

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ রাজস্থানের বর্ণময় ভূমিতে, যেখানে মরুভূমির বুকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে, সেখানে রাবারি উপজাতি তাদের অনন্য জীবনধারা ও ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এই যাযাবর সম্প্রদায়টি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজস্থানের থর মরুভূমির কঠিন পরিবেশে বেঁচে থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। তাদের রঙিন পোশাক, অপূর্ব হস্তশিল্প এবং পশুপালনের ঐতিহ্য তাদেরকে রাজস্থানের সাংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ করে তুলেছে। এই নিবন্ধে আমরা রাবারি উপজাতির ইতিহাস, জীবনধারা, সংস্কৃতি এবং তাদের জীবনে আসা আধুনিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ঐতিহাসিক পটভূমি
রাবারি উপজাতির উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিক মতভেদ রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, তারা মূলত পশ্চিম ভারতের যাযাবর পশুপালক সম্প্রদায়। কেউ কেউ বলেন, তারা মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিল, আবার অনেকে তাদের রাজপুত বংশোদ্ভূত বলে মনে করেন। তাদের নাম ‘রাবারি’ শব্দটি এসেছে ‘রাহবার’ থেকে, যার অর্থ ‘পথপ্রদর্শক’। এই নামটি তাদের যাযাবর জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ তারা মরুভূমির বিস্তীর্ণ প্রান্তরে পশুদের নিয়ে চলাচল করত। (MAGIK INDIA, ২০২২)। ১২৯৮ খ্রিস্টাব্দের একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা সেই সময় তাদের উপস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে: যখন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি গুজরাটের সিদ্ধপুরের একটি মন্দির থেকে একটি শিবলিঙ্গ দখল করেছিলেন, তখন রাবারিরা যোদ্ধা দল গঠন করে এবং সিরোহির মহারাজার সাথে এটি পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করে, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রদর্শন করে (MAGIK INDIA,২০২২)।
রাবারিরা প্রধানত গুজরাট, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে বসবাস করে। রাজস্থানে তারা কচ্ছ, জয়সলমের, বাড়মের এবং জোধপুরের মতো এলাকায় বেশি দেখা যায়। তাদের জীবনযাত্রা মূলত পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে উট, গরু, ভেড়া এবং ছাগল পালন।রাবরিরা আধা-যাযাবর জীবনযাত্রায় গবাদি পশু পালন সহ দুধ উৎপাদনের মতো কাজকে অগ্রাধিকার দেয়। ভেড়ার পশম এবং ছাগলের দুধ হল রাবারিদের মূল অর্থনৈতিক সম্পদ, যা পুষ্কর উটের মেলার মতো বাজারে বিক্রি হয়। বস্তুত আজও পুষ্কর মেলা বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ।
রাবারিদের জীবনযাত্রা মরুভূমির কঠিন পরিবেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তারা ঐতিহ্যগতভাবে যাযাবর, যারা ঋতু অনুযায়ী পশুদের জন্য চারণভূমি ও জলের সন্ধানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। তবে আধুনিক সময়ে অনেক রাবারি আধা-যাযাবর বা স্থায়ী জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়েছে। তাদের অর্থনীতি পশুপালনের পাশাপাশি দুগ্ধজাত পণ্য, পশম এবং চামড়ার ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল।
রাবারি নারীরা তাদের পরিবারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা শুধু পশুপালনেই সাহায্য করে না, বরং অপূর্ব হস্তশিল্প তৈরি করে। তাদের সূচিকর্ম যেমন কুশন কভার, দেয়াল ঝোলানোর জিনিষ এবং পোশাকের উপর জটিল নকশা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। এই হস্তশিল্প তাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং অতিরিক্ত আয়ের উৎস।


রাবারিদের সংস্কৃতি তাদের রঙিন পোশাক, গান, নৃত্য এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। পুরুষরা সাধারণত ধোতি, কুর্তা এবং রঙিন পাগড়ি পরে, যা মরুভূমির তাপ থেকে তাদের রক্ষা করে। নারীরা লম্বা ঘাঘরা, চোলি এবং ওড়না পরে, যা জটিল সূচিকর্ম ও আয়নার কাজ দিয়ে সজ্জিত। তাদের গহনা, বিশেষ করে রুপোর তৈরি ভারী অলঙ্কার, তাদের সৌন্দর্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রাবারিরা প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং শিব ও পার্বতীর উপাসনা করে। তারা বিভিন্ন ত্যাগী সাধক ও পীরের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তাদের উৎসব, যেমন দিওয়ালি, হোলি এবং নবরাত্রি, গান, নৃত্য এবং সম্প্রদায়ের মিলনের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। রাবারিদের লোকগান মরুভূমির জীবন, প্রেম এবং সংগ্রামের গল্প বয়ে আনে।
আধুনিক চ্যালেঞ্জ
আধুনিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে রাবারি উপজাতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।যান্ত্রিক পরিবহনের কারণে উটের ব্যবহার হ্রাস, রাবারিদের ভেড়া ও ছাগল পালনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, আবার কিছু মজুরি শ্রম বা কৃষিকাজ গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে দক্ষিণ রাজস্থানে (HTO India, ২০১৬)।সেই সাথে সিন্থেটিক টেক্সটাইলের উত্থান তাদের সূচিকর্ম-ভিত্তিক আয়কে হুমকির মুখে ফেলেছে, কারণ ব্যাপকভাবে উৎপাদিত পণ্য হস্তনির্মিত কারুশিল্পের বিক্রি কে কম করে দিয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, মরুকরণ এবং চারণভূমির সংকোচন তাদের পশুপালন-নির্ভর জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সরকারি নীতি এবং বন সংরক্ষণ আইনের কারণে তাদের যাযাবর জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব তাদের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে, অনেক রাবারি তরুণ এখন শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং নতুন পেশায় যোগ দিচ্ছে। সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও তাদের হস্তশিল্প প্রচার এবং বাজারজাতকরণে সহায়তা করছে। এই প্রচেষ্টাগুলো তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করছে।
রাবারি উপজাতি রাজস্থানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত প্রতীক। তাদের স্থিতিস্থাপকতা, শিল্পকুশলতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগ আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। তাদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। রাবারিদের গল্প শুধু একটি উপজাতির নয়, বরং এটি মানুষের অদম্য চেতনার গল্প, যা মরুভূমির বুকে ফুল ফোটায়।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন