অসীম পাঠকঃ নিঃসন্তান মিস্টার এন্ড মিসেস কাঞ্জিলাল দম্পতি প্রচন্ড মনোকষ্টে দিন অতিবাহিত করেন। সব থাকার মধ্যেও একটা অপ্রাপ্তির যন্ত্রনা, একরাশ শূণ্যতা। দিন যাপন আর প্রাণ ধারণের গ্লানি। কতো দিন আর কতোকাল এভাবে মন্দিরে পীরের দরগায় নার্সিং হোমে , চিকিৎসার জন্য বাইরের স্টেটে ছোটাছুটি করবেন, সব তো দেখলেন ডাক্তার , ভগবান কেও পারলো না। অবশেষে তাঁরা হোমে গেলেন মন পরিপূর্ণ সায় না দিলেও নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটা তিন বছরের বাচ্চা দত্তক নিলেন। অফিসিয়ালি কাগজপত্র সব রেডি করে ক্যাশ পেমেন্ট করে বাচ্চাকে বাড়ি আনলেন। নাম রাখলেন অরিজিৎ। খুশী না এলেও কাঞ্জিলাল পরিবারে কিছুটা স্বস্তি এলো। কার না কার রক্ত বইছে এর শরীরে। মাঝে মাঝে একরাশ বিরক্তি ঘৃণা অবজ্ঞা নিয়েই তাঁরা যেনো দায়িত্ব টুকু পালন করতেন ,দুধের সাধ ঘোলে মেটানো আর কি। অরিজিৎকে নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয়ে গেলো। মাঝখানে করুণ চোখে ফ্যালফ্যাল করে শূণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতো অভাগা অরিজিৎ , এসব কিছুই বুঝতো না নিষ্পাপ অরিজিৎ। এভাবেই দু বছর পেরিয়ে গেলো, অরিজিৎ এখন স্কুল যেতে শুরু করেছে।মি দিলীপ কাঞ্জিলালকে কয়েকদিনের জন্য অফিসের বিশেষ কাজে হেড অফিস মুম্বাই যেতে হয়েছিলো , গৃহ চিকিৎসক মি বিশ্বাসের কাছ থেকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো খবরটা তিনি পান,মিসেস রমা কাঞ্জিলাল এতোদিনে সত্যিই মা হতে চলেছেন। ঈশ্বরের কি বিচিত্র লীলা, কাঞ্জিলাল পরিবারে দেবদূতের আশীর্বাদের মতো স্বর্গ হতে আনন্দ ধারা নেমে আসে যেনো ,দশ মাস দশ দিনের প্রতীক্ষা। এই দশ মাসে অরিজিৎ এর প্রতি বঞ্চনা অবহেলা শতগুণ বেড়েছে। বাড়ির কাজের ছেলেতে পরিণত হয়েছে সে , সবাই যে আসছে তাকে নিয়ে বিভোর। সে যে রক্তের সম্পর্ক ,তার সাথে যে নাড়ির টান। এটাকে এনে কি পাপ যে হলো , এসবে ভাবনাতেই কাঞ্জিলাল দম্পতি বিরক্ত বোধ করতেন। আবার বন্ড করে আনা , ফেলেও দেওয়া যায়না আবর্জনার মতো ডাস্টবিনে। তাহলে তো অনেক হাঙ্গামা সইতে হবে। তাঁরা এটা বুঝতেন না যে অরিজিৎ আসার পরই কাঞ্জিলাল সাহেবের অফিসে পদোন্নতি হয়েছে , নতুন ফ্ল্যাট হয়েছে , মিসেস কাঞ্জিলাল মা হতে চলেছেন।মানুষ দায়ী তার কর্মের জন্য , জন্মের জন্য কেও দায়ী নয়। এই সরল সত্যটা উপলব্ধি করতে মানুষের অনেক দেরী হয় বলেই স্বার্থপরতার প্রাচীর ভেঙে সে বেরিয়ে আসতে পারেনা। মিথ্যা অহংকার আর আভিজাত্যের মোহ মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস শিশুর হাসি যাদের চোখে মনে আনন্দের শিহরণ জাগায় না তারা আবার কিসের মানুষ? নীরিহ নিষ্পাপ আরিজিৎ কাঞ্জিলাল দম্পতির ঘৃণা অবজ্ঞা অবহেলায় শুকিয়ে যেতে থাকে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি সে।
অবশেষে আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত লগ্ন যদিও নির্দিষ্ট সময়ের দু মাস আগেই , ডক্টর ও আশঙ্কা করেছিলেন লেটেস্ট আল্ট্রা সোনাগ্রাফি রিপোর্ট দেখে , ডক্টর বিশ্বাস বলেওছিলেন , বেবী ডিফিকাল্ট সিচুয়েশনে আছে। কমপ্লিটলি বেড রেস্ট, তার উপর রমা দেবীর থাইরয়েড প্রোবলেম। বেশী বয়সে মা হতে চলেছেন। সেই দিনটা এসেই গেলো মি কাঞ্জিলাল অফিসে। পেটে জোর ব্যাথা অনুভব করতেই রমা দেবী ব্যাকুল হয়ে পড়েন। ছ বছরের অরিজিৎ ডক্টর আংকেলকে ফোনে ডাকে , এবং বাচ্চা অরিজিৎ এর তৎপরতায় নার্সিং হোমে আ্যাডমিট করা হয় রমা দেবীকে। মি কাঞ্জিলাল জরুরী মিটিং এ থাকায় মোবাইল সুইচ অফ রেখেছিলেন। ফোন চালু করতেই দেখেন সত্তর টা মিস কল বাড়ির ফোন থেকে। কল ব্যাক করেন ,ফোন বেজে চলে , অরিজিৎ তার মাকে নিয়ে নার্সিং হোমে। মা এর সেবায় ব্যাস্ত সে। ডক্টর বিশ্বাসের ফোনে ফোন করতেই খবর পান কাঞ্জিলাল , রমা নার্সিং হোমে ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন। একে অনেক বেশী বয়স তার উপর বেবী মুভ করছে না , সিজার করে বেবীকে বের করতে হবে, প্রি ম্যাচিউর সিজার। মি কাঞ্জিলাল নার্সিং হোমে ছুটে আসেন ,আরিজিৎ তখনো নিঃশব্দে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে একমনে ঈশ্বরকে ডেকে চলেছে এই কয়েকমাস সে তার মা এর অসম্ভব খেয়াল রেখেছে , তবুও সম্পর্কের বরফ গলেনি। আজ প্রথম বার অরিজিৎকে নার্সিং হোমে অসহায় দেখে দিলীপ কাঞ্জিলালের মায়া হলো , মনে হলো তাঁরা অবিচার করছেন এর উপর।.
ডক্টর বিশ্বাসের অক্লান্ত চেষ্টাতেও বাচ্চাকে বাঁচানো গেলো না। পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য হলো না নব জাতকের । অরিজিৎ কেঁদে চলেছে। বাচ্চা ছেলেটার চোখের জল কোন বাধা মানছে না , অথচ তার তো দুঃখ পাওয়া উচিৎ নয় ,মি কাঞ্জিলালকে ডক্টর বিশ্বাস বলেন কিছু করার ছিলো না , সুযোগ এসেছিলো কিন্তু ইন ফিউচার রমা দেবী আর মা হতে পারবেন না , আর হ্যাঁ অরিজিৎ ঠিক সময়ে হাসপাতালে না আনলে তাঁকেও বাঁচানো যেতোনা। তবে এরপর খুব সাবধানে না থাকলে রমা দেবীর জীবনই বিপন্ন হবে। এতোদিনে রমা দেবী মনের সব অন্ধকার সরিয়ে অরিজিৎকে কাছে টেনে বলে ওঠেন , এই তো আমার সাত রাজার ধন এক মানিক। অরিজিৎই আমার একমাত্র উত্তরাধিকারী। রক্তের সম্পর্ক নয় মনের টানটাই তো আসল। কোলাহল ময় হাসপাতালে মায়া মমতা জীবন মৃত্যুর খেলাঘরে অরিজিৎ তখনও ডুকরে ডুকরে কেঁদে চলেছে।
আরও পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন