জাপান রকেট জ্বালানীতে বায়োমিথেন তৈরিতে গরুর বর্জ্য ব্যবহারের জন্য কাজ করছে

উত্তরাপথঃ একটি জাপানি রাসায়নিক উৎপাদনকারী কোম্পানি তরল বায়োমিথেন তৈরি করতে গরুর বর্জ্য ব্যবহার করার জন্য কাজ করছে যা পরে রকেট জ্বালানী (Rocket Fuel) হিসাবে ব্যবহার করা হবে।রকেট জ্বালানীতে গরুর বর্জ্য ব্যবহার ডায়েরি শিল্পের সাথে যুক্ত বর্জ্য নিষ্পত্তির সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করবে, টোকিওভিত্তিক কিয়োডো নিউজ জানিয়েছে।

এয়ার ওয়াটার ইনকরপোরেটেড (Air Water Inc)সোমবার বলেছে, তারা আসন্ন শরতের মৌসুমে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা করছে। এতে যে তরল বায়োমিথেন তৈরি হবে, তা জাপানি মহাকাশ স্টার্টআপ সংস্থা ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিসের (Interstellar Technologies Inc.) নির্মিত একটি রকেটে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হবে। সংস্থাটির সদর দপ্তর জাপানের উত্তর দ্বীপ হোক্কাইডোতে অবস্থিত।

এয়ার ওয়াটার ২০২১ সাল থেকে হোক্কাইডো দ্বীপে তরল বায়োমিথেন উৎপাদনে সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত রয়েছে। কিয়োডো নিউজ অনুসারে এই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় গোবর ও মূত্রের গাঁজন জড়িত, যা তাইকি শহরের একটি দুগ্ধ খামারে অবস্থিত একটি বিশেষ প্লান্টে করা হবে। পরে প্লান্টে উৎপন্ন বায়োগ্যাস ওবিহিরোতে অবস্থিত একটি কারখানায় পরিবহন করা হবে। কারখানায় পণ্য থেকে মিথেনকে আলাদা করার জন্য সূক্ষ্ম পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হবে। তারপর এটিকে তরল বায়োমিথেনে রূপান্তরের জন্য একটি শীতল প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। রকেট মহাকাশে বিস্ফোরিত করার জন্য, শক্তি উৎপন্ন করার জন্য তরল জ্বালানী প্রয়োজন।  যদিও উচ্চ-বিশুদ্ধ মিথেন সাধারণত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, কোম্পানিটি বর্জ্য-উৎসৃত বায়োগ্যাসের মাধ্যমে একই মানের মিথেন তৈরির জন্য কাজ করছে।

গরুর বর্জ্য(Cow waste) থেকে তৈরি জ্বালানি তার ডিভাইসের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে কিনা তা নিশ্চিত করতে ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিস দ্বারা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।কোম্পানির লক্ষ্য একটি ছোট স্যাটেলাইট পেলোড সহ “জিরো” (Zero) রকেটের জন্য এটি ব্যবহার করা।

 কিয়োডো নিউজ অনুসারে এয়ার ওয়াটারের একজন প্রতিনিধি বলেছেন “আমরা কার্বন-নিরপেক্ষ শক্তি ব্যবহার করে রকেটটি উপরে পাঠাতে চাই”।

জাপানের এই সাম্প্রতিক উদ্যোগটি যদি সফল হয় তাহলে দুগ্ধ চাষিদের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মহাকাশ খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার—উভয় ক্ষেত্রেই বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।

রকেট জ্বালানীতে গরুর বর্জ্য ব্যবহার মহাকাশ গবেষণায় একটি আসাধারণ আবিষ্কার ,সেইসাথে এটি পরিবেশগতভাবে একটি সচেতন পদক্ষেপ। গরুর বর্জ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে, মহাকাশ স্টার্টআপগুলি কেবল নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলিই অন্বেষণ করছে না ,সেই সাথে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যার সমাধান করছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গবেষণার অগ্রগতির সাথে সাথে, আমরা এমন এক ভবিষ্যতের সাক্ষী হতে পারি যেখানে গরুর বর্জ্য রকেটকে চালিত করবে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী মহাকাশ গবেষণার জন্য নতুন সম্ভাবনার সূচনা করবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বৈধ নথি ছাড়া প্লেনে ওঠার চেষ্টা এটি কি নিছক কৌতুহল মেটানো

উত্তরাপথঃ এটি কি নিছক কৌতুহল না কি কিশোর দুস্ক্রিয়তা। সম্প্রতি বাংলাদেশ এর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট, টিকিট বা বোর্ডিং পাশ কোনও কিছু ছাড়াই জুনায়েদ নামের ১২ বছরের এক শিশু বৈধ নথি ছাড়া বিনা বাধায় কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও প্লেনে চড়তে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। এবার কৌশল পালটে বিমানবন্দরে ঢোকে শিশুটি। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি বিভাগের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শাতে বলা  হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। যে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে, সেই কুয়েত এয়ারলাইন্সকেও শোকজ করা হয়েছে।  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, ছেলেটি ব্রোকেন ফ্যামেলি .....বিস্তারিত পড়ুন

মানব-চালিত রোবট ARCHAX এর সাথে দেখা করুন

উত্তরাপথঃসাম্প্রতিক বছরগুলিতে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আমাদের এক ধাপে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে এসেছে, আজ রোবটগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বয়ংক্রিয় সহকারী থেকে স্ব-ড্রাইভিং গাড়ি পর্যন্ত,সর্বত্র আজ রোবটের অবাধ উপস্থিতি। ARCHAX মানব-চালিত এই রোবট  এমনই এক উদ্ভাবন যা বিজ্ঞানী এবং সাধারণ জনগণ উভয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । অটোনোমাস রোবোটিক কম্প্যানিয়ন উইথ হিউম্যান অ্যাসিসট্যান্সের সংক্ষিপ্ত আর্ক্যাক্স, এর একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বুদ্ধিমত্তাকে একজন মানব অপারেটরের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সাথে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে।জাপানের Tsubame Industries ARCHAX তৈরি করেছে।এটি একটি মানুষের আকারের ককপিট সহ একটি বিশাল ট্রান্সফরমার রোবট। .....বিস্তারিত পড়ুন

গ্লোবাল ওয়ার্মিং রিপোর্ট: ২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগজনক প্রতিবেদন

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্ব যখন বিশ্ব উষ্ণায়নের কেন্দ্র করে শুরু হওয়া জলবায়ু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেই সময়, ২০২৩ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে একটি উদ্বেগজনক প্রতিবেদন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ৮ আগস্ট যে পরিসংখ্যান আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন,তাতে আগামী দিনের ভয়াবহ পরিণতির জন্য বিশ্ববাসীকে সতর্কবাণী শুনিয়েছেন।এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে তাপ তরঙ্গ এবং দাবানলের জন্য ২০১৯ সালের জুলাই মাসটিকে চিহ্নিত করা হত । কিন্তু এবছর জুলাই মাসের তাপমাত্রা গত ২০১৯ সালের থেকেও ০.৩৩ সেন্টিগ্রেড বেশি ছিল EU-এর কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেছেন, "গত ১২০,০০০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণমূলক রেকর্ড এবং প্যালিওক্লাইমেট রেকর্ড এক সাথে সমন্বয় করে বিশ্লেষণ করলেও এত গরম ছিল না।" .....বিস্তারিত পড়ুন

বিক্রম সারাভাই: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার একজন দূরদর্শী পথিকৃৎ

উত্তরাপথঃ ডঃ বিক্রম সারাভাই ছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। তিনি একজন বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, শিল্পপতি এবং স্বপ্নদর্শীর ভূমিকা সমন্বিত, ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জনক হিসাবে বিখ্যাত।তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ভারত মহাকাশ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) এর প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম সেরা সাফল্য। তিনি রাশিয়ান স্পুটনিক উৎক্ষেপণের পর ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য মহাকাশ কর্মসূচির গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারকে সফলভাবে বোঝান।এরপর ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা, যিনি ভারতের পারমাণবিক বিজ্ঞান কর্মসূচির জনক হিসাবে পরিচিত, ভারতে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনে ডঃ সারাভাইকে সমর্থন করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top