মৃত সাগরে (Dead Sea) কোনও প্রানের অস্তিত্ব নেই কিন্তু কেন?

কৌতূহলের কেন্দ্রে মৃত সাগরে থাকা রহস্য – ছবি -উত্তরাপথ

উত্তরাপথঃ মৃত সাগর নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই, তাদের কৌতূহল মূলত দুটি বিষয় কে নিয়ে এক সত্যি কি মৃত সাগরে কোনও মাছ বা জলজ উদ্ভিদ বাঁচেনা? আর দুই কেন? এর পেছনে আসল কারণ কি?

প্রথমেই আসা যাক মৃত সাগরের ভৌগলিক অবস্থানে, এর অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েল এবং জর্ডানের মধ্যে।এর পূর্ব উপকূল জর্ডানের অন্তর্গত, এবং এর পশ্চিম তীরের দক্ষিণ অর্ধেক ইসরায়েলের অন্তর্গত। সাধারণ ভাবে সাগর বা সমুদ্র যেখানে সাধারণত ব্যাপক প্রাণের অস্তিত্ব দেখা যায়, সেখানে এই গোটা সাগর একদম মৃত। তবে সাগর এই নামটির মধ্যে ভেতরে একটা সমস্যা আছে। মৃত ‘সাগর’ আসলে সাগর নয়, লেক—বাংলায় যাকে বলে হ্রদ।প্রকৃতপক্ষে, এটি প্রায় ৩৪% লবণাক্ততার স্তর সহ বিশ্বের সবচেয়ে লবণাক্ত জলের একটি হ্রদ।

কৌতূহলের কেন্দ্রে মৃত সাগরে’র রহস্য – ছবি -উত্তরাপথ

মৃত সাগরে প্রাণের অভাবের একটি প্রধান কারণ হল উচ্চ লবণের পরিমাণ। বেশিরভাগ জীবের বেঁচে থাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্তরের লবণাক্ততা প্রয়োজন, কিন্তু মৃত সাগরের লবণের পরিমাণ যেকোনো জীবের বেঁচে থাকার জন্য অনেক বেশি। চরম লবণাক্ততা এখানে একটি রূঢ় পরিবেশ তৈরি করেছে যা উদ্ভিদ ও প্রানী উভয়ের জীবনের জন্য অযোগ্য।

উপরন্তু, মৃত সাগর অত্যন্ত ক্ষারীয়, যার pH মাত্রা প্রায় ৯.৬। এই ক্ষারত্ব আরও অণুজীব এবং অন্যান্য জীবন গঠনের বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয় যারা সাধারণত জলের উপর বাস করে। উচ্চ লবণের ঘনত্ব এবং ক্ষারত্বের সংমিশ্রণ মৃত সাগরে যে কোনও প্রাণের অস্তিত্বকে অবিশ্বাস্যভাবে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।

মৃত সাগর নাম থাকা সত্ত্বেও, মৃত সাগরের তীরে কিছু ধরণের জীবনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সমুদ্রের চারপাশের কাদা এবং লবণের আস্তরণে নির্দিষ্ট ধরণের ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া পাওয়া গেছে। এই এক্সট্রিমোফাইলগুলি মৃত সাগরের কঠোর অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং এই অনন্য পরিবেশে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছে।

ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায় ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ বছর আগে এ অঞ্চলের টেকটোনিক প্লেট বা মহাদেশীয় পাতগুলো যখন পরস্পর থেকে সরে যেতে শুরু করে, তখন এখানে তৈরি হয় বিশাল খাদ। এই খাদ মেডিটেরেনিয়ান সি বা ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেখান থেকে লবণাক্ত জল এসে পড়ে খাদে, গড়ে ওঠে মৃত সাগর। তখনো কিন্তু এটি মৃত ছিল না, সেটা ঘটেছে পরের কয়েক মিলিয়ন বছরে। টেকটোনিক প্লেট বা মহাদেশীয় পাতের কয়েক মিলিয়ন বছরের নড়াচড়ায় ধীরে ধীরে ওপরে উঠে যায় এ অঞ্চলের ভূমি। ফলে ভূমধ্যসাগর ও অন্যান্য জলাশয় থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, পরিণত হয় হ্রদে। দীর্ঘদিন এর লবণাক্ত জল এক জায়গায় আবদ্ধ, সেইসঙ্গে এই অঞ্চলে জল বাষ্পীভূত হওয়ার হার বেশি, বৃষ্টিপাতের হার কম। অর্থাৎ জল বাষ্পীভূত হয়ে কমে যাচ্ছে দিন দিন, কিন্তু লবণ রয়ে যাচ্ছে নিচে।অন্যদিকে নতুন জল আসার পথও নেই। ফলে বাড়তে থাকে লবণের ঘনত্ব। ধীরে ধীরে লবণের ঘনত্ব বেড়ে গিয়ে  হাইপারস্যালাইনে পরিণত করেছে মৃত সাগরের পুরো জলটিকে, যা মেরে ফেলেছে এখানকার মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবদের। এভাবে কালের আবর্তে হ্রদটি পরিণত হয়েছে  মৃত সাগরে।

