

উত্তরাপথঃ আজকের স্বাস্থ্য-সচেতন বিশ্বে, প্রতিদিনের মাল্টিভিটামিন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতাকে ঘিরে বিতর্ক যথেষ্ট আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রয়েছেন যারা মনে করেন যে প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন গ্রহণ তাদের দীর্ঘায়ু বাড়াতে সাহায্য করবে। সেই কারণে তারা প্রতিদিন স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করেন।তবে এক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী তথ্য উপলব্ধ থাকায়,দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষেত্রে আমাদের স্বাস্থ্যে মাল্টিভিটামিনের ভূমিকা বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন।
মাল্টিভিটামিন হ’ল খাদ্যতালিকাগত পরিপূরক যা ভিটামিন এবং খনিজগুলির সংমিশ্রণ, সাধারণত মাল্টিভিটামিনের ডোজগুলি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যা আমাদের দৈনিক সুষম খাদ্য গ্রহণের জন্য যতটা পুষ্টি দরকার তার সমতুল্য হয়। মাল্টিভিটামিন পিল আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহণের পর পুষ্টির যে ঘাটতি থাকে তা পূরণ করে, বিশেষ করে এমন ব্যক্তিদের জন্য যারা প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না।
সম্প্রতি গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩ শতাংশ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন ব্যবহার করেন। এর পিছনে তাদের চিন্তাভাবনা হল যে এটি কেবল তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে না, এই পদক্ষেপটি তাদের রোগ থেকেও রক্ষা করবে, যা দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।এত বড় পরিসরে মাল্টিভিটামিন ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু মাল্টিভিটামিন সত্যিই দীর্ঘ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে কিনা তা প্রমাণ করার জন্য পূর্ববর্তী গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে মাল্টিভিটামিনের দৈনিক ব্যবহারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রাথমিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারেনি।NIH-এর এই নতুন গবেষণাটি জামা নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত হয়েছে।তবে এক্ষেত্রে, প্রকাশিত গবেষণায়, যদিও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু গবেষণার ফলাফল ,পরামর্শ দেয় যে মাল্টিভিটামিন এখনও নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতিযুক্ত লোকদের জন্য উপকারী হতে পারে।
এই NIH গবেষণাটি মোট ৩৯০,১২৪ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক দের উপর করা হয়,যাদের বয়স ১৮ থেকে ৭৪ বছর বয়সী, যাদের কোনো গুরুতর অসুস্থতার ইতিহাস ছিল না। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুই দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এবং কিছু লোককে ২৭ বছর ধরে অনুসরণ করা হয়েছিল।এই গবেষণার সময় ১৬৪,৭৬২ জন অংশগ্রহণকারী মারা গেছে। এসব মৃত্যুর মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যান্সারে, ২১ শতাংশ হৃদরোগে এবং ৬ শতাংশ মস্তিষ্ক সংক্রান্ত রোগে মারা গেছে।এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন কোন ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য ধরনের সাপ্লিমেন্ট তারা কখন ব্যবহার করেছেন।
প্রসঙ্গত ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং আয়রনের মতো কিছু ভিটামিনের অত্যধিক গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যের প্রতি বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অতএব, প্রস্তাবিত ডোজ নির্দেশিকা অনুসরণ করা এবং কোনও নতুন পরিপূরক পদ্ধতি শুরু করার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন