মানভূমে ধান সংক্রান্ত লোকবিশ্বাস

নিমাইকৃষ্ণ মাহাতঃ সাবেক মানভূম তথা অধুনা পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের মূলনিবাসী ও আদিবাসী মানুষেরা মূলত কৃষিনির্ভর । এই অঞ্চলে কৃষিকাজ বলতে প্রধানত আমন ধানের চাষাবাদকেই বোঝায় । তাই, ধানকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নানা ধরনের লোকাচার ও লোকবিশ্বাস গড়ে উঠেছে ‌। ধানকেন্দ্রিক লোকবিশ্বাসগুলি এখানকার কৃষকদের নিজস্ব সত্তায় জড়িত রয়েছে । তাই , ধানকেন্দ্রিক লোকবিশ্বাসগুলি এই অঞ্চলে কৃষিসংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে । এ বিষয়ে এতদ্ অঞ্চলে প্রচলিত কয়েকটি ধানকেন্দ্রিক লোকবিশ্বাসের দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে-

 ) ধানের বীজবপন সংক্রান্ত প্রচলিত লোকবিশ্বাস :

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসে কৃষি ক্ষেত্রে ধানের চারা তৈরির জন্য ধানের বীজ বপন করা হয় । বিশেষ করে এই অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত রুক্ষ , শুষ্ক , পাথুরে জমিতে বা পাহাড় , ডুংরির ঢালে আইস্যা ধান বা গোড়া ধান জ্যৈষ্ঠ মাসে বা আষাঢ় মাসের শুরুতে বোনা হয় । ক্ষেতে  ধানের বীজ ফেলার আগে ওই ধানের সঙ্গে কিছুটা রোহিন মাটি (  রোহিনের সময় অর্থাৎ ১৩ ই জ্যৈষ্ঠ ক্ষেত থেকে যে মাটি আনা হয় ) ও মধু মিশিয়ে দেওয়া হয় ।

   এ বিষয়ে প্রচলিত লোকবিশ্বাস হল যে মধু ও রোহিন মাটি মেশানোর ফলে ধানের বীজ থেকে তৈরি চারা গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে চারাগাছ নিজেকে রক্ষা করতে পারবে ।

  আবার , অনেকেই নিমপাতা চিবোতে চিবোতে কৃষি ক্ষেত্রে ধানের বীজ বপন করে । কেউ কেউ ক্ষেতের মধ্যে বীজ বপনের সময় নিমপাতা না চিবিয়ে ধানের বীজ বপনের শেষে বাড়িতে এসে নিমপাতা দিয়ে ফ্যান ভাত খায়।  

এ সম্পর্কে প্রচলিত লোকবিশ্বাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক । নিমপাতা রোগ প্রতিরোধক ও জীবাণুনাশক । বীজ ধান অনেক দিন ধরে সংরক্ষিত থাকে বলে বর্ষার শুরুতে বীজ ধানের মধ্যে নানা ধরনের পোকা ও জীবাণু সৃষ্টি সম্ভাবনা থেকে যায় । ধানের বীজ বপনের সময় বপনকারীর শরীরে সেই পোকা বা জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে । নিমপাতা চিবিয়ে সেই পোকা বা জীবাণুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করা যায় । এছাড়া নিমপাতা চিবানোর সময় মুখ দিয়ে যে শ্বাস বায়ু বার হয় তা অনেকটা বীজ ধানের জীবাণুনাশক ও শোধক রূপে কাজ করে।

২ ) ধানের পাঁচ আঁটি করা সংক্রান্ত লোকবিশ্বাস : 

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষকেরা যেদিন প্রথম আমন ধানের চারা রোপণ করে , সেদিন কৃষকগৃহিণী সিক্ত বস্ত্রে, বিশুদ্ধ চিত্তে , পূর্ব দিকে মুখ করে প্রথমেই ধানের পাঁচটি গাছি রোপণের মধ্যে দিয়ে ধান লাগানোর সূচনা করেন। কৃষকগৃহিণী কর্তৃক প্রথমে ধানের পাঁচটি গাছি লাগানোর এই প্রক্রিয়াকেই এখানকার কৃষক সমাজে  ‘পাঁচআঁটি করা বলা হয় । 

 এ বিষয়ে প্রচলিত লোকবিশ্বাস আছে যে চাষির গৃহিণী নিজেইপাঁচ আঁটি  করে ধান্য রোপণের সূচনা করলে ধানের ফলন ভালো হবে । কৃষকগৃহিণীর অবর্তমানে কৃষক নিজেই পাঁচ আঁটি করেন।

৩ )  বীজ বপনের দিন বাইরের কাউকে ধান দেওয়া নিষিদ্ধ -এ সংক্রান্ত প্রচলিত লোকবিশ্বাস : 

কৃষকেরা ধানকে লক্ষ্মী বলে মনে করে । কৃষিক্ষেত্রে ধানের বীজ বপনের দিন বাইরের কাউকে ধান দেওয়া হয় না । পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের মূলনিবাসী কৃষক সমাজের মধ্যে এই বিশ্বাস গভীরভাবে প্রচলিত রয়েছে যে ধান যেহেতু লক্ষ্মী , সেহেতু বীজ বপনের দিন লক্ষ্মীকে বাইরের কারোর হাতে দেওয়া হবে না , ঘরের লক্ষীকে অন্যের হাতে দেওয়া যাবে না ।

 আবার , বীজ বপনের মধ্যে নিহিত পরবর্তী বছরে ভালো ফসল লাভের আশা অর্থাৎ লক্ষ্মী লাভের বাসনা । এই বিশ্বাসের সূত্র ধরেই বীজ বপনের দিন ঘরের লক্ষ্মীকে অর্থাৎ ধান-কে বাইরের কারো হাতে দেওয়া হয় না ।

৪ ) উৎপাদিত ফসলের ‘ আগ রাখা ‘ সংক্রান্ত প্রচলিত লোকবিশ্বাস :

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের মূলনিবাসী কৃষক সমাজের মধ্যে প্রচলিত ধান সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ লোকবিশ্বাস হল ‘ আগ রাখা ‌‘ ।

 কৃষক সমাজে ‘ আগ রাখা ‘ কথাটির অর্থ হলো উৎপাদিত ফসলের প্রথম অংশ রাখা অর্থাৎ উৎপাদিত ফসল ( মূলত ধান ) কাউকে দেওয়ার আগে প্রথমেই কিছু অংশ বাড়িতে তুলে রাখাকেই ‘ আগ রাখা ‘ বলে ।

  এ বিষয়ে কৃষক সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস আছে  যে , উৎপাদিত ফসল প্রথমেই যদি লোককে দেওয়া হয় তাহলে বাড়িতে লক্ষ্মী থাকে না এবং সেই ফসল দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায় । কিন্তু যদি নতুন ফসলের ‘ আগ রাখা ‘ হয় অর্থাৎ উৎপাদিত ফসলের কিছুটা অংশ প্রথমেই চাষির নিজের বাড়িতে রেখে দেওয়া হয় তাহলে মা লক্ষ্মী সারা বছর সেই চাষির বাড়িতে অচলা হয়ে থাকবেন এবং চাষিকে অন্ন যোগাবেন – এই বিশ্বাস কৃষক সমাজে রয়েছে ।

এই বিশ্বাসের পিছনে ঐতিহাসিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষিত : 

বেশ কিছুকাল আগে পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে মহাজনি প্রথা প্রচলিত ছিল । এই প্রথা অনুসারে , এই অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকেরা মহাজনের কাছ থেকে চাষ করার জন্য ধান ঋণ হিসেবে নিত । ফসল তোলার পর সেই ঋণের দেড়গুণ পরিমাণ ফেরত দিতে হত । ফলে কৃষকের বাড়িতে নতুন ফসল প্রায় কিছুই থাকত না । এ হেন বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে কষ্ট করে ফলানো ফসলের কিছুটা অংশ যাতে চাষির নিজের বাড়িতে থাকে তার জন্য কৃষক সমাজে ‘ আগ রাখা ‘ র নিয়ম প্রচলিত হয়েছে , যা কালক্রমে এই অঞ্চলে একটি লোকবিশ্বাসে পরিণত হয়েছে । এই লোকবিশ্বাস আজও এই অঞ্চলে প্রচলিত।

৪ )  ধান মাপার সময় কথা বলা বা গোলমাল করা নিষিদ্ধ – এ সংক্রান্ত লোক বিশ্বাস : 

যে সময় কৃষক সমাজে কৃষিকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের লোকবিশ্বাসগুলি গড়ে উঠেছিল সে যুগে কৃষক সমাজে শিক্ষার অভাব হেতু ধান মাপার হিসাবের  ক্ষেত্রে ‘ শলা ‘ (ধানের ছোট স্তূপ ) দেওয়া পদ্ধতির প্রচলন হয়  । সাধারণত বিশ সের ধান ধরে এমন মাটির তৈরি হাঁড়িতে ( যাকে স্থানীয়ভাবে উমান হাড়ি বলে ) ধান মাপা হয় । প্রতি ধান ভর্তি হাঁড়ির জন্য শ্রেণিবদ্ধ ভাবে ছোট ছোট স্তুপাকারে শলা দেওয়া হয় । এই ছোট ধানের স্তুপকে শলা বলা হয় । 

সাধারণত শুধুমাত্র শলা  দেওয়ারকাজেই একজন নিযুক্ত থাকে । ধান মাপার ক্ষেত্রে এই শলা দেওয়ার পদ্ধতি মূলত পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন  অঞ্চলেই প্রচলিত । খামারে ধান মাড়াইয়ের  পর মাপার সময় কামিন-মুনিসকে  ( কৃষি শ্রমিক ) বেশি ধান দেওয়ার সময় বা  কুঁচুড়ি ( পুড়া ), মরাই ইত্যাদি তৈরি করার সময় হিসাবের ক্ষেত্রে এই শলা  দেওয়ার প্রচলন আজও এই অঞ্চলের কৃষক সমাজে বিদ্যমান ।

  যখন ধান মাপা হয় তখন কোনো কথা বলা যাবে না এবং যে ব্যক্তি শলা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত রয়েছে তার স্থানান্তর চলবে না ।

 এই অঞ্চলের কৃষক সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে ধান মাপার সময় কথা বললে বা শলা  দেওয়ার কাজে নিযুক্ত ব্যক্তির স্থান পরিবর্তন ঘটলে ফসলের পরিমাণ কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে । 

 এছাড়া ধান মাপার সময় বাইরের কোনো ব্যক্তির খামারে প্রবেশ বা খামারে থাকা ব্যক্তিদের খামার থেকে প্রস্থান নিষিদ্ধ । 

ধান মাপার সময় চাষির বাড়িতে ঢেঁকি ব্যবহার করা হয় না । কৃষকেরা বিশ্বাস করেন , ধান মাপার সময় ঢেঁকি ব্যবহার করা হলে ঢেঁকির আওয়াজে একদিকে যেমন হিসাবে গোলমাল হতে পারে অন্যদিকে তেমনি চাষির বাড়িতে অচলা লক্ষ্মী চঞ্চলা হয়ে উঠতে পারেন ।

 প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের বিধি-নিষেধ বা বিশ্বাসগুলির প্রচলন হয়েছে মূলত ধান মাপার সময় যাতে হিসাবে কোনো গোলমাল না হয় তার জন্যে ।

ধান মাপা সমৃদ্ধির প্রতীক । সমৃদ্ধির বেশি জানাজানি হওয়া কাম্য নয় , কারণ এতে প্রতিবেশি হিংসা করতে পারে । তাই ধান মাপার ক্ষেত্রে বহুবিধ বিধি-নিষেধ প্রবর্তনের মধ্যে এই Folk Psychology অনেকটা কাজ করেছে বলে মনে হয়। ।

৫ ) বীজ ধান বপনের দিনে শাক খাওয়া নিষিদ্ধ সংক্রান্ত লোকবিশ্বাস : 

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে প্রচলিত আরো একটি লোকবিশ্বাস হল যে , যেদিন বীজ ধান বপন করা হয় , সেদিন বাড়িতে শাক খাওয়া হয় না। 

 এক্ষেত্রে প্রচলিত বিশ্বাস হল যে , বীজ বপনের দিনে শাক খেলে বীজ ধান থেকে তৈরি চারা ক্ষেতের মধ্যে অনেক ঘাস ও আগাছা জন্মাবে যা ধানের চারা গাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টিকে ব্যাহত করবে । তাই প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বীজ ধান বপনের দিনে বাড়িতে শাক রান্না করা হয় না । অর্থাৎ বীজ বপনের দিন শাক খাওয়া নিষিদ্ধ – এই লোক বিশ্বাস এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ।

এইলোকবিশ্বাসের পিছনে যুক্তিসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি :

এই লোকবিশ্বাসের পিছনে  যুক্তি হিসেবে বলা যেতে পারে যে , শাক রান্না করা হলে শাকের বীজ ও শাকের সঙ্গে মিশে থাকা ঘাসের বীজও ধানের বীজের সঙ্গে মিশে যেতে পারে , যা থেকে চারাক্ষেত্রে আগাছা ও ঘাস সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে যায়।

৬ )  ধানের স্তুপিকৃত শস্যে লক্ষ্মণ বেড়ি 

 সংক্রান্ত লোকবিশ্বাস :

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের মূলনিবাসী কৃষকদের মধ্যে খামারে ধান ঝাড়াই- এর সময় বেশ কিছু লোকবিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ধান ঝাড়াইয়ের পর স্তুপিকৃত শস্যের চারপাশে লক্ষ্মণ বেড়ি , লোহার টুকরো , কূপ (কলসি আকৃতির ছোট মাটির পাত্র বিশেষ ) , ধূপবাতি দেওয়া সংক্রান্ত লোকবিশ্বাস । 

খামারে ধান ঝাড়াই- মাড়াইয়ের পর  স্তুপিকৃত শস্য যাতে কোন অশুভ শক্তি বা  অশরীরী আত্মা নষ্ট করতে না পারে তার জন্যে স্তুপিকৃত শস্যের চারদিকে কুলো দিয়ে লক্ষ্মণ বেড়ি অর্থাৎ দাগ দেওয়া হয়। রামায়ণ মহাকাব্যে যেমন সীতাকে রক্ষা করার জন্য  লক্ষ্মণ সীতার চারদিকে বেড়ি দিয়েছিলেন তেমনি এই অঞ্চলের কৃষকেরা শস্য রক্ষার্থে শস্যের চারপাশে বেড়ি দেন । 

এছাড়া স্তুপিকৃত শস্যের মধ্যে একটি লোহার টুকরো এবং পাশে গোবর ও  ধূপবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । লোহার টুকরো দেওয়া হয় অপদেবতার প্রভাব এড়ানোর জন্য এবং কূপ হল ধনসঞ্চয়ের দেবতা কুবেরের প্রতীক । ধূপবাতি জ্বালিয়ে বিশুদ্ধ পরিমণ্ডল গড়ে তোলা হয় । অনুরূপভাবে খামারের স্তুপিকৃত ধান যখন ঘরে এনে রাখা হয় তখনও শস্যের চারপাশে লক্ষ্মণ বেড়ি দেওয়া হয় এবং কূপ , লৌহ খন্ড রেখে দেওয়া হয় এবং সেই ঘরে ধূপবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ।

 কৃষকেরা বিশ্বাস করে যে , এর ফলে ঘরের ভিতরেও শস্য অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং ঘরে অন্নাভাব হবে না । পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষক সমাজে এই লোকবিশ্বাসটিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে তা মেনে চলা হয় ।

৭ )  ধান ঝাড়াই সংক্রান্ত লোকবিশ্বাস :

পুরুলিয়া জেলা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কৃষক সমাজে ধান ঝাড়াইয়ের  সময় বেশ কিছু লোক বিশ্বাস মেনে চলা হয় । এগুলি হল – 

ক )  যেখানে ধান ঝাড়া হয় সে স্থানে ( যাকে পাটাতন বলে ) ধান ঝাড়ার সময় একটি লোহার টুকরো রেখে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রচলিত লোকবিশ্বাস আছে যে লোহার টুকরো থাকার ফলে  ঝাড়া ধান কোনো অশুভ শক্তি বা অশরীরী আত্মা নষ্ট করতে পারেনা ; বরং শস্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে । কৃষকেরা বিশ্বাস করে যে পাটাতনে লোহার টুকরো না দেওয়া হলে ধানের শস্যি (ধানের পরিমাণ )  কমে যায়। 

খ ) এই অঞ্চলের কৃষকেরা খামারে ধান ঝাড়ে পূর্ব দিকে মুখ করে । কৃষকেরা পূর্বদিক-কে বিশুদ্ধ দিক বলে মনে করে । কারণ পূর্বদিকে সূর্য উঠে । সূর্যালোক জীবাণু নষ্ট করে । তারা বিশ্বাস করে যে , পূর্ব দিকে মুখ করে ধান ঝাড়লে ধানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ।

 ধানকেন্দ্রিক এই লোকবিশ্বাসগুলির মধ্যে একদিকে যেমন যাদুক্রিয়া বর্তমান , অন্যদিকে তেমনি এক গভীর আশাবাদ প্রতিফলিত হয় । ধান যে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ ফসল – তা ধানকে কেন্দ্র করে বহুবিধ লোকবিশ্বাসের প্রচলন থেকেই বোঝা যায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top