যদিও মৃত সাগর অন্যান্য জলাশয়ের মতো বিভিন্ন ধরণের জীবনকে সমর্থন করতে পারে না, তবে এটি তার অনন্য বাস্তুতন্ত্রের কারণে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।মৃত সাগরের চরম লবণাক্ততা এবং ক্ষারত্ব এক ধরনের পরিবেশ তৈরি করে যা পৃথিবীর অন্য কোনো পরিবেশের মতো নয়।আজ দেশ বিদেশের বহু পর্যটক তাদের চর্মরোগ সংক্রান্ত বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সমাধানে মৃত সাগরে যান। মৃত সাগরের চরমপন্থী আবহাওয়া গবেষকদের জন্য অন্যতম বৈজ্ঞানিক আগ্রহের বিষয়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বেতন, মাসে ৩০,০০০ আর সম্পত্তির মালিকানা ৭ কোটির বেশী

উত্তরাপথ: এ এক দুর্নীতির অনন্য নজির যা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি কে লজ্জায় ফেলবে । দুর্নীতির এই অভিযোগটি উঠেছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ হেমা মীনার বিরুদ্ধে।মধ্যপ্রদেশের সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর হেমা মীনা প্রচার মাধ্যমের নজরে আসে । এখন প্রশ্ন কে এই হেমা মীনা ? মধ্যপ্রদেশ পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োজিত সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ যিনি মাসে ৩০,০০০ টাকা আয় করেন । দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তার বাড়ি থেকে সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি, ২০,০০০ বর্গফুট .....বিস্তারিত পড়ুন

মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব

দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়

এ যেন বহুদিন পর বিজেপির চেনা ছন্দের পতন। হিমাচল প্রদেশের পর কর্ণাটক কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির বিজয়রথকে থামিয়ে দিল ।২০১৮ পর থেকে লাগাতার হারতে থাকা একটি দল আবার ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক হয়ে গেল । ২২৪ সদস্যের কর্ণাটক বিধানসভায় সরকার গঠন করতে গেলে প্রয়োজন ১১৩টি আসন সেখানে কংগ্রেস একাই পেয়েছে ১৩৬টি আসন, বিজেপি পেয়েছে ৬৫ টি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার জেডিএস পেয়েছে ১৯টি এবং অন্যান্য ৪ টি আসন পেয়েছে। যা গতবারের তুলনায় বিজেপির ৩৯ টি আসন কমেছে এবং কংগ্রেসের বেড়েছে ৫৭টি আসন এবং জেডিএসের কমেছে ১৮ টি আসন।   কর্ণাটকে কংগ্রেসের এই সাফল্য কি রাজ্যে কংগ্রেসের শক্তিশালী সংগঠনের ফল না কি কর্ণাটকের আগের ক্ষমতাশীল বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ । কর্ণাটকে কংগ্রেসে অনেক বড় নেতা রয়েছে।  প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শিবকুমার দক্ষ সংগঠক। আগের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার ব্যাপক জনভিত্তি রয়েছে।  ভোটের আগে বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী সাভাড়ি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে নির্বাচনে লড়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির প্রচারের সবচেয়ে বড় মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপির প্রচারে সব নেতারাই মোদীর নাম করেই ভোট চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হল না ।কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি সেই সাথে কংগ্রেসের লাগাতার প্রচার যা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুরকে আরও তীব্র করেছে। তাই শুধুমাত্র মোদী ম্যাজিকের উপর ভর করে নির্বাচন জেতা যে  আর বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয় কর্ণাটকের জনগণ চোখে হাত দিয়ে তাই দেখিয়ে দিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top