে পৃথিবী থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন গবেষণা চালাচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, পৃথিবীতে আমরা সুস্থ থাকার জন্য সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ চাই , অন্যদিকে মহাকাশ স্টেশনের “অতিরিক্ত পরিষ্কার – পরিচ্ছন্নতার” ফলেই নাকি নভোচারীদের মধ্যে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

কেন সমস্যা হচ্ছে?

ISS-এ প্রতিদিন এয়ার ফিল্টার চালানো হয়, সাপ্তাহিকভাবে মুছে ফেলা হয় সব পৃষ্ঠ, এমনকি নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনারও ব্যবহার করা হয়। তবুও নভোচারীদের মাঝে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, ত্বকে র‍্যাশ ওঠা, এমনকি সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, এর মূল কারণ হতে পারে জীবাণুর বৈচিত্র্যের অভাব। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী রডলফো স্যালিদো বেনিতেজ এবং তাঁর দল দেখেছেন, ISS-এর ভেতরে প্রায় সব জীবাণুই মানুষের ত্বক বা স্টেশনের উপকরণ থেকে এসেছে। মাটির বা জলের মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে আসা জীবাণুর পরিমাণ ০.৩ শতাংশেরও কম।

আমরা সাধারণত জীবাণু মানেই রোগ ভেবে ভয় পাই। কিন্তু সত্য হলো, আমাদের শরীর ও পরিবেশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির জীবাণু একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, ফলে ক্ষতিকর জীবাণু একচেটিয়া ক্ষমতা পায় না।

যেমন, পৃথিবীতে যারা গ্রামীণ পরিবেশে পশুপাখির সংস্পর্শে থাকে— তাদের মধ্যে হাঁপানি বা অ্যালার্জির ঝুঁকি অনেক কম। কারণ তাদের চারপাশের জীবাণুর বৈচিত্র্য তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখে।

কিন্তু মহাকাশ স্টেশনে সেই বৈচিত্র্য নেই। দেয়াল, টেবিল বা যন্ত্রপাতি শুধু নভোচারীদের শরীর থেকে আসা একই ধরনের জীবাণুকেই প্রতিফলিত করছে। এরফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভোচারীদের জন্য “ভালো জীবাণু” যোগ করা দরকার। এর একটি উপায় হতে পারে— ফারমেন্টেড খাবার (যেমন দই ও আচার) রাখা। এতে জীবাণুর বৈচিত্র্য কিছুটা বাড়বে। কেউ কেউ এমনকি মহাকাশে ছোট প্রাণী বা উদ্ভিদ রাখার কথাও ভাবছেন, যা পরিবেশকে আরও প্রাকৃতিক করে তুলতে পারবে।

আগামী দিনে মানুষ যখন দীর্ঘমেয়াদে চাঁদ বা মঙ্গলে বসবাস করবে, তখন কেবল অক্সিজেন, জল ও খাবারই নয়, জীবাণুর বৈচিত্র্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিজ্ঞানীরা তাই এখনই সতর্ক করছেন— “আমাদের শুধু যা আছে তা নয়, যা নেই সেটির দিকেও নজর দিতে হবে।”

মহাকাশের অতিরিক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হয়তো শুনতে ভালো, কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে মানুষের সঙ্গে জীবাণুর সহাবস্থানও সমান জরুরি।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top