সাম্প্রতিক গবেষণা ত্বকের ক্যান্সার (মেলানোমা) সম্পর্কে প্রকাশ করল নতুন তথ্য

উত্তরাপথঃ এক্সট্রিম মেলানোমা হল এক ধরনের ত্বকের ক্যান্সার যা মেলানোসাইট নামে পরিচিত রঙ্গক-উৎপাদনকারী কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। এটি মানুষের দেহে যেমন বাহু, হাত এবং পায়ে বিকাশ হতে পারে। এটি ত্বকের ক্যান্সারের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক রূপগুলির মধ্যে একটি যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে যদি তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা না হয় এবং দ্রুত চিকিৎসা করা না হয়। বিশ্বব্যাপী ত্বক-ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর ৭৫% জন্য দায়ী।এতদিন ফর্সা ত্বকযুক্ত ব্যক্তিদের মেলানোমা হওয়ার ঝুঁকি কমাতে প্রায়শই সূর্যের এক্সপোজারের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হত, সেক্ষেত্রে বলা হত কালো ত্বকের ব্যক্তিদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।   

তবে সাম্প্রতিক মায়ো ক্লিনিকের গবেষণার মূল ফলাফলগুলিতে বলা হয় মেলানোমা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কালো ত্বকের বর্ণযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পরে সনাক্ত করা হয়।দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি  ভুল ধারণা যে কালো ত্বকের লোকেদের ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি নেই এই কারণে কালো ত্বকের ব্যক্তিদের মধ্যে এক অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।এটি একটি বিপজ্জনক অবৈজ্ঞানিক ধারনা যার পরিণতি মারাত্মক  হতে পারে।এক্ষেত্রে সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট টিনা হাইকেন, এমডি, গবেষণার সিনিয়র লেখক এবং মায়ো ক্লিনিক কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারের একজন গবেষকের মতে, “আমরা নন-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ রোগীদের শ্বেতাঙ্গ রোগীদের সাথে তুলনা করেছি এবং রোগীরা কীভাবে এই রোগে উপস্থাপিত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখেছি,”

যদিও মেলানোমা ফর্সাদের তুলনায় গাঢ় বর্ণের লোকেদের মধ্যে কম দেখা যায়, তবে ক্যান্সারের এই গুরুতর রূপ যে কাউকে আঘাত করতে পারে। মেলানোমায় আক্রান্ত ৪৯২,৫৯৭জন রোগীর উপর করা মায়ো ক্লিনিকের গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে প্রাথমিক স্তরে অতিরিক্ত সতর্কতা বিশেষভাবে কালো পুরুষদের জন্য প্রয়োজন, যাদের ক্যান্সার প্রায়ই ফর্সা ত্বকের তুলনায় পরবর্তী পর্যায়ে ধরা পড়ে, সেই কারণে সাদা রোগীদের তুলনায় গাঢ় বর্ণের লোকেদের চিকিৎসা করা কঠিন হয়।

কালো ত্বকের ব্যক্তিদের ফর্সা ত্বকের তুলনায় মেলানোমা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে, তবে পরবর্তী পর্যায়ে তাদের নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যখন ক্যান্সার আরও উন্নত এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়। এর কারণ হল মেলানোমা কালো ত্বকে সহজে আলাদা করতে ভুল হতে পারে, যার ফলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা বিলম্বিত হয়।

কালো ত্বকের ব্যক্তিদের মধ্যে মেলানোমা দেরী সনাক্তকরণের পরিণতিগুলি বিধ্বংসী হতে পারে। উন্নত মেলানোমা শরীরের অন্যান্য অংশে যেমন লিম্ফ নোড, ফুসফুস, লিভার বা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি, যা চিকিৎসা করা আরও কঠিন করে তোলে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সেই কারণে সমস্ত ত্বকের রঙের ব্যক্তিদের জন্য প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং সময়মত চিকিৎসার গুরুত্ব খুব বেশী । এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সাবধানে হাতের তালু, পায়ের পাতা এবং নখের নীচের অংশগুলি পরীক্ষা করা উচিত, যেখানে মেলানোমা কালো ত্বকে দাগ তৈরি করতে পারে।

কালো ত্বকের ব্যক্তিদের মধ্যে মেলানোমা প্রাথমিক সনাক্তকরণ উন্নত করতে, রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারা নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে সহকারী চিকিৎসকদের শিক্ষিত হওয়া উচিত যে কীভাবে কালো ত্বকের ব্যক্তিদের মধ্যে মেলানোমা ভিন্নভাবে উপস্থিত হতে পারে এবং রোগীদের পরীক্ষা করার সময় এই বৈচিত্রগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top