বদলে যাচ্ছে বাঙালির মহালয়ার নস্টালজিয়া

উত্তরাপথ: বদলে যাচ্ছে বাঙালির মহালয়ার নস্টালজিয়া,বেশীরভাগ বাঙালি বাড়িতে রেডিও এখন অমিল,তাই মহালয়ার ভোর, এখন কাটছে ইউটিউবেই, বাজছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর শ্লোক-“ আশ্বিণের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা/ প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা/ আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি…।”আজও মহালয়ার ভোর মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এই শ্লোক পাঠ, শুধু মাধ্যমটুকুই বদলে গিয়েছে। সারা বাংলা এমনকি বাংলার বাইরে যেখানে বাঙালি রয়েছে সেখানে আজও ঘরে ঘরে বাজে মহিষাসুরমর্দিনী।পরিবর্তন শুধু এই রেডিওর জায়গায় এসেছে মোবাইল, ইউটিউব এবং টিভি, আমবাঙালি আজও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই শ্লোক শোনে ।

 কিছু বছর আগেও মহালয়ার সাতদিন আগে থেকে রেডিও সারাই করার দোকানগুলিতে রীতিমতো ভিড় লেগে থাকতো। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তেন বাড়ির বয়স্করা। কিন্তু এখন সেই দিন গিয়েছে মহালয়া এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং স্মার্টফোন অ্যাপের উত্থানের সাথে, লোকেরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী মহালয়ার অনুষ্ঠান শুনতে বা দেখতে পারে। ইউটিউবের কল্যাণে সারা বছর এখন মহালয়া শোনা যায়।তবে মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহালয়া শোনার নস্টালজিয়া আলাদা । তবে বাড়ির বয়স্ক সদস্যরা ছাড়া এই প্রজন্মের মধ্যে ভোর বেলা মহালয়া শোনার লোক কম। সবাই এখন তাদের সুবিধামত সময়ে ইউটিউব (YouTube) চালিয়ে মহালয়া শুনে নেন।তবে জেলার গ্রামাঞ্চলে এখনও কিছু ব্যতিক্রম আছে যা কার্যত হাতে গোনার মতই বিষয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার সাথে, মহালয়ার সকালের রূপ প্রসারিত হয়েছে। যদিও রেডিও সম্প্রচার অনেকের কাছে  এখনও একটি লালিত ঐতিহ্য হিসাবে রয়ে গেছে, মহালয়ার সকালের অভিজ্ঞতার জন্য এখন বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এখন অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং পূজা কমিটি “মহিষাসুর মর্দিনী” বা মহাকাব্যের থিয়েটার উপস্থাপনার লাইভ পারফরম্যান্সের আয়োজন করে। এই পারফরম্যান্সগুলি প্রায়শই বিখ্যাত শিল্পীদের দিয়ে করান হয়  এবং অডিটোরিয়াম বা উন্মুক্ত স্থানগুলিতে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠানটি দেখতে পারেন।

এছাড়াও বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখন মহালয়ার অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা স্ট্রিম করে, যাতে দর্শকরা তাদের ঘরে বসেই অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। এটি মহালয়াকে বাংলার মধ্যে এবং সারা বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত দর্শকদের কাছে আরও অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলেছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি মহালয়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার এবং আলোচনা করার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ৷ লোকেরা  সেখানে তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয় যা মহালয়ার অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।তবে বাঙালির সেই মহালয়ার নস্টালজিয়া এখন বদলে যাচ্ছে, আজ কোনও বাঙালিকে মহালয়ার আগে হাতে রেডিও নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় না ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top